ঢাকা, ১৫ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর শুল্কের কারণে ব্রাজিলের মৎস শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পানির পাম্প চালু হতেই ব্রাজিলের এক মাছের খামারের পুকুরে শত শত তেলাপিয়া ভেসে ওঠে। ট্রাম্পের কঠোর শুল্কের কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দেশটির মৎস শিল্প।
ব্রাজিলের রিফাইনা থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।
মাছ হচ্ছে ব্রাজিলের অন্যতম রপ্তানি পণ্য। মাছের ওপর গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। এটি মৎস শিল্পের জন্য বড় আঘাত। কারণ দেশটির ৬০ শতাংশ মাছই রপ্তানি হয় আমেরিকায়।
ব্রাজিলের তেলাপিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক সংস্থা ফিডার পেসকাডোস, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সাও পাওলোতে রিও গ্রান্ডে নদীর তীরে ৪শ’ টি মাছের পুকুর পরিচালনা করে, যা দেশটির সবচেয়ে জনবহুল ও ধনী।
সেখানে উৎপাদিত তেলাপিয়া ৪ হাজার বাসিন্দার একটি ছোট শহর রিফাইনা’র একটি কোম্পানির কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
নতুন শুল্কের আগে কোম্পানির বার্ষিক উৎপাদন ৯ হাজার ৬শ’ টনের ৪০ শতাংশই তেলাপিয়া যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হতো। এখন এই রপ্তানি ইতোমধ্যেই এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।
কোম্পানির পরিচালক জুলিয়ানো কুবিৎসা এএফপিকে বলেন, এটা মুরগি উৎপাদনের মতো নয়—ওখানে মাত্র ৪০ দিন লাগে, আর প্রয়োজনে সহজেই সময়সূচী বদলানো যায়। ডিম ফুটে মাছ বের হওয়ার পর, খামারে উৎপাদিত তেলাপিয়া সুপারমার্কেটের তাক পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় আট মাস সময় লাগে।
তিনি বলেন, মাছের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা চলন্ত ট্রেনের মতো, আপনি হঠাৎ থামাতে পারবেন না। তাই তিনি এখন মরিয়া হয়ে নতুন বাজার খুঁজছেন, কিন্তু জানেন কাজটি কঠিন হবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মতো এত তেলাপিয়া আর কোনো দেশ খায় না।
‘মারাত্মক ধাক্কা’
ফিদার পেস্কাদোসের মাছের পুকুর বিভাগের ৪৩ বছর বয়সী টিম লিডার সার্জিও সেক্কো জানেন, তার চাকরি হারানোর ঝুঁকি প্রবল।
তিনি বলেন, আমি তরুণ কর্মীদের বলেছি, শুল্ক হবে এক মারাত্মক ধাক্কা। চাই বা না চাই, এটা উৎপাদন আর চাকরিতে প্রভাব ফেলবে, কারণ আমরা বিপুল পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করি।
ব্রাজিলিয়ান ফিশ ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন সতর্ক করে বলেছে, প্রায় ২০ হাজার কর্মী ছাঁটাই বা কর্মঘণ্টা কমানোর শিকার হতে পারেন।
যদিও ফিদার পেস্কাদোস এখনো ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেননি, তবুও রপ্তানির জন্য তেলাপিয়ার ফিলে প্রস্তুত কারী ২৬ বছর বয়সী রাফায়েলা ফেরেইরা দো নাসসিমেন্তো স্বীকার করে বলেন, তিনি চাকরি হারানোর আশঙ্কায় কিছুটা ভয় পাচ্ছেন।
স্বল্পমেয়াদে কোম্পানি কাউকে ছাঁটাই করতে পারছে না, কারণ এতে প্রস্তুত মাছ প্রক্রিয়াজাত করার সক্ষমতা কমে যাবে।
-নতুন বাজারের খোঁজে-
নির্দিষ্ট ওজনের বেশি হলেই মাছকে কারখানায় নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। তারপর তা টাটকা বা হিমায়িত অবস্থায় পাঠানো হয়।
ফিদার পেস্কাদোস’র উৎপাদন তত্ত্বাবধায়ক স্যামুয়েল আরাউজো কার্ভালহো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মূলত টাটকা তেলাপিয়া কিনে, যা বেশি লাভজনক। শুল্কের কারণে রপ্তানি কমে গেলে আমাদের কিছু পণ্য হিমায়িত করতে হবে।
কুবিৎসা বলেন, কয়েকটি দেশ ছাড়া অন্য কোথাও আমরা টাটকা মাছ বিক্রি করতে পারব না। তাই ইতিমধ্যেই আমরা মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ ঘরোয়ভাবে বিক্রি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। তবে দেশীয় বাজারে দাম অনেক কম, যা রপ্তানির চেয়ে কম লাভজনক।
নতুন বাজারের সন্ধান করতে গিয়ে ফিদার পেস্কাদোসকে ৩৫ শতাংশ উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হয়েছে।