ঢাকা, ২২ মে, ২০২৫ (বাসস) : প্যারিসে মার্কিন রিয়েলিটি টিভি তারকা কিম কারদাশিয়ানকে ২০১৬ সালে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাড়ে তিন কোটি ডলারের অলংকার লুটের মামলায় সন্দেহভাজন মূল হোতা আমর আইত খেদাশের ১০ বছরের কারাদণ্ড চেয়েছেন ফরাসি সরকারি কৌঁসুলিরা। কারদাশিয়ানকে বেঁধে রাখার কথা তিনি স্বীকার করলেও পুরো ঘটনার হোতা হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, বুধবার (স্থানীয় সময়) আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, অভিযুক্ত ১০ জনের সবাই অপরাধী, যদিও এদের মধ্যে ৮ জন নির্দোষ দাবি করেছেন।
২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর ভোরে প্যারিস ফ্যাশন সপ্তাহ চলাকালে একটি হোটেলের কক্ষে কারদাশিয়ানকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুখে টেপ সেঁটে এবং হাত বেঁধে তার অলংকার লুট করে মুখোশধারীরা।
আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে গত সপ্তাহে কারদাশিয়ান জানান, তিনি মনে করেছিলেন ওই রাতে তাঁকে হত্যা করা হবে। তবে একইসঙ্গে তিনি এ ঘটনাকে ‘ভয়াবহ মানসিক আঘাত’ বলে বর্ণনা করলেও অভিযুক্তদের ক্ষমা করে দেওয়ার কথাও বলেন।
অভিযুক্তদের অনেকেই এখন ষাট কিংবা সত্তর বছরের বৃদ্ধ। ফরাসি মিডিয়ায় তাদের ‘গ্র্যান্ডপা রবার্স’ বা ‘বুইড়া ডাকাত’ নামে অভিহিত করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনে-দোমিনিক মারভিল বলেন, 'তারা মুখে মুখোশ ও হাতে গ্লাভস পরে কিম কারদাশিয়ানকে বেঁধে ফেলে ও আটকে রেখে ঢাকাতি করতেই গিয়েছিল। কিমের জন্য কিংবা হোটেল রিসেপশনিস্টের জন্য কোনো দয়া-মায়া ছিল না।'
তিনি বলেন, খেদাশে এই ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিলেন, অন্যদের জড়ো করেছিলেন, এমনকি চুরি করা অলংকার বিক্রি করতে বেলজিয়াম পর্যন্ত গিয়েছিলেন।
৬৯ বছর বয়সী খেদাশে কিমকে বেঁধে রাখার কথা স্বীকার করেছেন, তবে দাবি করেছেন যে ডাকাতির মূল হোতা তিনি ছিলেন না।
বুড়ো অভিযুক্তরা
হামলাকারীরা কিম কারদাশিয়ানের কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে তাকে জিম্মি করে এবং মুখে টেপ সেঁটে, হাত-পা বেঁধে প্রায় এক কোটি ডলারের অলংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। লুট হওয়া ওই মূল্যবান সামগ্রীর বেশিরভাগই এখনও উদ্ধার হয়নি।
লুট হওয়া সামগ্রীর মধ্যে ছিল একটি হীরার আংটি, যেটি কারদাশিয়ানকে তার তৎকালীন স্বামী, র্যাপার কানিয়ে ওয়েস্ট উপহার দিয়েছিলেন। যার মূল্য ধরা হয় ৩.৫ মিলিয়ন ইউরো বা ৩.৯ মিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে কোনো অভিযুক্তই কারাগারে নেই। শুক্রবার রায় ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযুক্তরা চাইছেন যেন আবার কারাগারে যেতে না হয়।
ডাকাতি ও জিম্মি করার অভিযোগে অভিযুক্তদের কেউ কেউ ৩০ বছর পর্যন্ত সাজা পেতে পারেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ এমন দীর্ঘ সাজা চাইবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে গুরুতর অপরাধের বিবেচনায় আদালতে তাৎক্ষণিকভাবে কারো কারো কারাদণ্ড কার্যকর করার আহ্বান জানানো হতে পারে।
এদিকে, আদালতকে বিবেচনায় নিতে হবে যে, অভিযুক্তদের অনেকে বয়সজনিত রোগে ভুগছেন। যেমন—৭১ বছর বয়সী ইউনিস আব্বাস, যিনি এই ডাকাতি নিয়ে একটি বিতর্কিত বই লিখেছেন এবং বিচারপূর্ব অবস্থায় কারাগারে থাকাকালীন হার্ট সার্জারি করান। তিনি বর্তমানে পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত।
অন্যদিকে খেদাশ সম্পূর্ণ বধির ও প্রায় নিশ্চুপ। এমন একটি শারীরিক অবস্থায় আছেন, যার ফলে প্রতি ঘণ্টায় একবার করে টয়লেটে যেতে হয় এবং তিনি ধীরে ধীরে লাঠির ভর দিয়ে হাঁটেন।