ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : রাশিয়া কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে অন্তত ১২ জনকে হত্যা করার পর বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বিরলভাবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করেছেন এবং ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে এএফপি জানায়, পুতিনকে সরাসরি এই আহ্বান জানানোর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে মিত্রদের ওপর আরও চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান।
প্রাণঘাতী এই হামলার পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলেনস্কি তার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সংক্ষিপ্ত করেন। সাম্প্রতিক সময়ের বৃহৎ পরিসরের এই রুশ বিমান হামলা কয়েক ডজন বেসামরিক লোকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে বলেন, 'আমি কিয়েভে রুশ হামলায় খুশি নই। অপ্রয়োজনীয় এবং সময়টাও খুব খারাপ। ভ্লাদিমির, থামো! চলো, শান্তিচুক্তিটা সম্পন্ন করি!'
ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ এ সপ্তাহে রাশিয়া সফর করছেন। তিনি পুতিনের সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তি নিয়ে চতুর্থ দফায় আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানুয়ারিতে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এটি তার চতুর্থ উদ্যোগ।
রাশিয়ার তিন বছরব্যাপী আগ্রাসনে ইউক্রেন নিয়মিত বিমান হামলার শিকার হলেও শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে কিয়েভে এমন প্রাণঘাতী হামলা তুলনামূলক কম ঘটে।
এই হামলা এমন এক সময়ে এলো যখন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া ও ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় ট্রাম্প জেলেনস্কির বিরুদ্ধে ক্রাইমিয়া নিয়ে আপস না করার অভিযোগ তুলেছেন।
জেলেনস্কি দক্ষিণ আফ্রিকায় সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা আমাদের আইন ও সংবিধানের পরিপন্থী নই—এমন মিত্রদের সব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি দেখি না রাশিয়ার ওপর কোনো শক্ত চাপ বা নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে।'
'এই হামলা তাৎক্ষণিকভাবে এবং নিঃশর্তভাবে বন্ধ করতে হবে,' বলেন জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার সকালের আকাশপথে চালানো হামলাকে তিনি যুদ্ধের ‘সবচেয়ে জটিল ও বেপরোয়া হামলাগুলোর একটি’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার:
এএফপি সাংবাদিকদের মতে, বৃহস্পতিবার ভোর ১টা (গ্রিনিচ সময় ২২:০০) নাগাদ কিয়েভে সাইরেন বাজতে শুরু করে এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানায়, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত রাশিয়া অন্তত ৭০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ১৪৫টি ড্রোন ছোড়ে, যার মূল লক্ষ্য ছিল কিয়েভ।
স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত কিয়েভের সাভিয়াতোশিনস্কি জেলায় নিহতের সংখ্যা ১২ জনে পৌঁছেছে বলে জানায় ইউক্রেনের জরুরি সেবা বিভাগ। আহত হয়েছেন অন্তত ৯০ জন।
রাশিয়া বলেছে, তারা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে রকেট জ্বালানি ও গানপাউডার উৎপাদনকারী কারখানাও ছিল।
কিয়েভের ৩৩ বছর বয়সী আইনজীবী ওলেনা দাভিদিউক এএফপিকে বলেন, 'বিস্ফোরণের সময় জানালাগুলো ভেঙে পড়ে, দরজাগুলো খসে পড়ে। ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষদের টেনে বের করা হচ্ছিল। অনেকে বলছিল, সেখানে মৃতদেহও পড়ে আছে।'
ক্রাইমিয়া:
কিয়েভের পশ্চিমাঞ্চল সাভিয়াতোশিনস্কিতে এএফপির এক সাংবাদিক এক মৃতদেহকে ঘাসের ওপর রাখা অবস্থায় দেখতে পান। পাশে ছোট একটি ভাঁজ করে রাখা চেয়ারে বসে এক নারী মৃত ব্যক্তির বাহু বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। মৃতদেহটি নীল ডোরা চাদরে ঢাকা ছিল।
গত মাসে রাশিয়া বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালিয়েছে—যা ট্রাম্পের দ্রুত যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে।
১৩ এপ্রিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি শহরের কেন্দ্রস্থলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হন।
আর এপ্রিলের শুরুতে জেলেনস্কির নিজ শহর ক্রিভি রিহ-তে এক আবাসিক এলাকায় শিশুদের খেলার মাঠের পাশে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন অন্তত ১৯ জন, যাদের মধ্যে ৯ জন শিশু।
বুধবার ট্রাম্প অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার বলে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে শান্তি প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করছেন। ট্রাম্প বলেন, 'ক্রাইমিয়া তো বহু আগেই হারিয়ে গেছে।'
২০১৪ সালে রাশিয়া কৃষ্ণসাগর উপকূলবর্তী ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয় এবং ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহীদের সমর্থন দেয়।
ট্রাম্পের ‘ক্রাইমিয়া হারিয়েছে’ মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা বহুদিন ধরেই এই ব্যাখাই দিয়ে আসছি, যা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পুরোপুরি মেলে।'