আসাদ-পরিবারের ছায়া কাটিয়ে সিরিয়ার ঘোড়দৌড়ে ফিরেছে প্রতিভার মর্যাদা

বাসস
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ১১:৩০

ঢাকা, ২১ মে, ২০২৫ (বাসস) : রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে একটি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জয়ের লক্ষ্যে সপ্তাহ ধরে কঠোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন জিয়াদ আবু আল-দাহাব। খেলাটি একসময় পুরোপুরি আসাদ পরিবার ও তাদের ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

২৫ বছর বয়সী রাইডার জিয়াদ বলেন, "আগে প্রতিযোগিতার ফলাফল আগে থেকেই ঠিক করা থাকত, জয় সবসময় সরকারপন্থীদের পক্ষে যেত।"

তিনি আরো বলেন, "আগে আমার সর্বোচ্চ স্বপ্ন ছিল তৃতীয় স্থান অর্জন, কিন্তু এখন প্রথম হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। আমার নতুন ঘোড়াটি ভালো করছে।"

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে, সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, তার আত্মীয় ও মিত্ররা ঘোড়দৌড় খেলাকে নিয়ন্ত্রণ করত। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আসাদের পতনের পর তা থেমে যায়।

অবশ্য নব্বইয়ের দশকে ঘোড়দৌড় খেলাটি বেশ জনপ্রিয়তা পায় বাশার আল-আসাদের বড় ভাই বাসেল আল-আসাদের হাত ধরেই। সেসময় তিনি তাদের পিতা হাফেজ আল-আসাদের উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ১৯৯৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হলে ২০০০ সালে বাশার রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন।

বাসেল দেশ-বিদেশের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন এবং নিজেকে সিরিয়ার ‘প্রথম রাইডার’ হিসেবে উপস্থাপন করতেন। তার প্রভাবেই এই খেলাটি সিরিয়ার অভিজাতদের মর্যাদার প্রতীক হয়ে ওঠে।

আবু আল-দাহাব বলেন, "আসাদ পরিবারের ঘনিষ্ঠরা ইউরোপীয় ঘোড়া ব্যবহার করতেন, যেগুলো দেশীয় ঘোড়ার চেয়ে অনেক উন্নতজাতের ছিল। সেজন্য শাসক পরিবারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ছিল অসম্ভব।"

দামেস্কের কাছে ডিমাস অশ্বারোহী ক্লাবের বাইরে এখনো বাসেল আল-আসাদের স্ট্যাচু চোখে পড়বে। যদিও সেটির মুখ ঢেকে দেওয়া হয়েছে নতুন সিরীয় পতাকায়।

আসাদ পরিবারের নিয়ন্ত্রণে রাখতে খেলাটি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত করা হয়, যার মধ্যে ছিল মাহের আল-আসাদের মেয়ে শাম। তিনি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতেও অংশ নিতেন এবং বেশ কয়েকবার শীর্ষস্থান অধিকার করেছিলেন।

তবে তার সময়ে মিডিয়াতে শামের বিষয়ে অতিরিক্ত প্রচার বহু মানুষের কাছে দৃষ্টিকটু মনে হত। এটিকে অনেকেই সরকারপন্থী প্রোপাগান্ডা হিসেবে দেখতেন।

এই কারণে অনেকেই খেলাটি থেকে সরে থাকতেন। ২৬ বছর বয়সী মুনানা শাকের বলেন, "আমার বাবা আমাকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেননি, কারণ তিনি আসাদ পরিবারের ভয় করতেন।"

তিনি আরো বলেন, "বাবা বলতেন, শাসক পরিবারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা অসম্ভব। আমি যাতে আসাদ পরিবারের কারো সঙ্গে যুক্ত না হই, সে জন্যও সবসময় সতর্ক করতেন।"

শাকের জানান, বাবা একবার আমাকে আদনান কাসারের গল্প বলেছিলেন। এই রাইডার বাসেলকে হারানোর পর ১৯৯৩ সালে গ্রেপ্তার হন। তাকে বাসেলকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আটক করা হয়।

তবে অনেকের ধারণা, ক্রীড়াক্ষেত্রে তার সাফল্যই ছিল আটকের মূল কারণ। ২১ বছর পর প্রেসিডেনশিয়াল ক্ষমা পেয়ে তিনি কারামুক্ত হন।

তিনি আরো বলেন, " দীর্ঘদিন খেলাটি থেকে আমি দূরে ছিলাম, তবে এখন সময় এসেছে শক্তভাবে ফিরে আসার। আমি শাকের পরিবার থেকে এসেছি, আসাদ পরিবার থেকে নয়।"

৪৮ বছর বয়সী শাদি আবু আল-দাহাব বর্তমানে প্রায় ২৪০টি ঘোড়ার দেখভাল করেন, এর মধ্যে আসাদ পরিবারের কিছু পুরনো ইউরোপীয় ঘোড়াও রয়েছে।

তিনি জানান, "আসাদ পরিবারের জন্য ৪০টির মতো ঘোড়া আলাদা করে রাখা ছিল। অন্য কেউ সেগুলোকে ছুঁতেও পারত না।" তবে, এখন নতুন মুখ ও আগ্রহী প্রতিযোগীদের দেখতে পাচ্ছেন।

শাদি আবু আল-দাহাব বলেন, "প্রতিদিন আমরা নতুন দক্ষতা আবিষ্কার করছি, এখন অনেক রাইডার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ও পদক জিততে চায়।"

রাইডার ও প্রশিক্ষক সালাহ আল-আহমদের (৫২) চোখ খুশিতে জ্বলজ্বল করে ওঠে, যখন তার ছেলে ‘টপসি’ নামের ঘোড়ার পিঠে চড়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়ায়। কারণ, ওই ঘোড়াটিই একসময় শাম আল-আসাদ চালাতেন।

আহমদ বলেন, "ছেলেটা একসময় শুধু ঘোড়াটিকে ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখত। আর এখন এই নতুন যুগে, সেই ঘোড়াটিই তার হাতে। ইতোমধ্যে সে দুটি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীও হয়েছে।" "এটা যেন স্বপ্নপূরণ" বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
রংপুরে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে জমির ফসল, দুশ্চিন্তায় কৃষক 
বাংলাদেশ সিরিজে পাকিস্তান দলে বিশ্ব রেকর্ড গড়া ফারহান
মাগুরার শিশু আছিয়া হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে
পাকিস্তানে স্কুল বাসে বোমা হামলায় নিহত ৬
সাংবাদিকদের প্লট বরাদ্দে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা বাতিল
আমরা একটি ‘ইনভেস্টর-ফ্রেন্ডলি বাংলাদেশ’ দেখতে চাই: সভাপতি ঢাকা চেম্বার
সিটি ছাড়ার হুমকি গার্দিওলার
বাঙালির লড়াকু চেতনা ও সংগ্রামী মনোভাব জাগরণে কবি নজরুল ছিলেন প্রতিভু : ভিসি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
বগুড়ায় অসুস্থ ভুবন চিল উদ্ধার
ভোলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত ১ লাখ ২ হাজার ৭ শ' ৬৯ টি গরু
১০