
ঢাকা, ১০ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিষয়ে স্বাধীন মূল্যায়নে ঢাকায় সফররত জাতিসংঘের মিশন, ইউএন-ওএইচআরএলএলএস-এর সঙ্গে পোশাক খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর এক কৌশলগত পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান পোশাক শিল্পের পক্ষ থেকে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উত্তরণ-পরবর্তী ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার ও সহায়তার ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য একটি সহযোগিতামূলক নীতির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
আজ সোমবার গুলশানে ইউএন হাউজে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন বিকেএমইএ এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান এবং বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল এন্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিটিএলএমইএ)-এর চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) এর পরিচালক হোসেন মেহমুদ, বিজিএমইএ’র পরিচালক ফয়সাল সামাদ, সাবেক পরিচালক শরীফ জহির এবং বিজিএমই’র সাবেক পরিচালক ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন এফটিএ অ্যান্ড পিটিএ’র চেয়ারম্যান লুৎফে এম আইয়ুব।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক দুর্বলতার বিষয় তুলে ধরে এলডিসি-উত্তর ঝুঁকি মোকাবেলায় নীতি সংস্কার ও লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে টেকসই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে অংশীদারিত্বমূলক, শিল্প-বান্ধব নীতি ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় মাহমুদ হাসান খান বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এখন এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার দ্বৈত সংকটে পড়েছে। তিনি জানান, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গ্যাসের দাম বেড়েছে ২৮৬ শতাংশ এবং ২০২৫ সালের এপ্রিলে আরও এক দফা মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে-ক্যাপটিভ পাওয়ারের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ ও শিল্প ব্যবহারে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ-যা উৎপাদন সক্ষমতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, রপ্তানি খাত মারাত্মক লজিস্টিকস চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। দীর্ঘদিনের বিলম্ব ও অদক্ষতার পরও চট্টগ্রাম বন্দর ২০২৫ সালের অক্টোবরে শুল্ক ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া সড়ক পরিবহনে অতিরিক্ত সময় লাগায় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তদুপরি, ২০২৩ সালে ৫৬ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, ২০২৪ সালে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে উন্নীত করা এবং নগদ সহায়তা ৬০ শতাংশ কমিয়ে বিকল্প সহায়তা না দেওয়ায় খাতটি আর্থিকভাবে নাজুক অবস্থায় পড়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির কয়েকটি দুর্বল দিক তুলে ধরেন-জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি কমে আসা, মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ওপরে থাকা, জিডিপির তুলনায় কর আদায়ের হার মাত্র ৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বিপিএম৬ অনুযায়ী)।
তিনি বর্তমান রাজনৈতিক রূপান্তর, বৈশ্বিক বাণিজ্যের অনিশ্চয়তা, জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্রেতাদের অর্ডার কমে যাওয়া এবং ‘স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি’ বাস্তবায়নে সমন্বয় ঘাটতির বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি সতর্ক করেন, পণ্যের বৈচিত্র্যহীনতা ও আমদানিনির্ভর কাঁচামালের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে।
সভায় রপ্তানিকারকরা সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি অগ্রাধিকারমূলক সুপারিশ পেশ করেন, যাতে উত্তরণ প্রক্রিয়ায় স্থিতিশীল ও সমন্বিত নীতি পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।