ঢাকা, ১১ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ইরান জানিয়েছে, পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আগামী রোববারের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ষষ্ঠ দফা আলোচনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রায় দুই মাস ধরে চলমান গুরুত্বপূর্ণ এই আলোচনা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে স্থবির হয়ে পড়ার পর তেহরান একথা জানালো।
তেহরান জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের সর্বশেষ প্রস্তাবের জবাবে তারা একটি পাল্টা প্রস্তাব উপস্থাপন করবে।
ইরানের অভিযোগ, ওয়াশিংটনের খসড়া চুক্তিতে পারমাণবিক কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধতা আরোপের বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো আশ্বাস নেই।
তেহরান থেকে এএফপি জানায়, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, 'ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ আলোচনা পরবর্তী দফা রোববার মাসকাটে (ওমানে) অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।'
আলোচনার মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমান তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য না করলেও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে এই আলোচনা বৃহস্পতিবারের আগেই শুরু হতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রকে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর এই প্রথম এত উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এর আগে, ইরান তাদের প্রতিশ্রুত পাল্টা প্রস্তাব জমা দিয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প সোমবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, 'পরবর্তী বৈঠক বৃহস্পতিবারই হতে পারে। তাই আমরা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করব।'
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এ সপ্তাহে নরওয়ের বার্ষিক অসলো ফোরামে যোগ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গত ৩১ মে পঞ্চম দফা আলোচনার পর ইরান জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত একটি খসড়ার 'কিছু উপাদান' হাতে পেয়েছে। তবে আরাকচি বলেছেন, প্রস্তাবটিতে 'অস্পষ্টতা' রয়েছে।
তেহরান বলছে, পূর্ববর্তী আলোচনায় উল্লিখিত বিষয়গুলোর—বিশেষ করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উল্লেখ নেই, অথচ এটি ইরানের একটি প্রধান দাবি।
সোমবার বাকায়ি বলেন, 'আমরা যুক্তিসঙ্গত, বাস্তবসম্মত ও ভারসাম্যপূর্ণ একটি পাল্টা প্রস্তাব দেব।'
‘জাতীয় স্বার্থই মুখ্য’
ট্রাম্প বলেন, 'পরবর্তী দফার আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে যাবে, একটি চুক্তি সম্ভব কি না—যার ফলে সামরিক সংঘাত এড়ানো সম্ভব হবে।'
তবে তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকারকে ‘অপরিবর্তনীয়’ বলে আখ্যায়িত করেছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে ইরানের যেকোনো ধরনের সমৃদ্ধকরণ ‘রেড লাইন’।
বর্তমানে ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে—যা ২০১৫ সালের চুক্তির ৩.৬৭ শতাংশ সীমার বহু ঊর্ধ্বে এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলসহ পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করার অভিযোগ করে আসছে, যদিও তেহরান বলছে তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
মঙ্গলবার ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভানচি সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আলোচনায় কোনো অচলাবস্থা নেই। পরবর্তী দফা হবে এমন একটি যেখানে লিখিত প্রস্তাব নিয়ে সরাসরি আলোচনা শুরু হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আন্তর্জাতিক স্তরের যেকোনো আলোচনারই সংবেদনশীলতা থাকে এবং ধৈর্য প্রয়োজন। আমাদের কাছে মুখ্য হলো দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা।'
এদিন ইরানের সংসদের একদল আইনপ্রণেতা এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, 'যুক্তরাষ্ট্র আলোচনাকে একটি কৌশলগত ফাঁদে পরিণত করেছে, যেটি ইসরাইলের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালিত হচ্ছে।'
তারা বলেন, 'ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্য হলো চাপ প্রয়োগ করে দাবি আদায় করা—যা ইরানি জনগণের বৈধ অধিকারের পরিপন্থী ও অবমাননাকর।'
‘অসন্তোষজনক সহযোগিতা’
সোমবার জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা আইএইএ অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় পাঁচ দিনের বোর্ড সভা শুরু করেছে, যেখানে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে।
এর আগে আইএইএ একটি রিপোর্টে জানিয়েছিল, 'ইরানের সহযোগিতা সন্তোষজনক নয়, বিশেষত এমন কয়েকটি স্থানে যেখানে পূর্বে অঘোষিত পারমাণবিক উপাদান পাওয়া গেছে।'
ইরান এই প্রতিবেদনকে ‘একপেশে’ বলে নিন্দা করেছে এবং বলেছে এতে ইসরাইলের দেওয়া ‘জাল দলিল’ ব্যবহার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার আরাকচি ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রের আইএইএ বোর্ডে ইরানের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণের পরিকল্পনার সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, 'বোর্ড অব গভর্নরস যদি ইরানের বিরুদ্ধে কোনো অবিবেচক ও ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আমরা তার উপযুক্ত জবাব দেব।'
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়ার সঙ্গে ফোনালাপে তিনি এ কথা বলেন।
ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, প্রস্তাবটি পাস হলে তারা আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা কমিয়ে দেবে।
‘ইসরাইলের গোপন নথি হস্তগত’
শনিবার ইরান ঘোষণা করে, তারা একটি গোপন অভিযানে ইসরাইলের গোয়েন্দা নথিপত্র হস্তগত করেছে—যার মধ্যে ইসরাইলের গোপন পারমাণবিক স্থাপনা ও প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার তথ্যও রয়েছে।
তেহরান বলেছে, 'এই তথ্য ব্যবহার করে ইসরায়েল যদি ইরানকে হামলা করে, তবে তা প্রতিহত করতে ইরানি বাহিনী এখন প্রস্তুত।'
ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরেই ইরানকে লক্ষ্য করে হামলার হুমকি দিয়ে আসছে এবং তেহরান-ওয়াশিংটন আলোচনার পর তা আরও বেড়েছে।