ঢাকা, ২৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে নিখোঁজ মার্কিন নাগরিকদের খুঁজে বের করতে এবং ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করবে সিরীয় সরকার। রোববার এক মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও অচলাবস্থা নিরসনে এটি আরেকটি শুভ লক্ষণ।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কূটনৈতিক স্থবিরতার অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের একদিন পর এই ঘোষণা আসে। 

দামেস্ক থেকে এএফপি এই খবর জানায়।

ডিসেম্বরে ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন সারাদেশে এক অভিযানে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করার পর থেকে সম্পর্ক ক্রমাগত উন্নত হয়েছে।

সিরিয়ার জন্য মার্কিন বিশেষ দূত টম ব্যারাক এক্স-এ লিখেছেন, ‘নতুন সিরিয়ার সরকার মার্কিন নাগরিকদের বা তাদের দেহাবশেষ খুঁজে বের করতে এবং ফেরত দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করতে সম্মত হয়েছে।’ 

এটিকে ‘দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি আরো বলেছেন, ‘অস্টিন টাইস, মাজদ কামালমাজ এবং কায়লা মুলারের পরিবারগুলোকে অবশ্যই ‘নিষ্ক্রিয়’ করতে হবে’। তিনি ২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের সময় নিখোঁজ বা নিহত আমেরিকান নাগরিকদের কথা উল্লেখ করে একথা বলেছেন।

টাইস ২০১২ সালের আগস্টে একটি চেকপয়েন্টে আটক হওয়ার সময় এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের জন্য একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছিলেন।

সিরিয়ান-আমেরিকান মনোচিকিৎসক কামালমাজ ২০১৭ সালে আসাদ সরকারের অধীনে আটক থাকার পর মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মুলার ছিলেন একজন সাহায্যকর্মী। তারা ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইসলামিক স্টেট গ্রুপ কর্তৃক অপহৃত হয়েছিলেন। তারা তার মৃত্যুর ঘোষণা দিয়ে বলেছিল, তিনি জর্ডানের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। যা মার্কিন কর্তৃপক্ষ বতর্কিত দাবি করছে।

তুরস্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালনকারী ব্যারাক বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, মার্কিন নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা-অথবা তাদের দেহাবশেষকে মর্যাদার সাথে সম্মান জানানো সর্বত্র একটি প্রধান অগ্রাধিকার।’
 
তিনি আরো বলেছেন, ‘নতুন সিরিয়ার সরকার এই প্রতিশ্রুতিতে আমাদের সহায়তা করবে।’
 
- আইএস কর্তৃক নিহত আমেরিকানরা -

দুই দেশের মধ্যে আলোচনা সম্পর্কে অবগত সিরিয়ান একটি সূত্র এএফপি’কে জানিয়েছে ওয়াশিংটনের তালিকায় আরো ১১ জনের নাম ছিল। যাদের সবাই সিরিয়ান-আমেরিকান।

সূত্রটি আরো জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের অনুরোধে, আইএস-এর হাতে নিহত আমেরিকান জিম্মিদের দেহাবশেষের জন্য একটি অনুসন্ধান অভিযান এই মাসে কাতারি প্রতিনিধিদল শুরু করেছে।

ব্রিটেন-ভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এদিকে বলেছে, ‘কাতারি প্রতিনিধিদল এখনো আলেপ্পো প্রদেশে আইএস কর্তৃক নিহত আমেরিকান নাগরিকদের মৃতদেহের জন্য অনুসন্ধান করছে।’

জেমস ফোলি এবং স্টিফেন সটলফ, দুই মার্কিন সাংবাদিককে ২০১৪ সালে ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা ক্যামেরার সামনে ব্রিটিশ ভাষায় কথা বলাতে এক জঙ্গি তাদের শিরচ্ছেদ করেছিল।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নেওয়ার সাথে সাথে সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষ তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রদবদল করেছে যাতে তারা পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য সীমান্ত পারাপারের মাদক এবং মানুষ পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়ার ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে পুনর্গঠন প্রচেষ্টার পথ প্রশস্ত হয়েছে, যেখানে কর্তৃপক্ষ পুনর্নির্মাণের বিশাল ব্যয় বহন করতে বিদেশী সহায়তার উপর নির্ভর করছে।

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, সিরিয়া সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল না তৈরি করে এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এই শর্তে নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ট্রাম্প এই মাসের শুরুতে সৌদি আরব সফরের সময় সিরিয়ার জিহাদি থেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সাথে করমর্দন করেছিলেন।

- তুরস্কে শারা -

আসাদের পতনের পর শারা’র তৃতীয় তুরস্ক সফরের সময় ইস্তাম্বুলে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা’র সাথে দেখা করার একদিন পর ব্যারাকের এই বিবৃতি এসেছে।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তর রোববার জানিয়েছে, শারা এবং তার সঙ্গী প্রতিনিধিদল আঙ্কারায় তুর্কি কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন। এদের মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট সেভদেত ইলমাজ এবং আর্থিক কর্মকর্তারাও রয়েছেন।

ইলমাজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, তারা ‘নতুন সময়ে আমাদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো গভীর করার’ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, তার দেশ ‘সিরিয়ার জনগণকে তাদের শান্তি, উন্নয়ন এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সব ধরণের সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।’

সিরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার ১২টি প্রদেশে নতুন নিরাপত্তা প্রধান নিয়োগ করেছে।