দক্ষিণ কোরিয়া নির্বাচন : এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির নেতৃত্ব কে দেবেন?

বাসস
প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ১৯:২৫

ঢাকা, ২২ মে, ২০২৫ (বাসস) : দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো নির্বাচিত নেতা নেই—ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে দরকষাকষির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কার্যকর আলোচকও অনুপস্থিত।

সিউল থেকে এএফপি জানায়, এই প্রেক্ষাপটে আগামী ৩ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ। নতুন নেতা হবেন এমন একজন যাকে ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে দেশকে দূরে রাখতে হবে, আবার পারমাণবিক অস্ত্রধারী উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র ও প্রতিবেশী বেইজিং—দুজনকেই সন্তুষ্ট রাখতে হবে।

প্রার্থী কারা?

দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লড়ছেন এবার: সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা লি জে-মিয়ং এবং রক্ষণশীল প্রার্থী কিম মুন-সু।

ছেলেবেলায় কারখানায় কাজ করা লি এখন মানবাধিকার আইনজীবী। ‘দক্ষিণ কোরিয়ার বার্নি স্যান্ডার্স’ নামে পরিচিত এই নেতা মৌলিক আয়ের পক্ষে কথা বলেন এবং অর্থনীতিকে চাঙা করতে সরাসরি নগদ সহায়তার কথা বলেন।

তবে একাধিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যদিও একটি মামলার পুনর্বিচার সম্প্রতি স্থগিত হওয়ায় নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন।

অন্যদিকে কিম এক সময় সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে শ্রমিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন, কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রক্ষণশীল আদর্শে ঝুঁকে পড়েন। গ্যালাপের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, তিনি লির থেকে ২২ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছেন।

অর্থনীতি নিয়ে প্রতিশ্রুতি কী?

উভয় প্রার্থী অর্থনীতিকেই প্রথম অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, তবে তাদের কৌশলে পার্থক্য স্পষ্ট।

লি'র প্রধান প্রতিশ্রুতি: 'দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করা।'

বিশ্লেষকরা বলছেন, তার বামপন্থী ডেমোক্রেটিক পার্টি এখন মধ্যপন্থার দিকে এগোচ্ছে।

সোগাং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিম ইয়ং-জিন বলেন, ‘'আগে দলটি শ্রমিক অধিকার ও সম্পদ বণ্টনের ওপর জোর দিত, এখন তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে ঝুঁকছে।’

অন্যদিকে, কিম মুন-সু’র পিপল পাওয়ার পার্টি জাতীয় নীতির চেয়ে করপোরেট নীতিতে জোর দেয়। কিম নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন 'চাকরি ও অর্থনীতির প্রেসিডেন্ট' হিসেবে। তিনি বারবার বলেছেন, 'অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে মূল চাবিকাঠি হলো নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা'—এটি এক সময়ের শ্রমিক নেতার কাছ থেকে আসা এক ধরনের পরিহাস।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন নিয়ে অবস্থান?

দক্ষিণ কোরিয়ার ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের সঙ্গে সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

লি জে-মিয়ং বলছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনায় তাড়াহুড়ো করবেন না। বরং জাতীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দেবেন।

অন্যদিকে, কিম মুন-সু বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দাবি করেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ ও বিশ্বাসভাজন সম্পর্ক রয়েছে এবং নির্বাচিত হলে 'তাৎক্ষণিকভাবে' শীর্ষ বৈঠকে বসবেন।

বিড়ম্বনায় পররাষ্ট্রনীতি

লি জে-মিয়ং ২০২৪ সালে তাইওয়ান নিয়ে বলেছিলেন, ‘তা আমাদের বিষয় নয়’—যা তার প্রতিদ্বন্দ্বী কিমের মতে ‘চিন্তার বিষয়’।

ইয়ংইন বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক পার্ক সুং-চান বলেন, 'এই দুই প্রার্থীর কেউই বৈদেশিক নীতিতে নতুন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি আনছেন না।'

তিনি যোগ করেন, 'আমাদের অতীতের শক্তিশালী পক্ষের সঙ্গে পক্ষ নেওয়ার কৌশল এখন আর কাজ করছে না।'

ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা

দক্ষিণ কোরিয়া এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গাড়ি রপ্তানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক পার্ক সাং-বিয়ং বলেন, আমদানিশুল্ক নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া খুবই
সংবেদনশীল।' বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তা দল একটি বাণিজ্য প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করতে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন, কিন্তু নির্বাচিত নেতা না থাকায় আলোচনা জটিল হয়ে পড়েছে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধি আগেই হুমকির মুখে, যদি ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের ব্যাপারে সক্রিয় প্রতিক্রিয়া না দেওয়া হয়, দক্ষিণ কোরিয়া গভীর সংকটে পড়বে।’

কে জিতবে, তা গুরুত্বপূর্ণ?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থায় যেই জিতুক না কেন, একজন নির্বাচিত নেতা থাকাটাই সবচেয়ে জরুরি।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়লের সামরিক আইন জারির ব্যর্থ চেষ্টা ও অভিশংসনের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় দুজন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করেছেন, একজন ছিলেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে এটি তৃতীয় ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের সময়কাল।

সেজং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিম ডে-জং বলেন, 'একটি দেশের প্রয়োজন একজন সিইও—প্রেসিডেন্ট। এখন দক্ষিণ কোরিয়া চরমভাবে এই শূন্যতায় ভুগছে।'

তিনি বলেন, ‘সাধারণত একজন প্রেসিডেন্ট দেশের ভবিষ্যতের ৯০ শতাংশ নির্ধারণ করেন।’

ভাইস ট্রেড মিনিস্টার পার্ক সুং-টেক বলেন, 'নির্বাচনের আগে পর্যন্ত কিছুই মীমাংসা করা সম্ভব নয়—এটা তাত্ত্বিকভাবেই অসম্ভব।'

অর্থমন্ত্রী না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল। অধ্যাপক কিম বলেন, ‘এটা এক বড় ধরনের সংকট—নেতৃত্বহীনতার যে বাস্তব সমস্যা তা এখন দেশকে আচ্ছন্ন করছে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ইভটিজিং ও কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে শিক্ষার্থী-পুলিশ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান: রিলিক সিটির ২২ সাইনবোর্ড জব্দ, ১০ লাখ টাকা জরিমানা
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সেনানিবাসে আশ্রয় গ্রহণকারীদের প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর অবস্থান
বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে জেদ্দা চেম্বার প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করছে সরকার : সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা
রংপুরে হত্যাচেষ্টা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার
পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বে রুহুল আলম সিদ্দিকী
মানবতাবিরোধী অপরাধ: গ্রেফতার করতে পারবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা- প্রসিকিউটর
বিদ্যুতের স্মার্ট প্রিপেইড মিটার ক্রয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের অভিযান
দেশীয় পশু দিয়েই বরিশালের কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব
১০