ঢাকা, ১০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : যুদ্ধবিরতি নিয়ে অচলাবস্থার মধ্যে সোমবার বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে রাশিয়া ও ইউক্রেন তিন বছর আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে একটি চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় এই বন্দি বিনিময় এবং নিহত সেনাদের মরদেহ ফেরত দেওয়ার বিষয়টি একমাত্র বাস্তবায়নযোগ্য চুক্তি হিসেবে গৃহীত হয়।
ওই শান্তি আলোচনায় এই চুক্তিটি ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ থামাতে রাশিয়া বেশ কিছু কঠোর শর্ত দিয়েছে এবং বারবার নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে।
কিয়েভ থেকে এএফপি জানায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক মাধ্যমে এক বার্তায় বলেন, 'আজ বন্দি বিনিময় শুরু হয়েছে, যা আগামী কয়েক দিন ধরে কয়েক ধাপে চলবে।'
তিনি গায়ে ইউক্রেনীয় পতাকা-জড়িয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন ও উল্লাসরত সৈন্যদের ছবি পোস্ট করে জানান, 'যাদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন- আহত, গুরুতর আহত এবং ২৫ বছরের নিচে বয়সী সেনা।'
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও বন্দি বিনিময়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা বলেছে, '২ জুন ইস্তাম্বুলে স্বাক্ষরিত চুক্তির অংশ হিসেবেই এই বিনিময়।' তবে কোনো পক্ষই কতজন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সে সংখ্যা প্রকাশ করেনি।
ইস্তাম্বুলে আলোচনার পর জানানো হয়, এই বিনিময়ের আওতায় ১,০০০ জনের বেশি বন্দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে—যা হবে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিনিময়।
তবে গত সপ্তাহান্তে মস্কো ও কিয়েভ পরস্পরের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত বিনিময় বিলম্বিত ও ব্যাহত করার অভিযোগ তুললে এই প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়।
রবিবার জেলেনস্কি রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেন ‘রাজনৈতিক খেলা’ খেলার এবং আগেই নির্ধারিত শর্ত না মানার জন্য। শর্ত ছিল—যেসব বন্দি অসুস্থ, আহত অথবা ২৫ বছরের কম বয়সী, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে।
অন্যদিকে রাশিয়া দাবি করে, ইউক্রেন সীমান্তবর্তী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রাকে রাখা ১,২০০ জন নিহত ইউক্রেনীয় সেনার মরদেহ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
- আলোচনাকে বললেন ‘নিরর্থক’ -
২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় সংঘাত শুরু হয়, যাতে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হন এবং ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে উভয় পক্ষ তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সরাসরি আলোচনায় বসে।
তবে দুই পক্ষের অবস্থান এখনও পরস্পর থেকে অনেক দূরে। ২ জুন ইস্তাম্বুল বৈঠকে রাশিয়া দাবি তোলে, ইউক্রেনকে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে, মস্কো কর্তৃক পাঁচটি ইউক্রেনীয় অঞ্চল অধিভুক্তির স্বীকৃতি দিতে হবে এবং পশ্চিমা সামরিক সহায়তা পুরোপুরি পরিত্যাগ করতে হবে।
উল্টো কিয়েভ পূর্ণ যুদ্ধবিরতি এবং একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন আয়োজনের দাবি করে—যেখানে জেলেনস্কি, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ট্রাম্প উপস্থিত থাকবেন।
বন্দি বিনিময় স্বাগত জানালেও জেলেনস্কি গত সপ্তাহে বলেন, রাশিয়ার বর্তমান প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা ‘নিরর্থক’। এর আগে তিনি প্রতিনিধিদলের সদস্যদের ‘শূন্যমাথা’ বলে অভিহিত করেন। কেননা তারা একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারেননি।
এদিকে ময়দান ও আকাশপথে যুদ্ধও তীব্রতর হচ্ছে। রাশিয়া রোববার দাবি করেছে, তারা প্রথমবারের মতো ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল দিনিপ্রোপেত্রভস্ক অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হতে পারে, কারণ এ অঞ্চলের ওপর মস্কোর আগের দাবির কোনো রেকর্ড নেই।
কিয়েভের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, সোমবার রাতে রাশিয়া ইউক্রেনের দিকে রেকর্ড ৪৭৯টি ড্রোন পাঠিয়েছে।
ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর রিভনের মেয়র ওলেক্সান্দর ত্রেতিয়াক একে যুদ্ধ শুরুর পর অঞ্চলটিতে 'সবচেয়ে বড় হামলা' বলে অভিহিত করেছেন।
রাশিয়া দাবি করেছে, তারা রিভনে অঞ্চলের দুবনো গ্রামসংলগ্ন একটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু করেছে।
মস্কো এই হামলাকে ১ জুন ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার জবাবে 'প্রতিশোধমূলক আঘাত' হিসেবে উল্লেখ করেছে। ওই হামলায় যুদ্ধরেখা থেকে বহু কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ঘাঁটিগুলো লক্ষ করা হয়।
একইসঙ্গে কিয়েভ দাবি করেছে, তারা রাশিয়ার একটি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ কারখানায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে। কারখানাটিতে ড্রোনের যন্ত্রাংশ তৈরি করা হত।
রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলার ফলে সেখানে উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছে।