শিরোনাম
প্রতিবেদন : সৈয়দ এলতেফাত হোসাইন
ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : আমার স্নেহপ্রবণ বাবা জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আমাদের অনুরোধ না শুনেই কাজটি করেন এবং শেষ পর্যন্ত শহিদ হন।
শহিদ হাবিবের বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনে তার বাবার সাহসী ভূমিকা উল্লেখ করতে গিয়ে বাসসকে এ কথা বলেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যখন সরকার সকল স্তরের মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ওপর নির্মম দমন-পীড়ন শুরু করে তখন তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে মোঃ হাবিব (৪৫) শাহাদাত বরণ করেন।
তিনি শহিদ হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু চরম বাস্তবতা হল ছয় সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হাবিবের মৃত্যু তার পরিবারকে চরম আর্থিক সংকটে ফেলে দিয়েছে।
পেশায় প্রাইভেটকার চালক হাবিব রাস্তায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দুর্দশা উপেক্ষা করতে পারেননি। তিনি শনির আখড়া এলাকায় আন্দোলনকারীদের জন্য খিচুড়ি রান্না করতেন।
গত ২০ জুলাই সময় এ কাজ করতে গিয়ে হাবিব পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
হাবিবের বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার (২০) তার বাবার উদারতা সম্পর্কে বলেন, ‘আমার বাবা রাস্তায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি পিতৃস্নেহ অনুভব করেছিলেন। এ কারণে তিনি আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে তাদের খাওয়ানোর জন্য রাস্তায় চলে যেতেন।’
সেদিন সকালে ফাতেমা তার বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অনুরোধ করেছিলেন, ‘বাবা, দয়া করে বাইরে যাবে না। রাস্তাঘাটে অনেক ঝামেলা। তুমি ছাড়া আমাদের কেউ নেই। তোমার কিছু হলে আমরা বাঁচব কী করে?’
ফাতেমা অশ্রুরূদ্ধ কন্ঠে বলেন, ‘আমি জানি না কেন সেদিন সকালে আমি আমার বাবার প্রতি বিশেষ মমতা ও ভালোবাসা অনুভব করছিলাম।’
কন্যার অনুরোধ উপেক্ষা করে সেদিন হাবিব বলেছিলেন, ‘তোমার বাবা কাউকে ভয় পান না। আমার কিছু হলে সেটা হবে দেশের জন্য। তবুও ছাত্রদের ওপর অত্যাচার আর সহ্য করা যায় না।’
বাবার স্মৃতিচারণ করতে করতে আবেগাপ্লুত ফাতেমা বলেন, ‘তখন আমি ক্ষুণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি আমার বাবার কাছ থেকে শোনা এটিই হবে শেষ কথা।’
সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ির দনিয়ার পাটেরবাগ এলাকায় তাদের ভাড়া বাসায় বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফাতেমা তার বাবার সাথে শেষ মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানের কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থার সময়ে গাড়ি চালাতে না পেরে বাবা নিয়মিত আন্দোলনে যেতেন। এ আন্দোলনের ফলেই ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটে।
শহিদ হাবিবের ছোট ভাই মোঃ নুরুদ্দিন (৩৫) হাবিবের মৃত্যুর পর থেকে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সাথে বসবাস করছেন। তিনি তার ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর কথা স্মরণ করে বলেন, সেই দুর্ভাগ্যজনক দিনে হাবিব বিক্ষোভকারীদের খাওয়ানোর জন্য অন্যদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে খিচুড়ি রান্না করেছিলেন। এমনকি তিনি বড় তিন হাড়ি খিচুড়ি রান্না করার জন্য নিজে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করেছিলেন। তার চারপাশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও তিনি আন্দোলনকারীদের সাহায্য করার দিকেই বেশি মনোযোগী ছিলেন।
