ঢাকা, ১২ মে ২০২৫ (বাসস): ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে এবং ইউরোপীয় নিরাপত্তা জোরদারে ‘জরুরি’ আলোচনার জন্য ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের মন্ত্রীদের স্বাগতম জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। যুদ্ধবিরতির জন্য মস্কোকে দেওয়া আলটিমেটামের দুই দিন পর আজ সোমবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
লন্ডন থেকে এএফপি জানায়, ‘ভাইমার+’ নামে পরিচিত জোটের এই বৈঠকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, স্পেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে সমন্বয় করতে জোটটি গঠিত হয়।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ল্যামি আজ রাশিয়ার আগ্রাসনে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরিকল্পনা করছেন।
এর আগে শনিবার ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের নেতারা কিয়েভ সফর করেন। সেখানে তারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণে এক যৌথ বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতি ৩০ দিনের জন্য ‘নির্বিশেষ’ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।
এটি ‘ভাইমার+’ জোটের ষষ্ঠ বৈঠক হলেও যুক্তরাজ্যে এটি প্রথমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলোচনায় মূলত ইউরোপীয় নিরাপত্তা এবং ইউক্রেনের জন্য একটি ‘ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি’ নিশ্চিতের উপায় নিয়েই আলোচনা হবে।
জার্মানি, স্পেন ও পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পাশাপাশি ফ্রান্সের পক্ষ থেকে ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী বেঞ্জামিন হাদ্দাদ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান কূটনীতিক কায়া কাল্লাস অংশ নিচ্ছেন।
‘অস্তিত্বের হুমকি’
আলোচনার প্রাক্কালে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যামি বলেন, ‘আজকের এই চ্যালেঞ্জ কেবল ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নয়—সমগ্র ইউরোপের জন্য এটি একটি অস্তিত্বগত হুমকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের লন্ডনে এনেছি এই বার্তা দিতে যে, সার্বভৌমত্ব ও শান্তির পক্ষে এবং ইউক্রেনের পাশে আমরা সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়েছি।’
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রোববার জানিয়েছেন, তিনি ১৫ মে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসতে চান। তবে ইউরোপীয় দেশগুলোর দাবি অনুযায়ী সোমবার থেকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া তিনি জানাননি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি পুতিনের সঙ্গে তুরস্কে বৈঠকে রাজি আছেন। তবে রাশিয়া যুদ্ধবিরতি না মানলে তিনি বৈঠকে যাবেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছেন, পুতিন কেবল ‘সময় কেনার চেষ্টা’ করছেন। তিনি পোল্যান্ডের প্রজেমিসল শহরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি ‘নির্বিশেষ যুদ্ধবিরতি’র আগে কোনো আলোচনা হয় না, এটিই এর সংজ্ঞা।’
পরে এলিসি প্রাসাদের এক বিবৃতিতে ম্যাখোঁ আবারও ‘যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা’ পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, যুদ্ধবিরতি ছাড়া কোনো উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ফলপ্রসূ হতে পারে না।
শনিবার কিয়েভে ইউরোপীয় নেতারা ও জেলেনস্কি একসঙ্গে রাশিয়ার প্রতি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। তারা সতর্ক করেছিলেন, রাশিয়া এটি না মানলে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য মিত্র দেশও এ প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে বলে তারা জানান।
এর আগে আশঙ্কা ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন নিয়ে উদাসীন হয়ে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছেন, কারণ তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে একাধিকবার বিরোধে জড়িয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।