বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তানিয়া আমিরের বক্তব্য খণ্ডন করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বাসস
প্রকাশ: ০১ মে ২০২৫, ০০:৩০ আপডেট: : ০৭ মে ২০২৫, ১৮:২৮

ঢাকা, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলেছে, ২০০৯ সালের বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) বিদ্রোহ নিয়ে তানিয়া আমিরের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর। তার এমন মন্তব্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হিসেবে তার নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডারই  প্রতিফলন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আজ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ সম্পর্কে তানিয়া আমিরের বক্তব্য, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে, তাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হিসেবে তার নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রেস উইংয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ- সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস-এ পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।

প্রেস উইং বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের সত্য উদঘাটনে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলো উপস্থাপন করে। উদ্যোগগুলো হচ্ছে:

তদন্ত কমিশন

২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের জন্য সাত সদস্যের একটি জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এএলএম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে কমিশন কয়েক ডজন সাক্ষীর (এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৭ জন, যার মধ্যে অফিসার, বিডিআর কর্মী এবং ভুক্তভোগীদের পরিবার অন্তর্ভুক্ত) সাক্ষ্য সংগ্রহ করেছে। এটি ‘ঘটনার প্রকৃত প্রকৃতি উন্মোচন’, সমস্ত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ এবং এমনকি যেকোনো দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র তদন্তে  প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গোপনীয়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে কমিশন একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ২০০৯ সালের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য বা সাক্ষ্য থাকা যেকোনো ব্যক্তির কাছে তাদের ওয়েবসাইট বা ইমেলের মাধ্যমে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়।

সত্য উন্মোচনের অঙ্গীকার

স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পিলখানার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ পুনঃতদন্তের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, কমিশনের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কমিশন ইতোমধ্যেই কয়েক ডজন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড করেছে এবং প্রয়োজনে তারা এমনকি শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের (যেমন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রাক্তন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ) ডাকবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার ‘প্রকৃত প্রকৃতি উন্মোচিত’ হবে, মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সম্ভাব্য সকল বিদেশী বা দেশীয় চক্রান্তের বিষয়টি খুঁজে দেখা হবে।

তথ্যের জন্য জনসাধারণের কাছে আবেদন

প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্বলিত যেকোনো নাগরিক বা সংস্থাকে তার ওয়েবসাইট বা ইমেলের মাধ্যমে এগিয়ে আসার জন্য কমিশন ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

এটি ১৬ বছর আগের একটি অপরাধের তদন্তের জটিলতা তুলে ধরে এবং তথ্যদাতাদের গোপনীয়তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে। যা সরকার বিষয়গুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে- তানিয়া আমিরের এমন দাবির বিপরীতে এটি স্বচ্ছ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ হওয়ার একটি আনুষ্ঠানিক প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।

আদালতের মামলা এবং মুক্তি

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, বিদ্রোহ-সম্পর্কিত মামলায় কয়েকশ’ সাবেক  বিডিআর কর্মীকে জামিন দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে তানিয়া আমিরের অভিযোগ কোনও আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু  বন্দীদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। নিহত অফিসারদের পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানায় যে যারা সেনা অফিসারদের হত্যা করেছে তাদের সম্পূর্ণ মুক্তি দেওয়া উচিত নয়। ইতিমধ্যে, বেঁচে যাওয়াদের পরিবারগুলো নতুন অভিযোগ দায়ের করেছে (যেমন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে নতুন করে বিক্ষোভের হুমকি দিয়েছে।

নিহতদের স্মরণ

অন্তর্বর্তী সরকার একই সাথে নিহতদের সম্মান জানাতে পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং পিলখানায় নিহত ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে ‘শহীদ’ মর্যাদা প্রদান করে।

প্রেস উইং জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের সাথে আমিরের সম্পৃক্ততা সুপরিচিত। ২০২৩ সালের নভেম্বরে, তিনি এবং তার বাবা ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে সংসদীয় আসন কুষ্টিয়া-৩ এবং কুষ্টিয়া-৪ এর জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন, যা দলের সাথে সক্রিয় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত বহন করে।

‘তার পারিবারিক পটভূমি আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত: তার বাবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং সংবিধান প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং পরিবার ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। যদিও তিনি স্বাধীনভাবে আইনি মামলা করেছেন, তবুও তাকে দলের রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থানের সাথে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হিসেবে দেখা হয়।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে- এই সম্পৃক্ততার পরিপ্রেক্ষিতে, জেনেভা প্রেস ক্লাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে এবং ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তার সাম্প্রতিক মন্তব্যকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, জেনেভা সম্মেলনে তানিয়া আমির এবং অন্যান্য বক্তারা কোনও নতুন প্রমাণ উদ্ধৃত করেননি; বরং, তারা বছরের পর বছর ধরে বিরোধী পক্ষগুলোর মধ্যে প্রচারিত দাবিগুলো  (যেমন মৃত্যুর সংখ্যা, ক্ষতিপূরণ আইন, বন্দীদের মুক্তি) পুনরাবৃত্তি করেছেন বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বেগম খালেদা জিয়ার হার্ট ও চেস্টে ইনফেকশন হয়েছে : ডা: এফএম সিদ্দিকী
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে অপপ্রচার : ফরিদপুর জেলা পুলিশ
মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি গণসংহতি আন্দোলনের
নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রেখেছেন তারেক রহমান: নিপুণ রায়
রাজধানীতে সম্মিলিত ইমাম-খতিব জাতীয় সম্মেলনে ৭ দফা দাবি পেশ
সিলেটে বিজিবির অভিযানে ৪ কোটি টাকার চোরাচালানি মালামাল জব্দ
হবিগঞ্জে ৫২ কেজি গাঁজাসহ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে র‌্যাব-৯ 
বার কাউন্সিলের রিভিউ ফলাফল বাতিল করে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত: ২৯ নভেম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা স্থগিত
বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ভুটান : মির্জা ফখরুল
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কৃষকদলের ১৩১ সদস্যের কমিটি : বাকেরগঞ্জের সভাপতি জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি
১০