নুরুদ্দিন জানান, বেলা প্রায় ২.৩০ টার দিকে খিচুড়ি রান্নার একেবারে শেষের দিকে পুলিশ দুটো পাতিল লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। সে সময় তিনি দৌড়ে এসে তৃতীয় পাতিলটি রক্ষা করার চেষ্টা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তখন পুলিশ হাবিবকে খিচুড়ির পাতিল ধরা অবস্থায় গুলি করে। গুলিটি তার পেটের ডান পাশে বিদ্ধ হয়ে পেঠের ভিতর আটকে যায়।
হাবিব গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকায় তিনি অনেকটা সময় রাস্তার উপরই পড়ে থাকেন। কারণ পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি উপেক্ষা করে কেউ আহতদের উদ্ধার করতে সাহস পাচ্ছিলো না।
অবশেষে দুই পথচারী সাহস সঞ্চয় করে তাকে উদ্ধার করে শনির আখড়ার পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু গুলিতে আহতদের চিকিৎসা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ ছিল। এ কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার মূহুর্তটির স্মৃতিচারণ করে নুরুদ্দিন বলেন, ‘দুপুর ২.৪৫ টার দিকে একজন পথচারী আমাকে ফোন করে জানায় যে আমার ভাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
হাবিবের মেয়ে বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা পরে আমাদের বলেছে যে আমার বাবা, এমনকি তার শেষ মুহূর্তেও আমাদের কথা ভেবেছিলেন। তিনি পথচারীদের কাছে আবেদন করেছিলেন, ‘ভাই, দয়া করে আমাকে বাঁচান। আমার তিন মেয়ে ও এক ছেলে আছে। আমি মারা গেলে আমার পরিবারের কি হবে?’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতি আমার বাবার ভালোবাসা ছিল সীমাহীন। তিনি বাঁচতে চেয়েছিলেন, নিজের জন্য নয়, আমাদের জন্য। তিনি একজন সাহসী মানুষ ছিলেন যিনি তার গুরুতর আঘাত সত্ত্বেও তার নিজের মোবাইল ফোন থেকে আমাদের কল করার চেষ্টা করেছিলেন।’
কিন্তু ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় হাবিব তার পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল থাকায় ফাতেমারা সময়মত তাদের বাবার খবরও জানতে পারেননি। ফাতেমা তার বাবার মৃত্যুর জন্য তৎকালীন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে দায়ী করেন।
ফাতেমা দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে বলে, ‘আমরা আমার চাচার কাছ থেকেই আমার বাবার আহত হওয়ার কথা জানতে পারি। তিনি আমাদের জানান যে আমার বাবাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাথে সাথে আমার ভাই এবং আমি হাসপাতালে ছুটে যাই এবং আমার বাবাকে ৩ নং রুমে দেখতে পাই।
বাবার মৃত্যু সংবাদ শোনার মুহূর্তের কথা স্মরণ করে ফাতেমা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘বাবাকে দেখে প্রথমে আমি ভেবেছিলাম তিনি ঘুমিয়ে আছেন। তখন আমি চিৎকার করে বলছিলাম কেন আমার বাবাকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। সেই সময় একজন ডাক্তার আমাকে বকাঝকা করলেন। আর একজন নীরবে ইঙ্গিত দিলেন যে আমার বাবা মারা গেছেন। সেই মূহুর্তে যেন আমার মাথার ওপর পৃথিবী ভেঙ্গে পড়ল।’
ঢামেক কর্তৃপক্ষের প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, উদ্ধারকারীরা যখন হাবিবকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয়ে বড় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়, সেখানেও তাকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।
হাবিবকে উদ্ধারকারী এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বর্ণনা উল্লেখ করে ফাতেমা বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা আমার বাবার ঘাড়ে দুটি ইনজেকশন দিয়েছিলেন। এর ২০ মিনিটের মধ্যে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
