ঢাকা, ২২ মে, ২০২৫ (বাসস): গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডে হামলা বন্ধ এবং আরও বেশি ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরাইলকে চাপ দিতে ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার মাঝেও মঙ্গলবার নতুন হামলায় বহু মানুষের প্রাণহানির খবর দিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।
ইসরাইল জানায়, মঙ্গলবার তাদের সীমান্ত দিয়ে ৯৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, এসব ত্রাণ বিভিন্ন জায়গায় আটকে রয়েছে।
গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, গত ২ মার্চ থেকে ইসরাইল সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের পর প্রথমবারের মতো সোমবার জাতিসংঘকে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। এই অবরোধে গাজায় ভয়াবহ খাদ্য ও ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে।
মানবিক এই সংকটে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানায়, তারা ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সহযোগিতা চুক্তি পর্যালোচনার উদ্যোগ নিচ্ছে।
ইইউ পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাস বলেন, ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের ‘মজবুত সংখ্যাগরিষ্ঠ’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন। 'তারা দেখছেন গাজায় পরিস্থিতি সহ্যসীমার বাইরে চলে গেছে... আমাদের লক্ষ্য হলো ত্রাণ সহায়তা কার্যকরভাবে সচল করা।'
সুইডেন ঘোষণা দেয়, তারা ইসরাইলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে ইইউকে চাপ দেবে।
ব্রিটেন ইসরাইলের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে, তেলআবিবে রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে এবং দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে—যা যুদ্ধ শুরুর পর তাদের সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি পার্লামেন্টে বলেন, 'ত্রাণ আটকে রাখা, যুদ্ধ সম্প্রসারণ, বন্ধু ও অংশীদারদের উদ্বেগ উপেক্ষা—এসব অকল্পনীয় এবং বন্ধ হওয়া উচিত।'
তবে ইসরাইল এসব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোরস্টেইন বলেন, 'এই পদক্ষেপ ইসরাইল যে জটিল বাস্তবতার মুখোমুখি, তা পুরোপুরি অজ্ঞতা থেকে এসেছে।'
ব্রিটেনের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, 'বাইরের চাপ ইসরাইলকে তার অস্তিত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার পথ থেকে সরাতে পারবে না।'
‘আটা, শিশু খাদ্য, ওষুধ’
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা কোগাট জানায়, 'জাতিসংঘের ৯৩টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। এসব ট্রাকে রুটির জন্য ময়দা, শিশু খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ ছিল।'
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক জানান, কয়েকটি ট্রাক ঢুকলেও প্রক্রিয়ায় জটিলতা রয়ে গেছে। 'আজ আমাদের একটি দল পুষ্টি সহায়তা সংগ্রহে কয়েক ঘণ্টা ধরে ইসরাইলের অনুমতির অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু তারা সেই সহায়তা আমাদের গুদামে আনতে পারেনি।'
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, সোমবার যেসব ৯টি ট্রাক প্রবেশ করেছে, তা 'জরুরি প্রয়োজনের তুলনায় একফোঁটা।'
তিনি বিবিসিকে বলেন, দ্রুত ত্রাণ না পৌঁছলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ হাজার শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে।'
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটিকে বলেন, 'সরবরাহের পরিমাণ পর্যাপ্ত নয়,' তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, “আগামী দিন ও সপ্তাহে সরবরাহ বাড়বে।'
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইল হামলার জেরে এই যুদ্ধ শুরু হয়।
উদ্ধারকর্মী মাহমুদ বাসসাল বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত হামলায় '৪৪ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।' বহু আহত হয়েছে।
নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে একটি পেট্রোল পাম্পে হামলায় ১৫ জন এবং গাজা শহরের একটি স্কুলে হামলায় আরও ৮ জন নিহত হয়।
সেনাবাহিনী দাবি করে, তারা স্কুলের ভেতরে হামাসের একটি ‘কমান্ড সেন্টার’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। অন্য হামলাগুলোর বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
পেট্রোল পাম্পে নিহতদের দেহাংশ ব্যাগে ভরে একটি গাড়িতে তুলতে গিয়ে মাহমুদ আল-লুহ বলেন, 'এরা সব সাধারণ মানুষ, ঘুমন্ত শিশু। তাদের অপরাধ কী ছিল?'
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ১০০টির বেশি ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু’তে হামলা চালানো হয়েছে।