ঢাকা, ১২ মে, ২০২৫, (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সোমবার এক যৌথ চুক্তি ঘোষণা করেছে, যার আওতায় উভয় দেশ পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ হারে কমাতে সম্মত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিকে টালমাটাল করে দেওয়া দীর্ঘমেয়াদি শুল্কযুদ্ধের অবসানে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
জেনেভো থেকে এএফপি জানায় জেনেভায় চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক-সংক্রান্ত নতুন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে এবং বিদ্যমান শুল্ক ১০ শতাংশ মৌলিক হারে নামিয়ে আনা হবে।
বেসেন্ট বলেন, ‘উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থকে ভালোভাবে তুলে ধরেছে। আমরা উভয়েই ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যে আগ্রহী।’
এই ঘোষণার পর মার্কিন ডলার শক্তিশালী হয়েছে এবং শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। এর ফলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত মাসের শুল্কবৃদ্ধির কারণে যে মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।
জেনেভায় বৈঠক ও পুনঃসংযোগের ইঙ্গিত
বেসেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সুইজারল্যান্ডে সপ্তাহান্তের আলোচনার পর জানান, উভয় পক্ষই মতৈক্যে পৌঁছেছে যে, বিচ্ছিন্নতামূলক অর্থনৈতিক নীতি কেউ চায় না।
তিনি বলেন, ‘উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ কার্যত এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর সেটাই আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা বাণিজ্য চাই।’
চীনের সঙ্গে এটি ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর প্রথম সরাসরি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি চীনা পণ্যে শুল্ক ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ান, যার মধ্যে রয়েছে আগের মেয়াদ ও বাইডেন প্রশাসনের সময়ের শুল্কও।
চীন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু ‘রেয়ার আর্থ’ উপাদানের রপ্তানি সীমিত করে এবং আমদানি শুল্ক ১২৫ শতাংশে উন্নীত করে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই শুল্কযুদ্ধ প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থবির করে দেয়। এতে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়ে, মুদ্রাস্ফীতি ও স্থবিরতার আশঙ্কা দেখা দেয় এবং কিছু ক্ষেত্রে চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটে।
তবে সর্বশেষ চুক্তির খবরে আর্থিক বাজারে ইতিবাচক সাড়া দেখা গেছে এবং ওয়াল স্ট্রিটের স্টক ফিউচার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে।
হংকংয়ের পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝিওয়েই ঝাং বলেন, ‘আমি ধারণা করেছিলাম শুল্ক হয়তো ৫০ শতাংশে নামবে। এরচেয়ে বড় ছাড় এসেছে, যা দ্বিপক্ষীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।’
ফেন্টানিল ও ভবিষ্যৎ আলোচনা
বৈঠকের পর মার্কিন কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর বিষয়ে ‘চুক্তি’ হয়েছে বলে জানান, আর চীনা প্রতিনিধিরা বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য’ হয়েছে এবং একটি নতুন অর্থনৈতিক সংলাপ প্ল্যাটফর্ম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আলোচনার শেষ হওয়ার আগেই বলেছিলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ ও গঠনমূলক পরিবেশে ‘সম্পূর্ণ রিসেট’ হয়েছে।
শুল্ক বৃদ্ধির অংশ হিসেবে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল প্রবেশকে ঘিরে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে আলাদা আলোচনাও হয়েছে বলে জানান গ্রিয়ার।
চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী হে লিফেংও বৈঠকের পরে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির’ কথা বলেন। জেনেভার লেকের ধারে জাতিসংঘে নিযুক্ত সুইস রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত ভিলায় এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।