হাবিবের মৃত্যুর পরেও তারা অবিচারের মুখোমুখি হয়েছিলেন বলে জানান ফাতেমা। তিনি বলেন, আমার বাবার মৃত্যুতেও আমাদের যন্ত্রণার শেষ হয়নি। দু’দিন ধরে লাশ হাসপাতালের মর্গে পড়েছিলো। গরমে ফুলে পচে গিয়েছিল।
পরিবারের লোকজন লাশ নেওয়ার চেষ্টা করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাদের সহযোগিতা করেনি।
ফাতেমা বলেন, ‘আমার বাবার লাশ উদ্ধারের প্রক্রিয়া ছিল হয়রানি ও ভয়ে ভরা। আমার মা, ভাই এবং এক আত্মীয় হাসপাতাল থেকে লাশ নিতে যাত্রাবাড়ি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ সাহায্য করতে অস্বীকার করে। উপরন্তু তারা আমার পরিবারের সদস্যদের থানা থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় এবং আমার আত্মীয়ের বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে তার দেহ তল্লাশি করে।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের এমন অমানবিক আচরণের কথা স্মরণ করতে গিয়ে ফাতেমার চোখ ক্ষোভে জ্বলে ওঠে।
হাবিবের ভাই নুরুদ্দিন জানান, পরে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সহায়তায় তারা থানায় একটি জিডি করেন এবং ২২ জুলাই রাত ১১.৩০টার দিকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে লাশ গ্রহণ করেন। তা সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের হুমকি দেয় এই বলে যে, বেশী কথা বললে লাশ পেতে আরও বিলম্ব হবে। এমনকি লাশটি গুম হয়ে যেতে পারে। ।
লাশ পচে যাওয়ায় তারা তাদের পৈতৃক বাড়ি ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলায় নিতে পারেননি। পরে হাবিবকে নগরীর জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের নিপীড়নের ভয়ে হাবিবের পরিবার তার মৃত্যুর আসল কারণও প্রকাশ করতে পারেনি।
সে কথা উল্লেখ করে ফাতেমা বলেন, ‘আমার বাবার মৃত্যুর পর, আমরা বলতে পারিনি যে আমার বাবা বিক্ষোভকারীদের জন্য খাবার তৈরি করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। কারণ সে সময় শেখ হাসিনার সমর্থকরা আন্দোলনে নিহত বা আহতদের পরিবারকে হয়রানি করছিল।’
হাবিবের মৃত্যুতে তার স্ত্রী আয়েশা খাতুন (৩৫) তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে দু:শ্চিন্তা ও হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। বড় মেয়ে ফাতেমা এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
হাবিবা ইসলাম কুলসুম (৬) শিশু শ্রেণীতে অধ্যায়নরত। দেড় বছর বয়সী হুমায়রা ইসলাম আয়াত এবং একমাত্র ছেলে মোঃ রিয়াদ (১৭), হাফিজ-ই-কুরআন।
দুঃখ ভারাক্রান্ত গলায় ফাতেমা বলেন, ‘আমার বাবাই ছিলেন আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর কষ্টার্জিত আয় দিয়ে আমাদের ছয় সদস্যের পরিবার চালাতেন।
দুর্ভাগ্যবশত, আন্দোলনে আমার বাবার মৃত্যুর পর আমাদের পরিবারে পাঁচজন হয়ে গেল। এখন আমরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে চলেছি।
বাবার মৃত্যুতে হাবিবের কিশোর ছেলে রিয়াদ স্বল্প মজুরিতে কারখানায় চাকরি নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তার সামান্য আয়ে ঘর ভাড়া দিয়ে পাঁচ জন মানুষের খাবার, পড়া-লেখা এবং অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো রীতমতো দুঃসাধ্য।
হাবিবের শোকাহত স্ত্রী আয়েশা হতাশ ও বিষণ্ন কন্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে খুব ছোট এবং আমার দুই মেয়ে এখনও পড়াশোনা করছে। আমাদের নিজেদের ভরণপোষণ বা আমার সন্তানদের জন্য একটি ভালো ভবিষ্যত নিশ্চিত করার উপায় নেই।’
পরিবারের সদস্যদের যাতে কোনো কষ্ট না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য হাবিব অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন উল্লেখ করে আয়েশা বলেন, তার স্বপ্ন ছিলো ছেলে একজন বড় মাওলানা হবে। এজন্য তিনি তার ছেলেকে হাফিজ-ই-কুরআন বানিয়ে ছিলেন। এবং মাওলানা শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করতেন। কিন্তু দেশের জন্য হাবিবের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ফলে সেই স্বপ্ন ভেস্তে গেছে।
