ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার রাতের দিকে ওষুধ, ভারী ট্রাক, গৃহ-সামগ্রী ও আসবাবপত্রের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা তাঁর বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধকে পুনরুজ্জীবিত করল।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
এই ঘোষণা এপ্রিল মাসে কার্যত সব মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের পর প্রেসিডেন্টের নেওয়া সবচেয়ে কঠোর বাণিজ্যনীতি।
ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে আমরা যেকোনো ব্র্যান্ডেড বা পেটেন্টকৃত ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের ওপর শতভাগ শুল্ক আরোপ করব, যদি না কোনো কোম্পানি আমেরিকায় তাদের ওষুধ উৎপাদন কারখানা নির্মাণ করছে।
আলাদা এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, অন্যান্য দেশে তৈরি সব ভারী (বড়) ট্রাকের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। যাতে যুক্তরাষ্ট্রের পিটারবিল্ট, কেনওয়ার্থ, ফ্রেইটলাইনার, ম্যাক ট্রাকস প্রভৃতি কোম্পানিকে সহায়তা করা যায়।
সুইডেনের ভলভো ও জার্মানির ডাইমলার, যার অধীনে ফ্রেইটলাইনার ও ওয়েস্টার্ন স্টার ব্র্যান্ড যারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাজ করে। ট্রাম্পের এই ঘোষণার ঘোষণার পর ইউরোপের বাজারে উভয় কোম্পানির শেয়ার দরে বড় পতন হয়।
ট্রাম্প বলেছেন, বহু কারণে ট্রাক শুল্ক আরোপ করা হবে, তবে সর্বাগ্রে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য।
চলতি বছর শুরুর দিকে ট্রাম্প প্রশাসন আমদানিকৃত ট্রাক নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার প্রভাব যাচাই করতে তথাকথিত সেকশন ২৩২ তদন্ত শুরু করে। যার ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবারের এ ঘোষণা আসে।
মার্কিন বাণিজ্য আইনের সেকশন ২৩২ ধারা প্রেসিডেন্টকে জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে বিবেচিত আমদানির ওপর শুল্ক বা অন্যান্য বিধিনিষেধ আরোপের ব্যাপক ক্ষমতা দেয়।
ট্রাম্প সেকশন ২৩২-এর ব্যাপক ব্যবহার করেছেন আমদানিকৃত পণ্যের ওপর তদন্ত ও শুল্ক আরোপে যাতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করতে এবং যেসব দেশকে তিনি আমেরিকার সুযোগ নেওয়ার অভিযোগ করেন তাদের শাস্তি দিতে পারেন।
এই রিয়েল এস্টেট টাইকুন বাড়ি সংস্কারের সামগ্রীতেও নিশানা করে ট্রাম্প লিখেছেন, ১ অক্টোবর থেকে সব রান্নাঘরের ক্যাবিনেট, বাথরুম ভ্যানিটি ও সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, অতিরিক্তভাবে, আমরা সব আসন-যুক্ত আসবাবপত্রের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করব।
মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে এশিয়া থেকে প্রধানত আমদানিকৃত আসবাবপত্র যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ৬০ শতাংশের বেশি দখল করেছে। যার মধ্যে কাঠের আসবাবের ৮৬ শতাংশ এবং আসন-যুক্ত আসবাবের ৪২ শতাংশই আমদানি।
ঘোষণার পর আমদানি নির্ভর আসবাব খুচরা বিক্রেতা ওয়েফেয়ার ও উইলিয়ামস সোনোমার শেয়ারদর রাতারাতি ধসে পড়ে।
এই শুল্ক ঝড় নতুন করে আশঙ্কা তৈরি করেছে যে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি আবার বেড়ে যেতে পারে।
ট্রাম্পের লক্ষ্য সুরক্ষাবাদী নীতির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা পুনর্গঠন করা। যা আধুনিক মার্কিন উন্মুক্ত ও আমদানি নির্ভর অর্থনীতির নীতি থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত।
তাঁর প্রশাসন সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্ক আরোপ করেছে। যেসব দেশের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি আমদানির তুলনায় বহুগুণ বেশি, তাদের ক্ষেত্রে পৃথকভাবে আরো বেশি হারে শুল্ক বসানো হয়েছে।
এছাড়া প্রেসিডেন্ট জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে কানাডা ও মেক্সিকোর মতো বাণিজ্য অংশীদার এবং চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন। যেখানে তিনি ফেন্টানিল পাচার ও অবৈধ অভিবাসনের মতো বিষয়কে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন।
আগামী সপ্তাহে কার্যকর হতে যাওয়া এসব নতুন শুল্ক আগে থেকে বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে কীভাবে সামঞ্জস্য করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।