‘সবার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং: আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যবধান দূরীকরণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত

বাসস
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:১০

ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর আয়োজনে আজ ‘সবার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং: আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যবধান দূরীকরণ’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় বক্তারা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান সময়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও সহায়ক নীতিমালার অনুপস্থিতি, ব্যবহারকারীদের কিছুটা আস্থাহীনতা, অপ্রতুল অবকাঠামো, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বয়হীনতা এবং ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির উচ্চমূল্যের কারণে এ সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

ডিসিসিআই মিলনায়তনে আয়োজিত এ আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মো. এজাজুল ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, দেশে ডিজিটাল সেবার আধুনিকায়ন ও নিশ্চিতকরণের জন্য সরকার, বেসরকারি খাত এবং শিক্ষা খাত একই লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল ব্যবস্থার আধুনিকায়নে অন্তর্ভুক্তি, অভিগম্যতা, একত্রীকরণ এবং বিস্তারের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ডাটা নিবন্ধনের প্রক্রিয়া যথাযথ না হওয়ায় ৫ কোটি নাগরিকের তথ্য ডার্কওয়েবে পাওয়া গেছে। তাই ডাটা এনক্রিপশনের প্রক্রিয়া যথাযথ করার পাশাপাশি নজরদারি জোরদার করতে হবে।

তিনি জানান, নাগরিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সকল সেবা প্রাপ্তির বিষয়ে সরকার কাজ করছে এবং ইতোমধ্যে ঢাকা শহরের ১০টি নাগরিক সেবা চালু হয়েছে।

সচিব আরও বলেন, সরকার ব্যক্তিগত ডাটা সংরক্ষণ সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা আগামী এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মো. এজাজুল ইসলাম বলেন, ডেবিট, ক্রেডিট, ডিপোজিট, ইন্স্যুরেন্স এবং পেমেন্ট সার্ভিসসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবায় দেশ বহুদূর এগিয়েছে। তবে অধিক সংখ্যক জনগণকে এসব কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মানি সার্কুলেশন হয়েছে। যদিও ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে সাধারণ জনগণের হাতে রয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা এবং ব্যাংকের কাছে রয়েছে মাত্র ২৯ হাজার কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, এ যাবৎ আর্থিক খাতে লেনদেনের ডিজিটাল পেমেন্ট হয়েছে মাত্র ২৭ থেকে ২৮ শতাংশ, আর বাকী ৭০ শতাংশের বেশি প্রথাগত ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে ২০১১ সালে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস চালু হলেও বর্তমানে দেশের প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষ এ সুবিধা ব্যবহার করছে, যার মাধ্যমে সহজতরভাবে আর্থিক সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে।

তবে সাইবার নিরাপত্তা, ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণ এবং আস্থার অভাবের কারণে এ খাতের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

এছাড়াও ডিজিটাল সার্ভিস আরও সাশ্রয়ী করা, ফিনান্সিয়াল ও ডিজিটাল লিটারেসি বাড়ানো এবং ব্যাংক ও ফিনটেক নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির ওপর জোর দেন ডিসিসিআই সভাপতি।

তিনি আরও বলেন, আর্থিক ডিজিটাল সেবার সঙ্গে আস্থা ও নিরাপত্তার বিষয়টি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে রবি আজিয়াটা পিএলসি’র হেড অব কমার্শিয়াল পার্টনারশিপ সানজিদ হাসান বলেন, ২০২৫ সালে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতে বাজার ৪৬৭৮.৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০৩৩ সালে ১১২৩৮.৬ মিলিয়নে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রচলিত ব্যাংকিং কার্যক্রমের বিষয়ে অনেকের আস্থার অভাব রয়েছে, যেখানে ডিজিটাল কার্যক্রম বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে। দেশের ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের বাজার ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

তবে এটিকে নিরাপদ করতে হলে একটি সমন্বিত ও সাইবার নিরাপত্তা ইকো-সিস্টেম চালু করা একান্ত আবশ্যক, অন্যথায় বড় ধরনের বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি কার্যক্রম আরও বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি। এছাড়াও স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সহজলভ্য করার মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক এলাকায় ডিজিটাল সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিবি) মো. ইলিয়াস জিকো, শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান, সিটি ব্যাংক পিএলসির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আজিজুর রহমান, বেটলস সাইবার সিকিউরিটি লিমিটেডের চিফ সাইবার অপারেশনস অফিসার শাহী মির্জা এবং ওমেগা এক্সিম লিমিটেডের পরিচালক রেজওয়ান আলী।

বক্তারা আর্থিক খাতে জালিয়াতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ব্যাংকগুলোর জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ প্রণয়ন, আমদানি-রপ্তানি খাতে ডিজিটালাইজেশন, ব্লকচেইন প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং ইউনিফায়েড সাইবার সিকিউরিটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির প্রস্তাব দেন।

ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
জুলাই সনদে পিআর পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করে গণভোটের আয়োজন করতে হবে : মিয়া গোলাম পরওয়ার
জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে : এডভোকেট জুবায়ের
চট্টগ্রামকে হারিয়ে ফাইনালে রংপুর
২০২৫ শান্তিতে নোবেলজয়ী ভেনেজুয়েলার মারিয়া করিনা মাচাদোকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন
ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে ইতিহাসের সেরা : শফিকুল আলম
সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের মৃত্যুতে ঢাবি সাদা দলের শোক
নিউজিল্যান্ডের কাছে বড় হার বাংলাদেশের
হেফাজতে ইসলাম সবার জন্য পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন : এ্যানি
সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বেহাল অবস্থা অবসানের দাবি আরিফুল হক চৌধুরীর
বিএনপি কোনো অবস্থাতেই পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে বিশ্বাসী নয় : ডা. জাহিদ হোসেন
১০