ঢাকা, ২৫ মে, ২০২৫ (বাসস) : সিরিয়ায় নতুন প্রশাসন শনিবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যাপকভাবে পুনর্গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, যাতে সীমান্ত দিয়ে মাদক ও মানবপাচার রোধসহ একাধিক সংস্কার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রায় ১৪ বছরব্যাপী গৃহযুদ্ধের পর পুনর্গঠন ও সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
দামেস্ক থেকে এএফপি জানায়, দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার পর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারকে সিরিয়ার নতুন সরকার ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করছে। এই পদক্ষেপটি শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি মাসে উপসাগরীয় সফরে ঘোষণা দেন। ওই সফরেই সিরিয়ার জিহাদিবাদী নেতা থেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টে পরিণত আহমেদ আল-শারার সঙ্গে করমর্দন করেন ট্রাম্প।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নূরুদ্দিন আল-বাবা বলেন, এ পুনর্গঠনের লক্ষ্য হলো ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড মেনে চলা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আধুনিক একটি বেসামরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠন।’ এতে নাগরিক অভিযোগ গ্রহণে একটি আলাদা বিভাগ, পুলিশ ও সাধারণ নিরাপত্তা বিভাগকে একীভূত করে ‘আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কমান্ড’ গঠনের বিষয় রয়েছে।
সীমান্ত নিরাপত্তা সংস্থা স্থাপন করা হবে, যারা স্থল ও সমুদ্রসীমান্তে অবৈধ কার্যক্রম—বিশেষত মাদক ও মানবপাচার রোধে কাজ করবে। সিরিয়া বর্তমানে অবৈধ উত্তেজক মাদক ক্যাপটাগনের অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক হওয়ায় মাদকবিরোধী বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যকারিতা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সরকারি স্থাপনা ও বিদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি নিরাপত্তা বিভাগ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত পর্যটনখাত পুনরায় চালু করতে একটি পর্যটন পুলিশ বিভাগ চালু করা হবে।
‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারকে ‘মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকট লাঘবে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওনজু কেচেলি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।'
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নও চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
শনিবার তৃতীয়বারের মতো তুরস্ক সফরে গিয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট শরার প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে ‘সাধারণ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট’ বিষয়ে বৈঠক করেন। আঙ্কারা বর্তমানে সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের অন্যতম প্রধান সমর্থক এবং দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিয়ন্ত্রিত কুর্দি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে।
একইদিনে সিরীয় সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সন্দেহভাজন সদস্যদের পরিবারদের আবাসস্থল নবৎখ্যাত আল-হোল ক্যাম্প পরিদর্শন করে।
ইস্তাম্বুলে শরার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত টম ব্যারাকের সঙ্গেও বৈঠক করেন, যিনি একইসঙ্গে সিরিয়াবিষয়ক মার্কিন দূত।
তিনি বলেন, 'সিরিয়ার নতুন সরকারকে একটি ‘সুযোগ দেওয়া’ ট্রাম্পের উদ্দেশ্য। আমাদের মূল লক্ষ্য আইএসকে স্থায়ীভাবে পরাজিত করা।'
নিষেধাজ্ঞার ইতিহাস ও শর্ত যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করে ১৯৭৯ সালে, বাশার আল-আসাদের পিতা হাফেজ আল-আসাদের শাসনামলে। ২০১১ সালে বিক্ষোভ দমন ও গৃহযুদ্ধ শুরুর পর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়।
বর্তমান প্রশাসন পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়, যদিও সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ইসলামপন্থী অতীত নিয়ে কিছু দেশ এখনও সংশয় প্রকাশ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ জানায়, নতুন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে এই শর্তে যে, সিরিয়া কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেবে না এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
একই সঙ্গে ১৮০ দিনের জন্য ‘সিজার অ্যাক্ট’- এর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, যাতে বিদেশি বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। এই আইনটি ২০২০ সালে পাশ হয় এবং সাবেক সরকারকে সহায়তা করা সব প্রতিষ্ঠানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, এই ছাড়পত্র ‘বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি ও স্যানিটেশনসহ জরুরি সেবা প্রদানে এবং মানবিক সহায়তা কার্যকর করতে সহায়ক হবে।’
তিনি আরও বলেন, 'এই উদ্যোগের লক্ষ্য সিরিয়ায় পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেওয়া।'
১৪ বছরের যুদ্ধে সিরিয়ায় অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে এবং দেশের অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, আসাদ সরকারের আমলে জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থার নজরদারির আওতায় ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে এখনো সময় লাগবে, কারণ অনেক নিষেধাজ্ঞা কংগ্রেসে অনুমোদিত আইন হিসেবে বলবৎ রয়েছে। একইসঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে সিরিয়াকে।