শিরোনাম
ঢাকা, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : রাজধানীর গুলশান অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সমস্যা চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক, যানজট ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা আজ ডিসিসিআই গুলশান সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় গুলশান, মহাখালী, বনানী এবং বাড্ডা অঞ্চলের ১৪টি অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এবং বেশকিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ডিসিসিআই’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এলসি সমন্বয়ের দীর্ঘসূত্রিতা, ডলারের মূল্যের অস্থিরতা, ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার, ভ্যাট প্রদানে হয়রানি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়ার জটিলতা ও উচ্চ ফি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং অসহনীয় যানজটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি ক্রমশই অবনতি হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারীরা।
মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক (বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ-এফইপিডি) মো. সাইয়েদুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর প্রথম সচিব (মূসক বাস্তবায়ন) মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর উপ-পুলিশ কমিশনার (গুলশান বিভাগ) মো. তারেক মাহমুদ বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির কারণে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে আমাদের উদ্যোক্তাদের ক্রমশই কঠিনতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে কর ও ভ্যাট ব্যবস্থার জটিলতা ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, কর ও ভ্যাটের নিয়মিত পরিবর্তন, অগ্রিম আয়কর ও রেগুলেটরি ডিউটির অতিরিক্ত বোঝা, আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশের বেসরকারিখাতের উপর অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
এছাড়াও সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যানজট পরিস্থিতির অবনতির কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
তাসকীন আহমেদ বলেন, ঋণপত্র খোলার জটিলতা, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তিতে পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতা এবং উচ্চ সুদ হার আমাদের স্থানীয় শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। এমতাবস্থায় দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারিখাতের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং কার্যকর বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, এলসি মার্জিন শতভাগ হবে কিনা, এটি নির্ভর করে ব্যাংক ও ভোক্তার সম্পর্কের উপর এবং এলসি মার্জিনের বিষয়টি সব পণ্যের ক্ষেত্রে এক নয়। তিনি বলেন, কোভিড মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে মার্কিন ডলারের মূল্যের অস্বাভাবিক ওঠানামার কারণে আমাদের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনায়নে সরকারি-বেসরকারিখাতের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
এনবিআর’র প্রথম সচিব (মূসক বাস্তবায়ন) মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বেশ চ্যালেঞ্জিং এবং এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তিনি ব্যবসায়ীসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে করজাল বিস্তারের লক্ষ্যে এনবিআর কাজ করছে। এছাড়াও সার্বিকভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে একটি অটোমেটেড এবং স্বচ্ছ রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই বলে তিনি তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার তারেক মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর জনগণের আস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে চাঁদাবাজি, হয়রানি ও ফুটপাত দখল মুক্ত করতে ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনগণকে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তার আহ্বান জানান এবং সম্মিলিত উদ্যোগে বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে গুলশান ১নং ডিএনসিসি দক্ষিণ পাঁকা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, এলসি খোলা হতে সমন্বয় পর্যন্ত প্রায় তিন মাস সময় লেগে যায়, দীর্ঘসময়ের জন্য টাকা আটকে থাকার কারণে ব্যবসায়ীদের মূলধন স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে পাশাপাশি ডলারের মূল্যের অস্থিরতার কারণেও ব্যবসায়ীরা এলসি’র মূল্য পরিশোধে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। মহাখালী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফিরোজ আলম স্বপন জানান, ভ্যাট হার বৃদ্ধি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের উচ্চ ফি এবং দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি মো. সালেম সোলায়মান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে ডিসিসিআই’র সদস্যপদ প্রদান করা হয় এবং ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির হাতে ডিসিসিআই’র মেম্বারশিপ সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেন।