ঢাকা, ৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ব্রাজিলের সাবেক ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে অভ্যুত্থানচেষ্টা চালানোর অভিযোগের সম্মুখীন হতে আজ সোমবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে হাজির হচ্ছেন।
ব্রাসিলিয়া থেকে এএফপি জানায়, ৭০ বছর বয়সী এই কট্টর ডানপন্থী নেতা ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল শাসন করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সরকারি কৌঁসুলিরা তাকে একটি ‘অপরাধ চক্রের’ প্রধান হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন, যেটি নির্বাচনের ফল উল্টে দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বামপন্থী নেতা লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার শপথ অনুষ্ঠান ঠেকাতে চেয়েছিল।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সেনাবাহিনীর পূর্ণ সমর্থন না থাকায় সেই অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এছাড়া, প্রেসিডেন্ট লুলা, তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেরালদো আলকমিন এবং বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েসকে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের কথাও বলসোনারোর আগে থেকেই জানা ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
২০২৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা থাকলেও বর্তমানে বলসোনারোর প্রার্থী হওয়া নিষিদ্ধ। তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তার সঙ্গে আরও সাতজন সাবেক ঘনিষ্ঠ সহযোগীও একই মামলায় অভিযুক্ত। দোষী প্রমাণিত হলে তাদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ ৪০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
- ‘সত্যের মুহূর্ত’ -
যদিও তিনি আদালতে চুপ করে থাকার আইনি অধিকার রাখেন, তবু বলসোনারো সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি 'কোনো সমস্যা ছাড়াই' আদালতের সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন।
গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, 'অভ্যুত্থান নিয়ে খোলামেলা কথা বলাটা দারুণ হবে। কী ঘটেছিল তা ব্যাখ্যার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। এটা সত্যের মুখোমুখি হওয়ার মুহূর্ত।'
ব্রাসিলিয়ায় অবস্থিত সুপ্রিম কোর্ট ভবনেই বলসোনারো সাক্ষ্য দেবেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সেখানে হামলা চালিয়েছিল তার সমর্থক ‘বলসোনারিস্তারা’। তখন তারা সেনাবাহিনীকে লুলার সরকার উৎখাতের আহ্বান জানিয়েছিল।
এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে এবং এটি সপ্তাহব্যাপী চলতে পারে।
সাক্ষীদের তালিকায় বলসোনারো ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছেন। তিনি মঙ্গলবার বা বুধবার সাক্ষ্য দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই বিচারপ্রক্রিয়ায় বলসোনারোর সঙ্গে তার পুরনো মিত্র ও বর্তমান প্রতিপক্ষদের আবার দেখা হবে।
এ মামলায় অভিযুক্ত সাতজনের প্রত্যেককেই সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন বলসোনারোর সাবেক ঘনিষ্ঠ সহকারী মাউরো সিড, যিনি রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হয়ে যাওয়ায় বলসোনারোর অনুসারীদের কাছে ‘বিশ্বাসভঙ্গকারী’ হিসেবে বিবেচিত।
তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে, সিডের সাক্ষ্যের মাধ্যমেই অভ্যুত্থানচেষ্টার মূল কারিগরদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা গেছে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন চারজন সাবেক মন্ত্রী, ব্রাজিলের সাবেক নৌবাহিনী প্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান।
আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বলসোনারোকে কেবল সরকারি কৌঁসুলি ও আইনজীবীদের নয়, বরং বিচারপতি দে মোরায়েসেরও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। বলসোনারো তাকে ‘একনায়ক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন
- ‘ইতিহাস লেখা হচ্ছে’ -
গেটুলিও ভারগাস ফাউন্ডেশনের অপরাধবিষয়ক বিশেষজ্ঞ রজেরিও তাফারেলো জানান, মামলার বিচারপ্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে দ্রুত এগোচ্ছে। তবে এখনও রায় ঘোষণার অনেক বাকি, কারণ আদালত প্রয়োজনে নতুন সাক্ষীকেও তলব করতে পারে।
তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্র দীর্ঘ সময় ধরে গঠিত হয়েছে এবং কিছু অভিযোগ ব্রাজিলের আইনি কাঠামোর জন্য নতুন, তাই আইনি আলোচনাও অত্যন্ত জটিল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বলসোনারো গত সপ্তাহান্তে সাও পাওলো রাজ্যের গভর্নর তারসিসিও দে ফ্রেইতাসের বাসভবনে তার আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষ্যের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
দে ফ্রেইতাস এই মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে বলসোনারোর পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার নেতা কখনোই অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ আনেননি কিংবা কোনো সাংবিধানিক ব্যত্যয়ের পরিকল্পনার কথা বলেননি।
তবে দুই সাবেক সেনাপ্রধান নিশ্চিত করেছেন যে, বলসোনারো একটি বৈঠকে ‘অবরুদ্ধ অবস্থা’ জারির বিষয়টি আলোচনা করেছিলেন, যার মাধ্যমে নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়া হতো।
'ব্রাজিলের ইতিহাস লেখা হচ্ছে,' বলেন কাসা পলিটিকা থিঙ্ক ট্যাংকের প্রধান মার্সিও কোইম্ব্রা।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে অভ্যুত্থানচেষ্টার অভিযোগে এটি প্রথম বিচারপ্রক্রিয়া।