চট্টগ্রামের সাদ্দাম এখন গোলবারের নির্ভরযোগ্য প্রহরি

বাসস
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৪০ আপডেট: : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৫০
ছবি : বাসস

চট্টগ্রাম, ২৫ জুন ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার এক অজপাড়া গাঁয়ের সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা সাদ্দাম হোসেন এখন ঢাকার আরামবাগ ক্লাবের গোলবারের নির্ভরযোগ্য প্রহরি। 

দীর্ঘপথ পেরিয়ে নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে আজ তিনি জাতীয় পর্যায়ে ফুটবলের গুরুত্বপূর্ণ মুখ। ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে আসার পিছনে রয়েছে তার নানা প্রতিবন্ধকতার গল্প। পরিবারের খেলাধুলার প্রতি একটি বিশেষ টান থাকার কারণে পারিবারিকভাবে তাকে বেশি ঝামেলায় পড়তে  হয়নি। পেয়েছেন বড় ভাইদের কাছ থেকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গুনগুনিয়া বেতাগী গ্রামের মৃত আবদুল মোনাফ সওদাগর ও ফরিদা বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সাদ্দাম হোসেন। বাড়ির পাশের পোমরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করলেও খেলাধুলার প্রতি ঝুঁকে পড়ায় কলেজে ভর্তি হয়েও আর লেখাপড়া শেষ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফুটবলের প্রতি ছিল সব মনোযোগ। স্থানীয় পর্যায়ে প্রথমে ২০০৫ সালে পোমরা কর্ণফুলী ক্রীড়া পরিষদে গোলবার সামলানোর দায়িত্ব শুরু করেন সাদ্দাম। স্থানীয় পর্যায়ে যখন ভাল করতে থাকেন তার উপর চোখ পড়ে রাঙ্গুনিয়া ক্লাবের সিনিয়র ফুটবলার সবুর ও গোলকিপার সেলিমের। তাদের সহায়তায় ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের পাইওনিয়ার লীগের অন্যতম দল ‘প্রত্যাশা স্পোর্টিং’ পতেঙ্গায় খেলার সুযোগ পান। সেখানে অসাধারণ নৈপূর্ণ প্রদশর্নের মাধ্যমে ২০১০ সালে ঢাকা পাইওনিয়র লীগে খেলার সুযোগ পান । ঢাকা প্রথম ডিভিশনে খেলেন ২০১০ সালে খিলগাঁও জাগরণী সংসদের হয়ে।

সাদ্দাম জানান, ২০০৯ সালে দৈনিক কালের কণ্ঠের খেলার পাতায় ঢাকার জাগরণী সংঘের উন্মুক্ত ফুটবল ট্রায়ালের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে সাদ্দামের। সেটি বদলে দেয় তার জীবনের গতিপথ। আবেদন করে সেই ট্রায়ালে অংশ নেন। ট্রায়ালে তার উপর চোখ পড়ে জাগরণী সংঘের কোচের। সেখান থেকেই শুরু হয় পেশাদার ফুটবল যাত্রা।

আত্মবিশ্বাসী গোলকিপার সাদ্দাম হোসেন বলেন, ২০১১-২০১২ সালে তিনি নজড়ে আসেন ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের অন্যতম দল ফেনী সকারের। সেখানে ২০১৩-২০১৪ মৌসুম পর্যন্ত খেলেছেন। ২০১৬ সালে চুক্তিবদ্ধ হন সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের সাথে। সাইফ স্পোর্টিং এর হয়ে খেলেছেন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশীপ লীগ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে অনুর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দল ও অনুর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পেয়েছিলেন চট্টগ্রামের প্রতিভাবান গোলকিপার সাদ্দাম। ফুটবল ক্যারিয়ারের সেই মুহূর্তটাই ছিল সবচেয়ে স্বপ্নময়। কিন্তু ঠিক তখনই সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের অনুশীলনে পায়ের ইনজুরিতে পড়ে জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামা হয়নি।

এই ব্যর্থতা কিংবা হতাশা সাদ্দামকে থামিয়ে দেয়নি। বরং সেই হতাশাকে সঙ্গী করে আরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ফিরেছেন মাঠে। ২০১৮ সালে মাঠ কাঁপিয়েছেন বিপিএল এর অন্যতম দল ফরাশগঞ্জের হয়ে।

