ঢাকা, ২ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস): কৌশল এবং কঠোরতার এক অনন্য সংমিশ্রণই মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউমকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সফলভাবে লেনদেনের সক্ষমতা এনে দিয়েছে। সর্বশেষ তিনি ৩০ শতাংশ উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ ৯০ দিনের জন্য পিছিয়ে দিতে ট্রাম্পকে রাজি করিয়েছেন, যা শুক্রবার কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
মেক্সিকো সিটি থেকে এএফপি এ সংবাদ জানিয়েছে।
যদিও তাঁরা দুই ভিন্ন রাজনৈতিক মেরুতে অবস্থান করেন, তবু, দুই নেতার মধ্যে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ, যার ফলে মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্টের সম্পর্কে ট্রাম্পের সঙ্গে ‘কানকথা’ বলার প্রচারণা রয়েছে।
এখন পর্যন্ত অন্তত তিনবার ট্রাম্প মেক্সিকোকে শুল্কে ছাড় দিয়েছেন। তিনি শেইনবাউমকে ‘‘অসাধারণ নারী’ বলে অভিহিত করেছেন। যা অন্যান্য বিশ্বনেতাদের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যাদের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক সাধারণত জটিল।
বৃহস্পতিবার, ট্রাম্প ৩০ শতাংশ সাধারণ আমদানি শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করতে সম্মত হন। যা কার্যকর হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই স্থগিত করা হয়। এটি ছিল জানুয়ারিতে ট্রাম্পের পুনঃক্ষমতায় আসার পর দুই নেতার মধ্যে নবম ফোনালাপের ফলাফল।
‘ঠান্ডা মাথা’ ও দৃঢ়তা
শেইনবাউম ঠান্ডা মাথা নিয়ে নিজেই শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, কীভাবে তিনি এ কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছেন। ৬৩ বছর বয়সী পদার্থবিদ এবং সুপ্রতিষ্ঠিত বামপন্থী এই নেতা বলেন, তিনি ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিকে মোকাবেলা করার সময় সংঘাত এড়িয়ে মেক্সিকোর সার্বভৌম অধিকারকে জোরালোভাবে তুলে ধরেন, কারণ ট্রাম্প শক্তিশালী নেতৃত্বকে সম্মান করেন।
শেইনবাউম বলেন, মেক্সিকানদের কখনো ‘মাথা নত করা উচিত নয়।’ এক ফোন কলে ট্রাম্পও তাঁর দৃঢ়তা স্বীকার করে বলেন, তুমি কঠিন প্রতিপক্ষ।’
শেইনবাউম ব্যাখ্যা করে বলেন, মেক্সিকো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অনেক কিছু প্রতিনিধিত্ব করে, তারা সেটা জানে।
‘বোঝানোর ক্ষমতা’
মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে ইউএসএমসিএ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির কারণে মেক্সিকোর প্রায় ৮৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্কমুক্ত। যদিও ৩০ শতাংশ সাধারণ শুল্ক আপাতত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, তবু দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অটোমোটিভ খাতকে ২৫ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তুতকৃত যন্ত্রাংশের জন্য ছাড় রয়েছে।
স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম খাতেও মেক্সিকোকে ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে, যা অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তবু, মেক্সিকোর সরকার এই সাম্প্রতিক দেরিকে একটি কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছে।
অর্থনীতিমন্ত্রী ও বাণিজ্য আলোচনার প্রধান মার্কেলো এবরার্দ বলেন, ‘চাটুকারিতা না করেই বলছি, আমাদের প্রেসিডেন্টের কৌশল, দৃঢ়তা, ট্রাম্পকে বোঝানোর ক্ষমতা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’
লেনদেনের কৌশল
শেইনবাউম এক ধরনের ‘লেনদেনমূলক’ কৌশল গ্রহণ করেছেন বলেও মনে করা হচ্ছে। তিনি ট্রাম্পের অভিবাসন ও মাদকপাচার সংক্রান্ত উদ্বেগ প্রশমিত করতে হাজার হাজার সীমান্তরক্ষী মোতায়েন করেছেন।
তবে প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় ‘কিছুই ছাড় দেননি’। উভয় দেশের মধ্যে ফেন্টানিল ও মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে একটি নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, বাণিজ্য ভারসাম্য আনার জন্য মেক্সিকো আরও বেশি মার্কিন পণ্য আমদানির বিষয়টি বিবেচনা করছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, শেইনবাউম কেবল সময় কিনছেন।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর বাণিজ্য বিশ্লেষক দিয়েগো মারোকুইন এএফপিকে বলেন, সাম্প্রতিক এই শুল্ক স্থগিতাদেশ "অনিশ্চয়তার বিষয়টি সমাধান করে না। আমরা আবারও শুরুর অবস্থানে ফিরে এলাম।’