ঢাকা, ২৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কিয়েভ এবং মস্কোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে রোববার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাতভর রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনে কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছে।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবাগুলো এই হামলাকে ‘সন্ত্রাসের’ রাত হিসেবে বর্ণনা করেছে। টানা দ্বিতীয় রাতে রাশিয়া ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কোর সর্বাত্মক অভিযান শুরু করার পর থেকে উভয় দেশ তাদের বৃহত্তম বন্দি বিনিময় সম্পন্ন করার পরেও এই হামলাগুলো করা হয়েছে। গতকাল রোববার উভয় পক্ষের ১ হাজার সৈন্য এবং বেসামরিক বন্দি বিনিময় করা হয়েছে।
কিয়েভ থেকে এএফপি এই খবর জানায়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সর্বশেষ রুশ হামলায় নিহতদের মধ্যে আট ও ১২ বছর বয়সী দুই শিশু এবং ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর রয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জাইতোমির অঞ্চলে এই বর্বরত হামলা চালানো হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, ‘রাশিয়ান নেতৃত্বের ওপর সত্যিকার অর্থে তীব্র চাপ প্রয়োগ না করলে এই বর্বরতা বন্ধ করা যাবে না।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমেরিকার নীরবতা, বিশ্বের অন্যদের নীরবতা কেবল পুতিনকেই উৎসাহিত করে।’ ‘নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে অবশ্যই এই বর্বরোচিত হামলা বন্ধ হতে পারে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস এই যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য রাশিয়ার ওপর ‘সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক চাপ’ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, ‘গত রাতের হামলা আবারো প্রমাণ করে রাশিয়া আরো বেশি দুর্ভোগ এবং ইউক্রেনের ধ্বংসের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। নিরীহ ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিশুদের আহত ও নিহত হতে দেখার দৃশ্য অত্যন্ত ভয়াবহ।’
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মতে, শুক্রবার থেকে শনিবার রাতভর রাশিয়া ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২৫০টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। হামলায় ১৫ জন আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রোববার জানিয়েছে, তারা রাতারাতি মোট ৪৫টি রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২৬৬টি আক্রমণাত্মক ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
রাশিয়া ইতোমধ্যে জানিয়েছে, তারা ১১০টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
ইউক্রেনের পশ্চিম খমেলনিৎস্কি অঞ্চলে চারজন, কিয়েভ অঞ্চলে চারজন এবং দক্ষিণে মাইকোলাইভে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জরুরি পরিষেবাগুলো জানিয়েছে, ‘রাতের হামলায়’ কিয়েভ অঞ্চলে তিন শিশুসহ ১৬ জন আহত হয়েছে।
কিয়েভের দক্ষিণ-পশ্চিমে মাখালিভকা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত মহিলা তেতিয়ানা ইয়ানকোভস্কা (৬৫) এএফপি’কে বলেছেন ‘আমরা দেখেছি পুরো রাস্তা আগুনে জ্বলছে।’
হামলায় বেঁচে যাওয়া আরেক অবসরপ্রাপ্ত ওলেসকান্দ্র (৬৪) বলেছেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় তার কোনো আগ্রহ এবং বিশ্বাস নেই।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের আলোচনার দরকার নেই বরং রুশদের থামানোর জন্য প্রচুর অস্ত্রের প্রয়োজন। কারণ রাশিয়া কেবল শক্তি প্রয়োগ করাই বোঝে, অন্য কিছু নয়।’
- প্রধান বন্দী বিনিময় -
রাশিয়া রোববার জানিয়েছে, তারা কিয়েভে আটক একই সংখ্যক রুশ সৈন্যের পরিবর্তে আরো ৩০৩ জন ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দী বিনিময় করেছে। গত ১৬ মে ইস্তাম্বুলে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার সময় সম্মত হওয়া বন্দী বিনিময়ের এটি ছিল শেষ ধাপ।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়া এবং ইউক্রেন তিন দিনেরও বেশি সময় ধরে ‘১ হাজার জনের বিনিময়ে ১ হাজার জন বিনিময় সম্পন্ন করেছে।’
জেলেনস্কি নিশ্চিত করেছেন, বিনিময় সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার উভয় পক্ষই প্রথম পর্যায়ে ৩৯০ জন এবং শনিবার দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩০৭ জনকে গ্রহণ করেছে।
রাশিয়া ইঙ্গিত দিয়েছে, বিনিময়ের পরে তারা ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতির জন্য তাদের শর্তাবলী পাঠাবে। তবে শর্তগুলো কী হবে তা বলা হয়নি।
- কূটনৈতিক চাপ -
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার দুই দেশকে এই বিনিময়ের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তিনি তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘এর ফলে বড় কিছু হতে পারে।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সংঘাতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য ট্রাম্পের প্রচেষ্টা এখনো পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে, যদিও তিনি দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
এএফপি’র এক রিপোর্টার উত্তর চেরনিগিভ অঞ্চলের একটি হাসপাতালে কিছু সাবেক বন্দী ইউক্রেনীয় সৈন্যকে আসতে দেখেছেন। তারা ক্ষীণ কিন্তু হাস্যোজ্জ্বল এবং বাইরে অপেক্ষারত জনতার দিকে হাত নাড়ছেন।
তিন বছর বন্দী থাকার পর সৈনিক কনস্টান্টিন স্টেবলভ (৩১) শুক্রবার ইউক্রেনের মাটিতে ফিরে আসার সময় এএফপি’কে বলেছেন ‘এটি কেবল পাগলামী। পাগলামী অনুভূতি’।
পূর্বে বন্দী থাকা একজন সৈন্য, ৫৮ বছর বয়সী ভিক্টর সিভাক, এএফপি’কে বলেছেন, তার আবেগঘন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রকাশ করা কঠিন।
ইউক্রেনের বন্দর শহর মারিউপোলে বন্দী হয়ে তাকে ৩৭ মাস ১২ দিন ধরে আটকে রাখা হয়েছিল।
তিনি বলেছেন, ‘এটি বর্ণনা করা অসম্ভব। আমি এটি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। তবে দেশের মাটিতে ফিরে আসার মজাই আলাদা।’