মাঝখানে করোনার কারণে লীগ বন্ধ থাকায় কিছুদিন খেলা মাঠে গড়ায়নি। ২০২১-২০২২ মৌসুমে খেলেছেন ফর্টিস এফসির জার্সি গায়ে। এখন তিনি ঢাকার আরামবাগ ক্রীড়া চক্রের গোলবার সামলান নিখুঁত দক্ষতার সাথে।

সাবেক জাতীয় দলের অধিনায়ক রাঙ্গুনিয়ার আরেক কৃতি সন্তান আরমান আজিজ ঢাকার বিভিন্ন পর্যায়ের টুর্ণামেন্টে খেলার সুযোগ করে দেন সাদ্দামকে। তিনি সবসময় তাকে অনুপ্রেরণা যোগাতেন। ফলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাকে পরিচিত করে তোলে ঢাকার ক্লাবগুলোর কাছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে প্রমাণ করে জায়গা করে নেন আরামবাগ ক্রীড়া চক্রের মূল দলে।

খেলার প্রতি অনুপ্রেরণার উৎস নিজের পরিবার উল্লেখ করে সাদ্দাম জানান, ৬ ভাইয়ের মধ্যে ৪ ভাই স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলতেন এবং তারাও গোলরক্ষক হিসেবে নিজেদেও পরিচিত করেছেন । তাদের পথ অনুসরণ করেই ২০০৫ সাল থেকে ফুটবলের মাঠে-ময়দানে ছুটছেন তিনি। পরিবারের সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেও স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলা থামাননি। বরং অদম্য স্পৃহার মাধ্যমে এগিয়েছেন লক্ষ্যপানে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারন সম্পাদক হারুন আল রশিদ বলেন, আজকের সাদ্দাম শুধু একজন ফুটবলার নন, তিনি দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণার নাম। জীবনযুদ্ধে জিতে কিভাবে লক্ষ্যপানে এগিয়ে যেতে হয়, তার জ্বলন্ত উদাহরণ এই সাদ্দাম। মাঝখানে পা ভেঙ্গেও দমে যাননি তিনি। বরং সুস্থ হয়ে আরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ফিরেছেন মাঠে। এখন তিনি ঢাকার আরামবাগ ক্রীড়া চক্রের গোলবার সামলানোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন দৃঢ়তার সাথে। সেটাই আমাদের গর্বের এবং আনন্দের।

সাদ্দামের প্রিয় খেলোয়াড় লিওনেল মেসি এবং প্রিয় গোলরক্ষক ইতালির গিয়ানলুইজি বুফন। তবে বাস্তব জীবনে যিনি তাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করেছেন তিনি সেজ ভাই আবদুল আল হান্নান। যিনি চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের সাবেক গোলকিপার। ভাইয়ের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ ও আত্মত্যাগই সাদ্দামকে অনুপ্রাণিত করেছে পেশাদার গোলকিপার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে। তার দেখা স্বপ্ন আজ পূরনের পথে বলে জানান সাদ্দাম। এখন অপেক্ষা শুধু জাতীয় দলে খেলার। সেই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে চান সাদ্দাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
যুক্তরাজ্যে গুপ্তচরবৃত্তির কথা অস্বীকার করেছেন তিন ইরানি
লিগ্যাল এইড-এর টোল ফ্রি ‘১৬৪৩০’ নম্বরে ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৭২ জনকে আইনি সেবা প্রদান
চরফ্যাশনে পৌরসভার শতকোটি টাকার জমি উদ্ধারে অভিযান
নির্বাচনকে সামনে রেখে বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে : সিইসি
ই-রিটার্ন ব্যবহারের মাধ্যমে আয়কর প্রদানে এগিয়ে আসার আহ্বান ঢাকা চেম্বারের
পর্যটনের লক্ষ্য শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নয়, আনন্দেরও উপলক্ষ: বশিরউদ্দীন
কুমিল্লায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৫ হাজার আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন
জুমের সোনালি ধানে ঘরে ঘরে খুশির বন্যা 
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সিলেটে র‌্যালি ও আলোচনা সভা
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে নদীতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
১০