শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বিগত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের দ্বারা ইসরাইলের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার পর ইসরাইল গাজা উপত্যকায় এক বিধ্বংসী সামরিক অভিযান শুরু করে।
রোববার ১৫ মাসব্যাপী যুদ্ধে দ্বিতীয় বিরতি শুরুর আগে ইসরাইলের বিমান ও স্থল অভিযানে গাজার হামাস-শাসিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ৪৬,৮৯৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে মনে করে জাতিসংঘ। নিম্নে এই সংঘাতের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো তুলে ধরা হলো:
হামাসের হামলা
৭ অক্টোবর ভোরে শত শত হামাস যোদ্ধা ইসরাইলে প্রবেশ করে, রাস্তায়, বাড়িতে এবং একটি সঙ্গীত উৎসবে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করে এবং সেনাঘাঁটিতে হামলা চালায়।
তারা ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। ৯৪ জন এখনও জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে তিন নারী রোববার মুক্তি পাওয়ার কথা। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানায়, এই ৯৪ জনের মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছে।
হামাসের হামলায় ১,২০০ জনেরও বেশি লোক প্রাণ হারায়।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামাসকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দেন। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইসরাইল হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
স্থল অভিযান
ইসরাইল গাজায় বোমা বর্ষণ ও অবরোধ শুরু করে। ১৩ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলের নাগরিকদের দক্ষিণে যাওয়ার আহ্বান জানায়।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধে গাজার বেশিরভাগ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
২৭ অক্টোবর ইসরাইল স্থল অভিযান শুরু করে।
যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়
২৪ নভেম্বর ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতি শুরু হয়।
হামাস ১০৫ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়, যাদের বেশিরভাগ ইসরাইলি ও থাই শ্রমিক। এর বিনিময়ে ইসরাইল ২৪০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়।
যুদ্ধ পুনরায় শুরু হলে ইসরাইল দক্ষিণ গাজায় তাদের অভিযান বিস্তৃত করে।
খাদ্য বিতরণের ওপর হামলা
২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সালে ইসরাইলি বাহিনী খাদ্য সাহায্যবাহী ট্রাকের কনভয়ে ছুটে আসা উত্তর গাজার বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ১২০ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়।
মার্চের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সামরিক বিমানগুলো গাজায় ত্রাণ সামগ্রী ফেলে, যা জাতিসংঘ দুর্ভিক্ষ-প্রবণ বলে মনে করে।
১ এপ্রিল, যুক্তরাষ্ট্রের দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাতজন ত্রাণকর্মী ইসরাইলের হামলায় নিহত হয়। ইসরাইল এই হামলাকে ‘দুঃখজনক ভুল’ বলে আখ্যায়িত করে।
ইরানের হামলা
১৩ এপ্রিল, ইরান প্রথমবারের মতো ইসরাইলের মাটিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলা ১ এপ্রিল ইসরাইলের বিরুদ্ধে দামেস্কে তাদের কনস্যুলেটে আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়।
২০ জুলাই, ইসরাইল ইয়েমেনের হোদেইদা বন্দরে হামলা চালায়। এটি ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে করা হয়, যারা ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে গাজার প্রতি সংহতি জানিয়ে শিপিং লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছিল।
হামাসের রাজনৈতিক নেতার মৃত্যু
ইসরাইল-লেবানন সীমান্তে অক্টোবর ২০২৩ থেকে প্রতিদিনের সংঘর্ষ জুলাইয়ে তীব্র আকার ধারণ করে।
ইসরাইলি হামলায় শীর্ষ হিজবুল্লাহ কমান্ডার ফুয়াদ শুকর নিহত হন।
৩১ জুলাই, হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়েহ ইরান সফরের সময় নিহত হন। কয়েক মাস পর ইসরাইল এই হামলার দায় স্বীকার করে।
লেবাননের সংঘর্ষ
১৭ এবং ১৮ সেপ্টেম্বর, ইসরাইলের অপারেশনে হিজবুল্লাহর শত শত কমিউনিকেশন ডিভাইস বিস্ফোরিত হয়। এতে ৩৯ জন নিহত এবং হাজারো আহত হয়।
২৭ সেপ্টেম্বর, ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হন।
অক্টোবরের ১ তারিখ, নাসরাল্লাহ ও হানিয়েহ হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরান ইসরাইলের বিরুদ্ধে ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
নতুন হামাস প্রধানের মৃত্যু
১৬ অক্টোবর, নতুন হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার গাজার দক্ষিণে নিহত হন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পরিকল্পনায় তার নাম জড়িত।
২৬ অক্টোবর, ইসরাইল ইরানে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়।
১৪ নভেম্বর, জাতিসংঘ বিশেষ কমিটি গাজায় ইসরাইলের কার্যক্রমকে ‘গণহত্যার বৈশিষ্ট্যযুক্ত’ বলে উল্লেখ করে।
নতুন যুদ্ধবিরতি
১৯ জানুয়ারি, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। প্রথম ধাপে ৩৩ জন জিম্মি মুক্তি পাবে এবং ইসরাইলের কারাগারে থাকা প্রায় ১,৯০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজা উপত্যকার ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনিরা তাদের ঘরে ফিরতে শুরু করে।