ঢাকা, ২০ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যে চীন এর অর্থনীতি চাঙ্গা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মঙ্গলবার দুটি গুরুত্বপূর্ণ সুদের হার কমিয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে।
বেইজিং থেকে এএফপি জানিয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে এক ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। তবে গত সপ্তাহে দেশটি পারস্পরিক পণ্যের উপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য কমাতে সম্মত হয়েছে।
এই বাণিজ্য উত্তেজনার পাশাপাশি চীনের অর্থনীতি ইতোমধ্যেই একাধিক সমস্যার মুখোমুখি, যেমন দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ খরচ কমে যাওয়া, রিয়েল এস্টেট খাতে দীর্ঘস্থায়ী ঋণ সংকট এবং তরুণদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব হার।
মঙ্গলবার পিপলস ব্যাংক অব চায়না জানিয়েছে, এক বছরের ঋণ প্রাইম রেট (এলপিআর) ৩.১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩.০ শতাংশ করা হয়েছে। এ ঋণা ব্যবসা ও পরিবারের জন্য সবচেয়ে কম সুদের হার নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়।
একই সঙ্গে পাঁচ বছরের বন্ধকী ঋণের হার ৩.৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩.৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এর আগে গত অক্টোবরে এই হারগুলো সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছিল। এবার তা আরও এক ধাপ নিচে নামানো হলো।
ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের চীনা অর্থনীতিবিদ জিচুন হুয়াং এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই হার কমানোর ফলে পুরোনো ঋণের সুদ কমে যাবে, ফলে ঋণগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর চাপ কিছুটা কমবে। একই সঙ্গে নতুন ঋণের খরচও কমে যাবে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এই ছোট পরিমাণ হার কমানোর মাধ্যমে ঋণের চাহিদা বা সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে তেমন বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না।’
তার মতে, ‘আজকের হার কমানোই সম্ভবত বছরের শেষ সিদ্ধান্ত নয়। আরও ছাঁটাই হতে পারে।’
চীন ২০২৫ সালের জন্য প্রায় ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে, যা অনেক বিশ্লেষকের মতে বর্তমান চ্যালেঞ্জের মধ্যে বেশ কিছুটা উচ্চাভিলাষী।
তবে বছরের প্রথম তিন মাসে চীনের অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে ভালো পারফর্ম করেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ সময় ৫.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
জটিল পরিস্থিতি'র মধ্যে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে চীনের অর্থনীতি :
সোমবার প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা সত্ত্বেও গত মাসে চীনের কারখানাগুলোর উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত বেড়েছে।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে শিল্প উৎপাদন ৬.১ শতাংশ বেড়েছে, যা ব্লুমবার্গের পূর্বাভাস ৫.৭ শতাংশের চেয়ে বেশি। মার্চ মাসে এই হার ছিল ৭.৭ শতাংশ।
এনবিএস জানিয়েছে, অর্থনীতি এপ্রিল মাসেও চাপের মধ্যে স্থির ছিল। তবে তারা স্বীকার করেছে যে অর্থনীতির সামনে এখনো বহু বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
অন্যদিকে, খুচরা বিক্রয় যা অভ্যন্তরীণ চাহিদার অন্যতম সূচক এপ্রিল মাসে বার্ষিক ৫.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি ব্লুমবার্গের পূর্বাভাস ৫.৮ শতাংশের চেয়ে কম এবং মার্চ মাসের ৫.৯ শতাংশের চেয়ে ধীর।
তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে জরিপ করা ৭০টি শহরের মধ্যে ৬৭ টিতেই নতুন আবাসিক সম্পত্তির দাম কমেছে, যা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।