বাসস
  ৩১ মে ২০২৪, ১৪:৫৯

রাঙ্গাটুঙ্গীর সেই দরিদ্র মেয়েটি যখন রাঙিয়ে দিলো দেশ

ঢাকা, ৩১ মে, ২০২৪ (বাসস): যারা খেলাধূলার খবরা-খবর রাখেন তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে- চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের নাটকীয় ফাইনাল শেষে বাংলাদেশ ও ভারত যুগ্ম-চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
ওখানে দুর্দান্ত ফুটবল খেলছেন বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের জন্ম নেওয়া মেয়ে সাগরিকা। যিনি নেপাল ও ভারতের বিপক্ষে জয়ের মূল কারিগর হিসেবে সবাইকে চমক দেখিয়েছেন।তাইতো অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটিও পেলেন সাগরিকা।সাগরিকা এখন দেশের নারী ফুটবলে আলোচিত মুখ। রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের সেই দরিদ্র মেয়েটি তখন রাঙিয়ে দিলো দেশ।
রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা লিটন আলী মেয়ে সাগরিকা। তার বাবা পেশায় একজন স্থানীয় চায়ের দোকানি। দুই সন্তানের মধ্যে সাগরিকা ছোট। আর ছেলে মোহাম্মদ সাগর একটি ইটভাটায় কাজ করেন।
মেয়ে হয়েও ফুটবল খেলার জন্য একসময় নানা কটুক্তির শিকার হওয়া সাগরিকাকে নিয়ে এখন গর্ব করে এলাকাবাসী। মেয়ের ফুটবল খেলা নিয়ে গ্রামবাসীর কটুক্তিতে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন লিটন আলী ও আনজু বেগম দম্পতি। একসময় মেয়ে সাগরিকাকে মাঠে যেতে বারণও করেন গ্রামবাসী। কিন্তু মেয়ের জেদ ও স্থানীয় ক্রীড়াসংগঠকদের অনুরোধকেই গুরুত্ব দেন। এখন সেই সাগরিকাই দেশবাসীর গর্ব।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরের রানীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রাম। রানীশংকৈল-হরিপুর সড়কের বলিদ্বারা এলাকায় চায়ের দোকান চালিয়ে সংসার চালান লিটন আলী। তার দুই সন্তানের মধ্যে সাগরিকা ছোট। সম্প্রতি গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, সাগরিকাদের ঘরের দরজা বন্ধ। প্রতিবেশীরা জানালেন, সাগরিকার বাবা-মা মেয়ের খেলা দেখতে ঢাকায় গেছেন। সাগরিকার ভাই বাড়িতেই আছেন তবে কাজে বাইরে গেছেন।
লিটন আলীর চায়ের দোকানে এসেও তাই তা বন্ধ পাওয়া গেলো। দোকানের পাশে রয়েছে মকবুল হোসেনের ডিজিটাল স্কেলে ওজন পরিমাপের ঘর। লিটন আলীর দোকানের জায়গাটিও মকবুলের। আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় লিটনকে তিনি এখানে চায়ের দোকান চালাতে দিয়েছেন। মকবুল হোসেন বলেন, ‘টেলিভিশনে বাংলাদেশের হয়ে লিটনের মেয়ের খেলা দেখে আমার মনে হয়েছে, তাকে জায়গা দিয়ে আমি ঠিক কাজটিই করেছি। সাগরিকা আমাদের গর্ব।’
একসময় মেয়েকে খেলতে দিতে না চাওয়া লিটন আলী ও আনজু এখন মেয়ের জন্য গর্ব করেন। লিটন আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘মেয়ের জন্য আজ কত সম্মান পেলাম। মেয়ের জন্য এখন আমাদেরঅনেক গর্ব হয়। মেয়ের খেলা বন্ধ করতে গিয়ে আমি যে কতটা ভুল করতে গিয়েছিলাম, এখন তা বুঝতে পেরেছি।’