
শফিকুল ইসলাম বেবু
কুড়িগ্রাম, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন থেকে নৌকা করে দেড় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদবিধৌত কালির আলগা চরে পৌঁছাতে হয় প্রাথমিকের শিক্ষকদের। এরপর আরও এক ঘণ্টা উঁচু নিচু কাঁচা পথ হেঁটে যেতে হয় বিদ্যালয়ে। পৌঁছাতেই সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। বিকেলের ফিরতি পথে নৌকা মিস করলে যাত্রা অনিশ্চিত। তাই দুপুর ১টার মধ্যেই শিক্ষকরা ক্লাস শেষ করে ফেলেন।
এছাড়া চরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে দৈনিক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। আর শিক্ষকদের এমন ভোগান্তির জীবনযাপনে ব্যাহত হচ্ছে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের স্কুলগুলোর পাঠদান কার্যক্রম।
শুষ্ক মৌসুমে নদী পার হয়ে মাইলের পর মাইল হাঁটা এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বর্ষা মৌসুমে উত্তাল নদী পাড়ি দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছানোর পর শিক্ষকরা মানসিক বিপর্যয়ে থাকেন। এতে ব্যাহত হয় শিক্ষাদান কার্যক্রম।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীতে রয়েছে ৪৬৯টি ছোট-বড় চর। জেলার ১ হাজার ২৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬৯টি স্কুল অবস্থিত চরে। সেখানে কর্মরত রয়েছেন হাজারের বেশি শিক্ষক।
শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্মস্থলে যাতায়াতে শিক্ষকদের বেতনের সিংহভাগ খরচ হয়। বিশেষ করে নারী শিক্ষকদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি।
ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে ভাড়া করা শিক্ষক দিয়ে সন্তানদের পড়ালেখা চালান। এতে অতিরিক্ত খরচের পাশাপাশি পাঠদানের মানও খারাপ হচ্ছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কালির আলগা চরের ইউপি সদস্য হোসেন আলী বলেন, চরে নামকাওয়াস্তে লেখাপড়া হয়। অভিভাবকেরা সন্তানদের মাঠের কাজে লাগায়, কারণ স্কুলে নিয়মিত শিক্ষক পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ-এর কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক হোসাইন আহমেদ হিজল বলেন, নদী পাড়ি দিয়ে তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে পৌঁছাতে হয়। অনেক সময় ঝড়-বৃষ্টি বা নদীর স্রোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। তবুও দায়িত্ব থেকে পিছু হটি না কেউ।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ মনে করেন, চরাঞ্চলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ও আবাসনের ব্যবস্থা জরুরি।
চর উন্নয়ন কমিটি, কুড়িগ্রাম জেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, চরের উন্নয়নে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চরাঞ্চলের জন্য আলাদা ‘চর বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করলে এসব সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় চৌধুরী বলেন, চরের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে আমরা সর্বদা সচেষ্ট আছি। শিক্ষক নিয়োগ ও যাতায়াত সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে আলোচনা চলছে।