
ঢাকা, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট সবচেয়ে জনপ্রিয় ও রহস্যময় চরিত্রগুলোর একটি হলো হিমু। হিমুর বাবা ছিলেন একজন মনস্তাত্ত্বিক। যিনি নিজের ছেলেকে “অসাধারণ মানুষ” বানানোর জন্য শৈশব থেকেই অদ্ভুতভাবে তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সেই পরীক্ষার ফলেই হিমু হয়ে ওঠে এমন এক চরিত্র- যে সমাজে খাপ খায় না, কিন্তু সত্যিকারের স্বাধীন চিন্তা করে।
বাংলাদেশ আরচ্যারী দলেও রয়েছেন একজন হিমু। পুরো নাম হিমু বাছাড়। যার আসল নাম চয়ন বাছাড়। ঢাকায় চলমান এশিয়ান আরচ্যারী চ্যাম্পিয়নশিপে কম্পাউন্ড মিশ্র দলগত ইভেন্টে বাংলাদেশকে রূপা জেতাতে বড় অবদান রাখেন গোপালগঞ্জের এই তরুণ।
হিমুর বড় ভাই তারক বাছাড় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের ছাত্র। হুমায়ুন আহমেদের ভক্ত তারক শখ করে বাবার দেওয়া নামটাই বদলে দেন ছোট ভাইয়ের।
স্কুলে চয়ন নামে ভর্তি হন হিমু। কিন্তু স্কুলের সবাই এক সময় তাকে হিমু নামে ডাকতে শুরু করে। পরে জানতে পারেন, ভাই স্কুলে তার নাম পরিবর্তন করে দিয়েছেন। সেই থেকে চয়ন হয়ে ওঠেন হিমু ।
বাংলা কলেজের এক বড় ভাইয়ের খেলা দেখে আরচ্যারীতে আসা হিমুর। এরপর বিকেএসপিতে ২০১৭ সালে ভর্তি হন। পড়াশুনা শেষে বিমান বাহিনীতে সৈনিক হিসেবে স্থায়ী চাকরি করছেন। বিমান বাহিনীর এই চাকরি হয়েছে ২০২৩ সালে।
পদক জয়ের পর পদোন্নতির আশা করছেন হিমু। তিনি বলেন, “এবার আমার প্রমোশন হবে আশা করি “।
বাবা সনাতন বাছাড় ব্রেন স্ট্রোকে ২০১৬ সালে মারা গেছেন। এরপর থেকে দুই ভাইয়ের আয়ে চলছে তাদের সংসার।
২০১৭ সাল থেকে হিমুর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু। এটাই তার সেরা অর্জন।
রূপা জিতে উচ্ছ্বসিত হিমু বলেন, “আমি প্রথমবার এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে এসেছি। প্রথমবারই পদক জিতেছি। খুব ভালো লাগছে। একদিন অলিম্পিকে পদক জিততে চাই।”
হুমায়ূন আহমেদের কাল্পনিক হিমু ছিলেন এক মুক্তচিন্তার প্রতীক- যিনি জীবনের বাঁধাধরা নিয়ম ভেঙে নিজের পথ তৈরি করেছিলেন। ঠিক তেমনই বাস্তবের আর্চার হিমু বাছাড়ও নিজের জীবনের বাঁক ঘুরিয়েছেন পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও স্বপ্নের তীর ছুঁড়ে। নামের মিল নয়, চিন্তার মিলেই যেন সাহিত্যের হিমু আর খেলাধুলার হিমু দাঁড়িয়েছেন এক জায়গায়- দু’জনই শিখিয়ে দেন, সাহস থাকলে বাস্তব জীবনও হয়ে উঠতে পারে এক অনুপ্রেরণার গল্প। রূপার পদক গলায় নিয়ে তাইতো হাসতে হাসতে বলছিলেন, “আমিও হিমুর মতোই জনপ্রিয় হতে চাই।”