
ঢাকা, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : পুঁজিবাজারের প্রাথমিক গণ-প্রস্তাব (আইপিও) আরও গতিশীল, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার সুপারিশ করেছেন বক্তারা।
আজ বুধবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) টাওয়ারে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক অফার অব ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ) রুলস- ২০২৫৫’ শীর্ষক পরামর্শ সভায় এ সুপারিশ করেন তারা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে।
এতে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি এস এস গোলাম সামদানী ভূইয়া, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি), বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) প্রতিনিধি ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘এ অঞ্চলে ভারতের পরেই পাকিস্তান ও শ্রীলংকার আর্থিক বাজার অনেক সুসংহত। বাংলাদেশের চাইতে তারা ভালো অবস্থানে আছে।
আমাদের টার্গেট আগামী পাঁচ বছরে আমরা যেনো পাকিস্তান ও শ্রীলংকার লেভেলে পৌঁছতে পারি। এজন্য দেশের পুঁজিবাজারের সমস্যার ‘দরজা-জানালা’ খুলতে রুলস হওয়ার আগেই সমাধান খুঁজতে হবে।’
স্টেকহোল্ডার পরামর্শ সভায় অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমান খসড়ায় কিছু বিধিনিষেধ বাজারের স্বাভাবিক মূল্য-নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে সীমাবদ্ধ করতে পারে। তাই বাজারের বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অনুসারে মূল্যায়ন, বুক-বিল্ডিং, ইআই বরাদ্দ, লক-ইন, এবং আইপিও পদ্ধতি সহজীকরণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের সুপারিশ করা হয়।
তারা বলেন, কোম্পানির মূল্যায়ন শিল্পের গড় প্রাইস আর্নিং রেশিও (পিই) বা বাজার পিই দ্বারা সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়। বরং কোম্পানির প্রবৃদ্ধি, মার্জিন, প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান, ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে স্বাধীনভাবে মূল্য নির্ধারণের সুযোগ থাকা আবশ্যক।
বুক-বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় ৭৫টি যোগ্য বিনিয়োগকারীর (ইআই) কাছ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে নির্দেশক মূল্য নেওয়ার বিধানকে অকার্যকর ও অপ্রয়োজনীয় বলে মত দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে নিলাম-ভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণের সুপারিশ করা হয়, যাতে প্রত্যেকে নিজেদের দর অনুযায়ী শেয়ার বরাদ্দ পায় এবং মূল্য নির্ধারণ স্বাভাবিক হয়।
এছাড়া, আইপিও তহবিল ব্যবহার নীতিতে ৫০ শতাংশ ঋণ পরিশোধের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করেন অংশগ্রহণকারীরা। তাদের মতে, ব্যবসার সম্প্রসারণ পরিকল্পনা থেকে আইপিও পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে উদ্যোক্তাদের প্রাক-নির্ধারিত বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক ঋণ নিতে হয়, যা আংশিকভাবে আইপিও তহবিল দিয়ে পরিশোধের সুযোগ থাকা উচিত।
প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, আইপিওর দুই বছর আগে পর্যন্ত পেইড-আপ ক্যাপিটাল বা মালিকানা কাঠামো পরিবর্তনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। প্রয়োজনে লক-ইন শর্তসহ সীমিত পর্যায়ে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের সুযোগ রাখার পরামর্শ দেন তারা।
স্থির মূল্য পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ১০০০ কোটি টাকা পোস্ট-আইপিও পেইড-আপ ক্যাপিটালের সীমা, বড় কোম্পানিগুলোর জন্য বাধা সৃষ্টি করবে বলে মন্তব্য করেন তারা । তারা এই সীমা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন।
এ ছাড়া ইআইদের ছয় মাসের লক-ইন বিধান তারল্য কমিয়ে বাজারে কৃত্রিম মূল্য অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তারা। তাই ধাপে ধাপে লক-ইন তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেন তারা।
এ ছাড়া, বহুজাতিক ও বৃহৎ দেশীয় কোম্পানিকে উৎসাহ দিতে ‘ডাইরেক্ট লিস্টিং’ সুযোগ চালুর প্রস্তাব করা হয়। বড় করপোরেট যাদের দায় ১,০০০ কোটি টাকার বেশি, তাদের বন্ড ও ইকুইটির মাধ্যমে বাজার থেকে মূলধন সংগ্রহে উৎসাহিত করার পরামর্শও দেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, আইপিওতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা সেকেন্ডারি মার্কেট বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা এবং তালিকাভুক্তির প্রথম তিন দিনের সার্কিট ব্রেকার, এ দুই বিধান বাজারের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করতে পারে বলে তা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, এসব সংশোধন গ্রহণ করা হলে পুঁজিবাজারে গুণগত কোম্পানির আইপিও বাড়বে, বিনিয়োগকারীর আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং বাজার হবে আরও টেকসই ও বিনিয়োগ-সহায়ক।