বাসস
  ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:০৮

বিরাজমান বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এফবিসিসিআই’র মতবিনিময়

ঢাকা, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই বিরাজমান বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, অর্থনীতিবিদ এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে।
মঙ্গলবার সংগঠনের গুলশান কার্যালয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা, ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি, বিলাসী পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংক ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, এলসি খোলাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বিগত কয়েক বছর যাবৎ দেশে অত্যন্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে যা ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস কর্মকান্ডের ফলে দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ছে। একইসাথে তৈরি পোশাক খাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা জাতীয় অর্থনীতিকে শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি দেশের সাপ্লাই চেইনকে ভীষণভাবে বিঘিœত করছে-যার প্রভাব পণ্যের উৎপাদন, বাজার মূল্য এবং রপ্তানি ও সেবা খাতের উপরও পড়ছে। 
এফবিসিসিআই সভাপতি জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে সব ধরণের সহিংস কর্মকান্ড পরিহারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ।
মাহবুবুল আলম বলেন, তৈরী পোশাক খাতে শ্রমিক ও কর্মচারীদের চাহিদা অনুযায়ী মজুরী কমিশন গঠন এবং শ্রমিক-মালিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে মজুরী পুন:নির্ধারণ করা হয়েছে - যা অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ। তা সত্ত্বেও তৈরি পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। প্রকৃত শ্রমিকরা কোনভাবেই ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি ডলার সংকট সমাধান ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কার্যকরী ভূমিকা পালন এবং শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানী সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক কর্মকা-ের বিরুদ্ধে সারাদেশের সকল চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসায়ী সংহতি সমাবেশ আয়োজনের জন্য এফবিসিসিআইকে পরামর্শ দেন।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম অর্থনীতির এই সংকটের মূহুর্তে রাজনৈতিক সহিংস কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় আরও জোরদার করতে এফবিসিসিআইকে কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়াও বিদ্যমান সহিংস কর্মসূচীর বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য এফবিসিসিআই’র প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সভায় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ডলারের উপর চাপ কমাতে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আরও সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে আগামী ৬ মাস থেকে এক বছর সময়ে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানির হার আরও কমিয়ে আনতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কাট-ছাটের কোন বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সম্প্রতি তৈরি পোশাক খাতে সৃষ্ট সহিংস ঘটনায় বহিরাগতরা জড়িত উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, প্রকৃত শ্রমিকরা কখনো নিজ কারখানায় আগুন দিতে পারে না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে সাবেক মূখ্য সচিব ও এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টা মো. আব্দুল করিম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ও প্যানেল উপদেষ্টা খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টা ড. মাসরুর রিয়াজ, আব্দুল মুক্তাদির, সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি মো. আমিন হেলালী, সহসভাপতি খায়রুল হুদা চপল, শমী কায়সার, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, বিকেএমইএর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ,বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, নাসিব সভাপতি মির্জা নুরুল গণি শোভন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।