বাসস
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৫:৩২

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৪ বছরের খরা কাটানোর মিশনে নিউজিল্যান্ড

ওয়েলিংটন, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ (বাসস) : ৩৪ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের নজির নেই নিউজিল্যান্ডের। সিরিজ জিততে না পারার বন্ধ্যাত্ব ঘোচানোর মিশন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুই ম্যাচের টেস্ট শুরু করবে নিউজিল্যান্ড। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি ওয়েলিংটনে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় শুরু হবে তাসমান সাগর পাড়ের দুই দেশ নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ‘ট্রান্স-তাসমান’ ক্রিকেট যুদ্ধ।
১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। এরপর অসিদের বিপক্ষে কখনও টেস্ট সিরিজ জয়ের উল্লাসে মাততে পারেনি কিউইরা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ জয়ের রেকর্ডও ধুলাবালিতে ঢেকে গেছে। ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ জিতেছিলো নিউজিল্যান্ড। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনবার টেস্ট সিরিজ জিতে কিউইরা। 
এবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিততে না পারার খরা কাটাতে মরিয়া নিউজিল্যান্ড। দলের অধিনায়ক টিম সাউদি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমাদের পারফরমেন্স সুখকর নয়। মাত্র ৮টি টেস্ট জিতেছি আমরা। এছাড়া ১৯৯০ সালের পর কখনও সিরিজও জিততে পারিনি। এবার আমাদের সামনে সিরিজ জয়ের ভালো সুযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি। এ মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মত টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছি। ঐ সিরিজ আমাদের বাড়তি আত্মবিশ^াস দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
সদ্য ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সারির দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জিতেছে নিউজিল্যান্ড। ঐ সিরিজে ৪ ইনিংসে ৩টি সেঞ্চুরিতে সর্বোচ্চ ৪০৩ রান করে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন কিউইদের সেরা ব্যাটার কেন উইলিয়ামসন। সর্বশেষ ৯ ম্যাচে ৭টি সেঞ্চুরিতে দারুন ছন্দে আছেন এই ডান-হাতি ব্যাটার।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের জন্য ইনজুরি কাটিয়ে নিউজিল্যান্ড দলে ফিরেছেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার ড্যারিল মিচেল। পিঠের ইনজুরির কারনে এক বছরের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে যাওয়া পেসার কাইল জেমিসনের পরিবর্তে দলে নেওয়া হয়েছে পেসার স্কট কুগেলিজেনকে।
দলে থাকলেও একাদশে রাখা হবে না জানার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের আগ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষনা দিয়েছেন বাঁ-হাতি অভিজ্ঞ পেসার নিল ওয়াগনার। ২০১২ সালে অভিষেকের পর নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৬৪ ম্যাচে ২৬০ উইকেট নিয়েছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে শুধুমাত্র দ্বিতীয় ম্যাচে অংশ নেওয়া ওয়াগনার ৭৪ রানে ২ উইকেট নেন।  
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড সিরিজ জিতলেও নিজেদের সর্বশেষ সিরিজে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১-১ সমতায় শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। তার আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজ সিরিজ ২-২ এবং পাকিস্তানকে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে অসিরা। তবে ৩৪ বছর ধরে নিউজিল্যান্ডের কাছে সিরিজ না হারার রেকর্ড ধরে রাখার ব্যাপারে আশাবাদী অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে জিততে না পারলেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাফল্য পাবার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমাদের রেকর্ড বেশ ভালো। এমন রেকর্ডই আমাদের সাহস দিচ্ছে। নিজেদের কন্ডিশনে নিউজিল্যান্ড শক্তিশালী দল। সিরিজ জিততে হলে আমাদের সেরা ক্রিকেটই খেলতে হবে।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শেষে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। তার জায়গায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওপেনার হিসেবে নামেন অভিজ্ঞ স্টিভেন স্মিথ। প্রথম টেস্টে ১২ ও অপরাজিত ১১ রানের পর দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ রানে আউট হন স্মিথ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯১ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেও অস্ট্রেলিয়াকে হারের মুখ থেকে রক্ষা করতে পারেননি তিনি। নিউজিল্যান্ড সিরিজে নিজেকে প্রমানের আবারও সুযোগ পাচ্ছেন স্মিথ। 
এখন পর্যন্ত ৬০বার টেস্টে মুখোমুুখি হয়েছে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। এরমধ্যে ৮টিতে কিউইরা এবং ৩৪টিতে জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ১৮টি টেস্ট ড্র হয়।
এই সিরিজটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রের অর্ন্তভুক্ত। ৪ ম্যাচে ৭৫ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে নিউজিল্যান্ড। ১০ ম্যাচে ৫৫ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থানে আছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। টেস্ট লড়াইয়ের আগে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছে অসিরা। 
নিউজিল্যান্ড : টিম সাউদি (অধিনায়ক), টম ব্লান্ডেল, ম্যাট হেনরি, স্কট কুগেলিজেন, টম লাথাম, ড্যারিল মিচেল, উইল ও’রুর্ক, গ্লেন ফিলিপস, রাচিন রবীন্দ্র, মিচেল স্যান্টনার, কেন উইলিয়ামসন ও উইল ইয়ং।
অস্ট্রেলিয়া : প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), স্কট বোল্যান্ড, অ্যালেক্স ক্যারি, ক্যামেরন গ্রিন, জশ হ্যাজলউড, ট্রাভিস হেড, উসমান খাজা, মার্নাস লাবুশেন, নাথান লিঁও, মিচেল মার্শ, মাইকেল নেসার, ম্যাথু রেনশ, স্টিভ স্মিথ ও মিচেল স্টার্ক।