বাসস
  ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:২৮

নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে বৈষম্য দূর করা সম্ভব: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা। ছবি : ভিডিও থেকে

ঢাকা, ১৮ জানুয়ারী, ২০২৫ (বাসস) : বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, দেশে ব্যাপক বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছিল বলেই গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে চরম আন্দোলন হয়েছে। নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমেই  বৈষম্য দূর করা সম্ভব।

আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁও বিআইসিসিতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ২০২৪-এর সিম্পোজিয়াম, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও জাতীয় বাজেট নিয়ে মতবিনিময় সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতাকালে বাণিজ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে অভ্যুত্থানের সময়  অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছেন। বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের উচিত  তাদের আত্মদান যাতে বৃথা না যায়  সে লক্ষ্যে  উত্তরসূরিদের জন্য নৈতিক দিকনির্দেশনা তৈরি করা। আশা করি আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পাব।’

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সভাপতি এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’র (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. কাজী ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষণা ও নীতি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট’র (র‌্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট’র (বিল্ড) সিইও ফেরদৌস আরা বেগম পৃথক পৃথক পাওয়ার-পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন।

এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এনবিআর’র প্রাক্তন সদস্য এবং এনবিআর সংস্কার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের সিনিয়র অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ওয়াইস প্যারে, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম মাসরুর রিয়াজ, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)’র সভাপতি জাভেদ আখতার, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মনজুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. সায়মা হক বিদিশা এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

‘পরিবর্তনই সুযোগের সহজ বহিঃপ্রকাশ’ উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, সরকারের নীতি, সম্পদ ও অগ্রাধিকারের ওপর নির্ভর করে একটি সুস্পষ্ট প্রকাশ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) অধীনে ফ্যামিলি কার্ড ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে জানা গেছে দেশে প্রায় ৩৭ লাখ ভুয়া ফ্যামিলি কার্ডধারী রয়েছে।

বশির টিসিবির আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে ভর্তুকি মূল্যে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করে।

গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর বিপুল মুনাফার প্রবণতা দেখা গেছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশে ‘বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি নেই বা ব্যবসায়িক আস্থার অভাব’ এমন সমালোচনার সঙ্গে এ ধরনের মুনাফার প্রবণতা মেলে না। সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, তথ্যের ব্যাপক সমন্বয়েরও প্রয়োজন।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, সময় অর্থনৈতিকভাবে মূল্যবান, কিন্তু পূর্ববর্তী সরকারের গত ১৫ বছরে দেশে তা কোনোভাবে হারিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, অতীতের মতো নয়, অন্তর্র্বর্তী সরকার এখন বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস, বিদ্যুৎ, জলের সুবিধা, রাস্তাঘাট এবং অন্যান্য অবকাঠামো নিশ্চিত করে ১০০টির পরিবর্তে পাঁচটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দেবে।

আশিক বলেন, বর্তমান সরকার সমস্ত সুযোগ-সুবিধা এবং পরিষেবাগুলো একটি ছাতার নিচে বা একক বিন্দুতে একত্রিত করার চেষ্টা করছে, ‘আমরা যতটা সম্ভব প্রক্রিয়াটি দ্রুত করার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দিন শেষে আমাদের একটি স্থিতিশীল, যোগ্য ও সৎ সরকার দরকার। আমাদের চাপ দিতে থাকুন যাতে আমরা তৎপরতার সঙ্গে কিছু করতে পারি।’

ড. দেবপ্রিয় তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মতো ততটা মনোযোগ পাচ্ছে না।

তিনি উল্লেখ করেন যে কৃষকদের সাফল্যের জন্য দেশে রেকর্ড পরিমাণ আমন ফসল হয়েছে।

বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) জন্য নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধির প্রবণতা, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এগিয়ে যাওয়ার পথ নীতিমালা, রাজনীতি ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করবে।

তিনি পরামর্শ দেন যে আগামী অর্থবছরের বাজেটের ব্যয় ৮ লাখ ১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।

সৈয়দ নাসিম মনজুর ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা, সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক জায়গায় বসানো এবং ব্যবসা করার ব্যয়ের দিকে আরও নজর দেওয়া, তৈরি পোশাকের মতো অন্যান্য খাতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, যারা কর দেয় তাদের ওপর কর আরোপ বন্ধ করা, সবার কথা শোনা এবং ব্যবসায়ীদের জীবন সহজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

এফআইসিসিআই সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, সরকারকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরও অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ করতে হবে, তবে এটি করার অনেক উপায় রয়েছে। ‘সমন্বিত প্রচেষ্টা থাকলে করের আওতা বাড়াতে হবে।’

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, পরবর্তী বাজেট প্রণয়নের আগে সরকারের উচিত অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা।

তিনি আরও বলেন যে, অন্তর্র্বর্তী সরকারকে পণ্যের উচ্চমূল্য থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বাজার পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, গোয়েন্দা তথ্য ও বিবিধ পদক্ষেপ আরও শক্তিশালী করতে হবে।

অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা আগামী বাজেটে যুবদের কর্মসংস্থান, নারীদের কর্মসংস্থান ও শ্রম অভিবাসন এই তিনটি বিষয়ের উপর একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ এবং নির্দেশনা দেওয়ার উপর জোর দেন।