ঢাকা, ৭ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের পূর্ণ দখলের সম্ভাবনা নিয়ে মতবিরোধের খবর প্রকাশের পর বুধবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, গাজা সম্পর্কে যেকোনো সরকারি সিদ্ধান্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
যুদ্ধের ২৩তম মাস ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং ইসরাইলের কৌশল নিয়ে মতবিরোধের লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
জেরুজালেম থেকে ইসরাইলি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, আক্রমণাত্মক অভিযান সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার তার নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভায় বৈঠক করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও আটক জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে ইসরাইলকে ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসকে ‘সম্পূর্ণভাবে পরাজিত’ করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম পূর্বাভাস দিয়েছে যে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অভিযান বৃদ্ধি পাবে। এ সব স্থানে জিম্মিদের আটকে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেমন- গাজা শহর ও শরণার্থী শিবির।
বুধবার, সেনাবাহিনী উত্তরে গাজা সিটি ও দক্ষিণে খান ইউনিসের কিছু অংশ থেকে ফিলিস্তিনিদের নতুন করে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, স্থল বাহিনী ‘যুদ্ধ অভিযানের পরিধি বাড়ানোর’ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইসরায়েলের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু ও তার মন্ত্রিসভা গাজায় পূর্ণ সামরিক দখলের নির্দেশ দিতে পারে। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির তার এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, মঙ্গলবার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বিকল্পগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য নেতানিয়াহু জামিরসহ নিরাপত্তা প্রধানদের সাথে তিন ঘন্টার বৈঠক করেন।
পাবলিক ব্রডকাস্টার কান জানিয়েছে, সভায় জামির সতর্ক করে জানান, গাজা সম্পূর্ণ দখল করার সিদ্ধান্ত হবে ‘ফাঁদে পা দেওয়ার মতো’।
চ্যানেল ১২ টেলিভিশন জানিয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী প্রধান পূর্ণ দখলের পরিবর্তে বিকল্প ব্যবস্থা পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন হামাস জঙ্গিরা যেখানে লুকিয়ে আছে বলে মনে করা হয় এমন নির্দিষ্ট এলাকাগুলোকে ঘিরে ফেলা।
বিরোধী নেতা ইয়ার ল্যাপিড বলেছেন যে তিনি বুধবারের এক বৈঠকে নেতানিয়াহুকে বলেছেন, ‘গাজা দখল করা হবে নৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি পুরো গাজা দখলের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত নন।
তবে তিনি বলেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত ‘ইসরায়েলের ওপর নির্ভর করে।’
গাজার মানবিক সংকট নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ এবং অবশিষ্ট জিম্মিদের ভাগ্য নিয়ে ইসরাইলিদের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধির সাথে সাথে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ইসরায়েলি সরকার ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে।
২০২৩ সালে হামাসের হামলায় আটক ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে ৪৯ জন এখনও গাজায় আটক রয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করছে যে, এদের মধ্যে ২৭ জন মারা গেছে।
জাতিসংঘ গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করার পর গাজার দুই মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনি বাসিন্দার দুর্ভোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক সমালোচনা তীব্র হয়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, বুধবার প্রকাশিত সর্বশেষ স্যাটেলাইট জরিপ অনুসারে, গাজার কৃষিজমির মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ চাষ করার মতো অক্ষত রয়েছে।
এফএও এর মহাপরিচালক কু ডোংইউ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গাজা এখন পূর্ণ মাত্রার দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকার কারণে, গাজার স্থানীয় কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং পরিবারগুলো আর সবচেয়ে মৌলিক জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে না।’
গাজার নাগরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে যে, খাদ্য রেশন সংগ্রহের আশায় মানুষের ভিড়ের ওপর একটি ত্রাণ ট্রাক উল্টে গেলে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় গাজায় শত শত বেসামরিক লোক খাদ্য সহায়তার জন্য অপেক্ষা করার সময় ট্রাকটি উল্টে যায়।’
তিনি বলেন আরো বলেন, বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ‘ট্রাকটিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিপজ্জনক রাস্তা দিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল।’
হামাস-নিয়ন্ত্রিত সরকার ইসরাইলকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে সাহায্যের নিরাপদ পথ দিয়ে ত্রাণবাহী যানবাহনকে যেতে না দেওয়া এবং ফিলিস্তিনিদের কাছে খাবার বিতরণে বাধা দেওয়ার’ অভিযোগ করেছে।
এএফপি এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে দেশটির একজন সামরিক কর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনী এই ঘটনায় জড়িত ছিল না।
ইসরাইল মার্চের শুরুতে আরোপিত সাহায্য অবরোধ মে মাসের শেষে শিথিল করে।
কিন্তু জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় যে পরিমাণ সাহায্যের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, তা এখনও পর্যাপ্ত নয়।
সরকারি পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এএফপির হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যে হামলায় যুদ্ধ শুরু হয়, তাতে ১ হাজার ২১৯ লোক নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
জাতিসংঘের বিশ্বাসযোগ্য হিসাবে বিবেচিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইসরায়েলি আক্রমণে গাজায় কমপক্ষে ৬১ হাজার ১৫৮ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।