বাসস
  ৩০ মে ২০২৪, ১৫:৩০

গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফারকে মাতিয়ে তুলতে পারে রিয়াল মাদ্রিদ

মাদ্রিদ, ৩০ মে ২০২৪ (বাসস) : আগামী ১ জুন ওয়েম্বলিতে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে সর্বশেষ ম্যাচে খেলতে দেখা যাবে টনি ক্রসুকে। এবারের গ্রীষ্মে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের পর সব ধরনের ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষনা দিয়েছেন জার্মান এই তারকা মিডফিল্ডার। 
তার সাথে বার্নাব্যুর চুক্তির মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই মনে করেছিল আরো কিছুদিন হয়তো তিনি রিয়ালের সাথে থাকবেন। বিশেষ করে লা লিগার শিরোপা জয়ে মাদ্রিদের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পর এই ধারনা আরো দৃঢ় হয়। কিন্তু ক্রুসকে ছাড়াই রিয়াল মাদ্রিদকে এখন এগিয়ে যেতে হবে।
ক্রুসের সাথে মধ্যমাঠে ১০ বছর পাশাপাশি বাটানো লুকা মড্রিচের উপর এই বিদায় কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে এখন থেকেই চিন্তিত লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। এই দুই অভিজ্ঞ তারকা একসাথে চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, চারটি লা লিগা ও একটি কোপা ডেল রে শিরোপা জয় করেছে। পঞ্চম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন দুজনই। 
মাত্র তিন শব্দে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রুসকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মড্রিচ, ‘ঐটা মজা ছিল।’
এসময় দুজনের একটি ছবিও তিনি পোস্ট করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে প্রিয় দুই সতীর্থ একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছেন। 
এই তিন শব্দে হয়তো তিনি ক্রুসতে সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন, অথবা স্বীকার করে নিয়েছেন তার সাথে সুন্দর সময়গুলো শেষ হয়ে গেল। মড্রিচের সাথেও রিয়ালের চুক্তির মেয়াদ ঐ একই দিন শেষ হচ্ছে। ক্রোয়েট এই তারকাও গত কয়েকদিন এনিয়ে ক্লাব কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছেন। 
মাদ্রিদ অধ্যায়ের অবসারের সাথে সাথে ক্রুস ফুটবল থেকে বিদায়ে ঘোষনা দিলেও মড্রিচ প্রায়ই বলেছেন চুক্তি নবায়ন না হলে তিনি অন্যত্র চলে যাবেন। রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ অবশ্য সবসময়ই তার পুরনো খেলোয়াড়দের উপর আস্থা রাখার চেষ্টা করেছেন। সেপ্টেম্বরে মড্রিচ ৩৯ বছরে পা রাখবেন। এ মৌসুমেই তার খেলার সময় অনেকটাই কমে গেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নক আউট পর্বের কোন ম্যাচেই তিনি মূল দলে খেলেননি। 
ক্রুসের বিদায় ও মড্রিচের অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে সামনে রেখে মাদ্রিদের একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হতে যাচ্ছে। আরেক তারকা নাচো মাত্র ১১ বছর বয়সে এই ক্লাবে যোগ দেবার পর এখন প্রায় বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। 
