বাসস
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:০৫

কানাডাকে অঙ্গরাজ্য করার বিতর্কিত প্রস্তাব ট্রাম্পের: ঘরে-বাইরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্টের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

॥ হারুন আল নাসিফ ॥

ঢাকা, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ৭ জানুয়ারি পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর পরই যুক্তরাষ্টের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিতর্কিত প্রস্তাব দিয়েছেন, যা ঘরে-বাইরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাব কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এক নতুন আলোকে উপস্থাপন করেছে এবং দুই দেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ট্রাম্পের প্রস্তাব

ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’ (পূর্বে টুইটার)-এ একটি পোস্টে এ প্রস্তাব দেন। তিনি লিখেছেন, ‘কানাডার অনেক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একত্রিত হতে চায়। তারা বুঝতে পেরেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একীভূত হলে উভয় দেশই অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে লাভবান হবে।’

ট্রাম্প আরও বলেন, কানাডার ভূখণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত রাশিয়া এবং চীনের প্রভাবে উদ্বিগ্ন সময়ে। ট্রাম্পের মতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার একীভূত হওয়া উভয় দেশের জন্য ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে এবং এটি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, সামরিক শক্তি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

কানাডার প্রতিক্রিয়া
 

ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের পর কানাডার রাজনৈতিক মহল থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সরাসরি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি ৭ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কানাডা কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হবে না। আমরা আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় মর্যাদা রক্ষা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’

কানাডার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এটি তাৎক্ষণিক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। কানাডার অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবকে একেবারেই অযৌক্তিক ও অসম্মানজনক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের মন্তব্য শুধু কানাডার সার্বভৌমত্বের প্রতি অবমাননা নয়, এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিষ্টাচারও লঙ্ঘন করেছে। কানাডা কোনো অবস্থাতেই যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য হবে না।’

কানাডার নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জগমিত সিং ৭ জানুয়ারি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এটি ট্রাম্পের রাজনৈতিক স্টান্ট হতে পারে, তবে কানাডা তার স্বাধীনতা রক্ষা করবে এবং এমন প্রস্তাব কখনোই গ্রহণ করবে না।’

এছাড়া, কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষ থেকে ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করা হয় এবং তারা এটিকে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রচারণার একটি অংশ হিসেবে দেখছেন।

মার্কিন প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের প্রস্তাবের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু রিপাবলিকান ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন। তবে, ডেমোক্র্যাটিক দলের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ৭ জানুয়ারি এক সাক্ষাৎকারে এই প্রস্তাবকে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘অবাস্তব’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘কানাডার সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় অধিকার রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের প্রস্তাব মেনে নেওয়া যায় না।’

বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই প্রস্তাব মূলত তার পুরনো ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় একটি স্টান্ট হতে পারে। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, কানাডার বিরুদ্ধে এমন মন্তব্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং এই ধরনের প্রস্তাব দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই প্রস্তাব শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করার উদ্দেশ্যে হলেও, এটি একে অপরকে অগ্রাহ্য করা এবং একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের সামিল। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কানাডার সম্পর্ক আরও জটিল হতে পারে।

ট্রাম্পের প্রস্তাব কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিতর্ক তৈরি করেছে। যদিও এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা নেই, তবুও এটি দুই দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কানাডার নেতৃত্ব এবং জনগণ তাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, এবং ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তারা একাট্টা।