যন্ত্রণাবিদ্ধ ও হতাশাগ্রস্ত আয়েশা বলেন, ‘আমার মেয়ে ফ্রিল্যান্সিং এবং টিউশনি করে সংসারের খরচ চালাতে কিছুটা সাহায্য করছে। কিন্তু যখন তার বিয়ে হবে, তখন সে আর সাহায্য করতে পারবে না। সরকার যদি আমার ছেলে ও মেয়ের জন্যে উপযুক্ত চাকরির ব্যাবস্থা করে দেয় তাতে আমরা খেয়ে পরে বাঁচতে পারবো।’
হাবিবের স্ত্রী মেয়ের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে একটি ভালো বিয়ে দেওয়ার এবং তার ছেলের একটি ভালো জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু কারো সাহায্য ছাড়া সেই স্বপ্নগুলি পূরণ হবার নয়।
কাঁদতে কাঁদতে আয়েশা বলেন, ‘স্বামী হারানোর বেদনা আমি কিভাবে সহ্য করব? আমি কতদিন বেঁচে থাকব জানি না। তবে আমি আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’
বিধবা এই নারীর চারটি হতভাগ্য সন্তান এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ছাড়া আর কোন সম্বল নেই। তিনি বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দয়া করে, আমার বাচ্চাদের দেখাশোনা করুন। আমাকে তাদের লালন-পালন করতে সাহায্য করুন। আল্লাহ এবং আপনারা ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই।’
ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েও হাবিবের মেয়ে সরকারের সাহায্য নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন।
এখনও পর্যন্ত সরকারের কেউ তাদের খোঁজ খবর নেয়নি বা কোনো সহায়তা দেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা সাহসিকতা ও নিঃস্বার্থভাবে জীবন দিয়েছিলেন। তবুও মনে হয় তার আত্মত্যাগ কারো চোখে পড়েনি।’
ফাতেমা বলেন, ‘আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমি এই বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পাশাপাশি আমার পরিবারের জন্য একটি উন্নত জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছি। আমার কম্পিউটার দক্ষতা আছে। কিন্তু একটি চাকরি পাওয়া কঠিন। সরকারের পক্ষ থেকে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে আমি আমার পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারকেও চালিয়ে নিতে পারতাম।’
ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সন্তান ফাতেমা জানান, তাদের গ্রামে তার বাবার যে সামান্য আবাদি জমি ছিল, তাও অন্যরা দখল করে নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা সেই জমি পুনরুদ্ধার করতে পারি তবে এটি আমাদের কিছুটা স্বস্তি দেবে। এটি পুনরুদ্ধার করতে এবং আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করার জন্য সরকারের সহায়তা একান্ত প্রয়োজন।’
হাবিবের হত্যার বিচার দাবি করে তার স্ত্রী আয়শা অশ্রুরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামী কোনো অপরাধ করেননি। তিনি দেশের জন্য তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের রাস্তায় না খেয়ে বিক্ষোভ করতে দেখে বলেছিলেন, ‘প্রয়োজন হলে আমি ছাত্রদের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করব।’
তিনি বলেন, ২০ শে জুলাই হাবিব নিজের কথারই বাস্তব প্রতিফলন দেখিয়েছেন। সেদিন তিনি ছাত্রদের প্রয়োজনকে নিজের জীবনের নিরাপত্তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়ে আগুন জ্বালানোর কাঠ সংগ্রহ করেছিলেন এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার রান্না করেছিলেন।
আয়েশা কাঁদতে কাঁদতে দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি শেখ হাসিনার বিচার চাই।’