কোচ কার্লো আনচেলত্তি স্বাভাবিক ভাবেই একসাথে দলের তিন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে ছাড়তে চাননি। বিশেষ করে ক্রুসকে অন্তত আরো এক বছর তিনি দলে রাখতে চেয়েছিলেন। ক্রুসের বিদায়ে সমর্থকরা নি:সন্দেহে চোখের পানি ফেলেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো নিজেকে সড়িয়ে নেবার এটাই সঠিক সময়। আরো একটি লা লিগা শিরোপা ও হয়তো আরো একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ের পর এমন বিদায় ভাগ্যবানদের কপালেই জুটে। তিনজন খেলোয়াড়ই ফর্মের তুঙ্গে থেকেই বিদায় নিচ্ছেন, এটাও দারুন সৌভাগ্যের। পার্থক্যটা এখানেই, কারন লিজেন্ডরা যখনই যাক না কেন, বিদায়ের সময় মনে হবে আরো এক বছর কেন থাকলেন না। 
এদের বিদায়ে ক্লাবের আর্থিক দিকটিও একটি প্রভাব ফেলবে। ক্রুস ও মড্রিচ এই মুহূর্তে ক্লাবের সর্বোচ্চ আয়ের খেলোয়াড়্। তারা দুজনের মিলে বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার একে অপরের মধ্যে ভাগ করে নেন। বেতন, বোনাস ও কমিশনের দিক থেকে অন্যান্যদের থেকে তারা অনেকটাই এগিয়ে। এবারের গ্রীষ্মে ফ্রি-এজেন্ট হিসেবে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে পিএসজি থেকে উড়িয়ে আনারও একটি বিষয় অপেক্ষা করছে। 
যদিও ২০০৩ সালের পর থেকে (এমনকি কোভিডের সময়ও) আর্থিক দিক থেকে রিয়াল মাদ্রিদ সবসময়ই সমৃদ্ধ একটি ক্লাব হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে এসেছে। প্রতি বছরই তাদের লভ্যাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারনে বড় খেলোয়াড়দের দলে ভেড়াতে তাদের খুব বেশী চিন্তা করতে হয়নি। যদিও এবারের গ্রীষ্মটা অনান্য বারের তুলনায় একটু হলেও ব্যয়বহুল হবে। এটা শুধুমাত্র এমবাপ্পের জন্য নয় মাদ্রিদ ফুলব্যাক ফারলান্ড মেন্ডিকে অথবা একইসাথে ডানি কারভাহাল ও লুকাস ভাসকুয়েজকে ছেড়ে দিতে চাচ্ছে। 
নাচো চলে গেলে মাদ্রিদের সেন্টারব্যাক পজিশনে থাকবেন ৩১ বছর বয়সী এন্টোনিও রুডিগার, ৩২ বছর বয়সী ডেভিড আলাবা ও এডার মিলিটাও। সম্প্রতি এসিএল ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছে মিলিটাও। এর অর্থ হচ্ছে আরো একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার দলে প্রয়োজন। যে কিনা রাইট-ব্যাক পজিশনেও খেলতে পারবে। 
মধ্যমাঠে ক্রুস ও মড্রিচ চলে গেলে অভিজ্ঞতার অভাব হলেও অপেক্ষাকৃত তরুণরা সব ফর্মে রয়েছে। জুড বেলিংহাম (২০), এডুয়ার্ডো কামভিনগা (২১), অরেলিয়েন টিচুয়ামেনি (২৪), ফেডে ভালভার্দে (২৫), ডানি সেবালোস (২৭) নিজেদের প্রতিদিনই প্রমান করে চলেছেন।
তবে আনচেলত্তির ৪-২-২ ফর্মেশনে পাঁচজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার যথেষ্ঠ নয়। বিশেষ করে এখান থেকে কাউকে কাউকে পজিশন পরিবর্তন করতে হয়। কামভিনগাকে লেফট ব্যাক, টিচুয়ামেনিকে সেন্টার ব্যাক ও ভালভার্দেকে রাইট উইংয়ে খেলানো হয়েছে। এ কারনেই দলে অন্য কোন খেলোয়াড় মিডফিল্ডার আনার প্রয়োজন রয়েছে।  
সব মিলিয়ে গ্রীষ্মে রিয়াল মাদ্রিদ ট্রান্সফার মার্কেটে বড় ভূমিকা রাখার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ২০১৯ সালে এডেন হ্যাজার্ড, লুকা জোভিচ, মেন্ডি, মিলিটাও ও রডিগোকে নেবার পর হয়তো সবচেয়ে বড় ট্রান্সফার এবারই করতে যাচ্ছে মাদ্রিদ।