ঢাকা, ১৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : উপসাগরীয় তিন দেশ সফরের প্রথম দিন মঙ্গলবার সৌদি আরবে যাবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখান থেকে তিনি কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সফরের মূল লক্ষ্য, উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে বড় বড় বাণিজ্যিক চুক্তি করা। পাশপাশি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সংকট নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
দ্বিতীয় মেয়াদে এটি ট্রাম্পের প্রথম আন্তর্জাতিক সফর। প্রেসিডেন্ট এ সফরের মাধ্যমে “ঐতিহাসিকভাবে” মধ্যপ্রাচ্যে ফিরছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। ৮ বছর আগে প্রথম মেয়াদেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম বিদেশ সফর ছিলো সৌদি আরবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এ সফরই বলে দিচ্ছে অঞ্চলটি এখন ভূরাজনৈতিক দিক থেকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক মুনফার বিষয়টিও সফরের পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখছে।
সফরের আগেই হোয়াইট হাউস ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি, গাজায় হামাসের কাছ থেকে মার্কিন-ইসরাইলি জিম্মির মুক্তি এবং ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনার মতো গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে হোয়াইট হাউস।
সর্বশেষ, ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হন ট্রাম্প।
যদিও এবার উপসাগরীয় তিন দেশ সফরে তার মূল ফোকাস থাকবে ব্যবসায়িক চুক্তিতেই। অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড্যানিয়েল বি. শ্যাপিরো বলেন, হোয়াইট হাউসের তথ্য অনুযায়ী “চুক্তিতেই” বেশি মনোযোগ দেবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
সৌদি আরব, কাতার ও আমিরাত এই সফরে ট্রাম্পকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানাবে বলে জানা গেছে। ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট জানান, মধ্যপ্রাচ্যে চরমপন্থার পরিবর্তে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ওপর জোর দেবেন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে উপসাগরীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মিত্রে পরিণত হয়েছে। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে কাতার। আবার ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনায় ভূমিকা রাখছে সৌদি আরব।
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্প অবশ্য মজা করে বলেন, “যুবরাজকে আমি বলব, এটিকে বাড়িয়ে এক ট্রিলিয়ন ডলার করুক। তারা তা করবে, কারণ আমরা তাদের অনেক ভালো কিছু দিয়েছি।”
সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এএফপিকে জানায়, ট্রাম্পের সফরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উন্নত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে চুক্তি করতে চায় তারা। এসব অস্ত্র ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যেন সরবরাহ করা হয়, এমন শর্তও রাখবে রিয়াদ।
এদিকে, সফরের আগেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে কাতারের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে বিলাসবহুল বোয়িং জেট উপহার দেওয়ার ঘোষণা ঘিরে। এই প্রসঙ্গে ট্রাম্প জানান, এটি একটি “অস্থায়ী উপহার” আর তিনি “এই ধরনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার লোক নন।”
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের সফর নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সৌদি নাগরিকরা। রাজধানী রিয়াদের বাসিন্দা ৪৭ বছর বয়সী খলিফা ওয়ানেইজি বলেন, “এই সফরের ফলে পুরো অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।” অন্যদিকে ৬২ বছর বয়সী হামাদ শাহরানি বলেন, “আমি এই সফর কিংবা এর ফলাফল নিয়ে আশাবাদী নই।
ইসরায়েলকে সৗদি আরবের স্বীকৃতি দেওয়ার মতো ইস্যু এই সফরে আলোচনায় আসার সম্ভাবনা কম। কারণ রিয়াদ বরাবরই বলে আসছে, স্বতন্ত্র ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে তেল আবিবের সঙ্গে কোনো স্বীকৃতিচুক্তি সম্ভব নয়।
এদিকে ট্রাম্পের সফরে ‘ইরান’ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, ওমানে সম্প্রতি শেষ হওয়া ইরান-যুক্তরাষ্ট্র চতুর্থ পরমাণু আলোচনা এ সফরের পটভূমিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।