ঢাকা, ২৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বানানোর হুমকির জবাবে কূটনৈতিক বার্তা দিতে রাজা তৃতীয় চার্লস সোমবার কানাডার পার্লামেন্ট উদ্বোধনের জন্য অটোয়ায় অবতরণ করতে যাচ্ছেন। এই ঐতিহাসিক সফরে তিনি নতুন সংসদের অধিবেশন শুরু করবেন।
ব্রিনের রাজা কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসেবে কানাডারও রাষ্ট্রপ্রধান। দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির আমন্ত্রণে ৭৬ বছর বয়সী রাজা সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারগুলোর রূপরেখা তুলে ধরে ‘রাজভাষণ’ দেবেন।
সাধারণত রাজপ্রতিনিধি গভর্নর জেনারেল এই ভাষণ দেন। তবে চার্লসের প্রয়াত মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার দীর্ঘ শাসনামলে মাত্র দু'বার (১৯৫৭ ও ১৯৭৭ সালে) সরাসরি ভাষণ দিয়েছেন।
অটোয়া থেকে এএফপি জানায়, সিংহাসনে বসার পর এই প্রথম কানাডা সফরে যাচ্ছেন রাজা চার্লস। তিনি ট্রাম্পের পক্ষ থেকে কানাডাকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত’ করার বিষয়টি নিয়ে কখনই প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি। তবে কানাডার সার্বভৌমত্ব ও বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি কী বলেন, তা এবার গভীর নজরেই দেখা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র কানাডার গাড়ি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামসহ পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করেছে, যা কানাডার অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও কিছু শুল্ক আপাতত স্থগিত রয়েছে।
এই ২৪ ঘণ্টার সফরে চার্লসের সঙ্গে রয়েছেন রানি ক্যামিলা।
‘বার্তা পাঠানোরে আরও সহজ উপায় আছে’
প্রধানমন্ত্রী কারনি বলেছেন, তার নবনির্বাচিত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘নতুন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক’ গঠনের ম্যান্ডেট পেয়েছে। কারণ, তার মতে, এই প্রতিবেশী দেশের ওপর আর নির্ভর করা যায় না।
তিনি অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ার অঙ্গীকার করেছেন।
চার্লসের ভাষণের মধ্য দিয়েই ‘একটি শক্তিশালী কানাডা গড়ার’ সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন কারনি।
সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই সফর কানাডার সাংবিধানিক রাজতন্ত্র হিসেবে পরিচয় ও সার্বভৌমত্বের ‘একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত’।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে কারনির সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকেও কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার বিষয়টি ‘চমৎকার একজোট হওয়া’ বলে মন্তব্য করেন। তবে কার্নি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘কানাডা বিক্রি হবে না।’
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিট হুকস্ত্রা বলেন, রাজাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সংসদ উদ্বোধনের মধ্যে যদি কোনো বার্তা থেকেও থাকে, তা খুব একটা কার্যকর নয়। তিনি বলেন, ‘বার্তা পাঠানোর আরও সহজ উপায় আছে। আমাকে ফোন দিলেই হয়। প্রেসিডেন্টকে যেকোনো সময় ফোন করতে পারেন কারনি।’
হুকস্ত্রা আরও বলেন, ‘আমার মতে, অধিগ্রহণের বিষয়টি এখন শেষ। এখন এগিয়ে যেতে হবে। তবে কানাডীয়রা যদি এটা নিয়ে কথা বলতেই চায়, সেটা তাদের ব্যাপার।’
‘বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে’
রাজা চার্লস ও রানি ক্যামিলা সোমবার বিকেলে অটোয়ায় অবতরণ করবেন। গভর্নর জেনারেল মেরি সাইমন, প্রধানমন্ত্রী কারনি, আদিবাসী নেতা এবং বিশিষ্টজনেরা তাদের অভ্যর্থনা জানাবেন। এরপর তারা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
সোমবারই চার্লস প্রধানমন্ত্রী কারনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
মঙ্গলবার সিনেট ভবনে তাঁকে সামরিক সম্মান জানানো হবে এবং এরপর তিনি ‘রাজভাষণ’ দেবেন।
কানাডার রাজপরিবারবিষয়ক বিশ্লেষক এডওয়ার্ড ওয়াং এএফপিকে বলেন, ‘আমার দেশের সার্বভৌমত্ব যখন চ্যালেঞ্জের মুখে, তখন রাষ্ট্রপ্রধানের সংসদ উদ্বোধন বিশ্ববাসীকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো দুনিয়া এই সফরের দিকে তাকিয়ে থাকবে।’