ঢাকা, ১০ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে শনিবার তেল আবিবে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে।
এর আগের দিনই গাজায় যুদ্ধ সম্প্রসারণে ইসরাইল সরকার গাজা দখলের ঘোষণা দিয়েছে।
তেল আবিব থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে।
এসময় বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এবং ফিলিস্তিনে জিম্মি থাকা ইসরাইলিদের ছবি তুলে ধরে সরকারের কাছে তাদের মুক্তির দাবি জানান।
এএফপির সাংবাদিকরা এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কয়েক হাজার বলে অনুমান করেন। তবে জিম্মিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল জানায়, এতে প্রায় ১ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিল।
তবে সরকার জনসমাগমে উপস্থিতির সংখ্যা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য দেয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত অন্যান্য যুদ্ধবিরোধী সমাবেশগুলোর চেয়ে এটি অনেক বড় ছিল।
নিহত এক জিম্মির আত্মীয় শাহার মোর জাহিরো এএফপি’কে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি আমরা সরাসরি একটি বার্তা দিতে চাই। তা হলো গাজার কোনো অংশ দখল করার কারণে জিম্মিরা যদি খুন হয় তবে আমরা আপনাকে ছাড়ব না। আমরা শহরের মোড়ে, নির্বাচনী প্রচারণায়, সব জায়গায় আপনার পিছু নেব।’
শুক্রবার নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা শহর দখলের জন্য একটি বড় ধরনের অভিযানের পরিকল্পনা অনুমোদন করে। যা দেশে বিদেশে সমালোচনার ঝড় তোলে।
ইসরাইলের মিত্র কিছু আন্তর্জাতিক শক্তি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে এবং গাজায় মানবিক সংকট নিরসন করতে একটি সমঝোতামূলক যুদ্ধবিরতির জন্য নেতানিয়াহুকে চাপ দিচ্ছে।
এতো সমালোচনা এবং ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে মতবিরোধের গুঞ্জন সত্ত্বেও নেতানিয়াহু তার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।
শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে নেতানিয়াহু বলেন, আমরা গাজা দখল করতে যাচ্ছি না, আমরা হামাসের কাছ থেকে গাজাকে মুক্ত করতে যাচ্ছি।
গত ২২ মাস ধরে চলমান এই যুদ্ধের সময়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিয়মিত বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। অনেক সমাবেশে সরকার ও হামাসের মধ্যে একটি চুক্তি করার দাবি জানানো হয়। যেমনটা অতীতে জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
২০২৩ সালে হামাস আক্রমণ চালিয়ে ২৫১ জন ইসরাইলিকে জিম্মি করে, যাদের মধ্যে ৪৯ জন এখনও গাজায় আটক আছেন। সামরিক বাহিনীর মতে, এদের মধ্যে ২৭ জন মারা গেছেন।
এদিকে শনিবার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গাজায় ইসরাইলিদের অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনাকে নিন্দা জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা’য় প্রকাশিত এক বিবৃতি অনুযায়ী, ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, এই পরিকল্পনা একটি ‘নতুন অপরাধ’ এবং এটি অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’
তিনি গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে তার পূর্ণ দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।
যে বৈঠকে গাজা শহর দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়, একই বৈঠকে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য কিছু নীতিও গ্রহণ করে, যার মধ্যে ছিল একটি নতুন প্রশাসন প্রতিষ্ঠা, যা হামাসও নয়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও নয়।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ইসরাইল-অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশে সীমিত শাসন পরিচালনা করে, কিন্তু হামাস শাসিত গাজায় তাদের কোনো উপস্থিতি নেই।
ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পক্ষ থেকে শনিবার জারি করা এক বিবৃতিতে আবারও গাজা শহর দখলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয়।
তারা বলেন, এটি ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করবে, জিম্মিদের জীবনকে বিপন্ন করবে এবং সাধারণ জনগণের ব্যাপক বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াবে।
এদিকে রাশিয়াও শনিবার এক বিবৃতিতে গাজা শহর দখলের ইসরাইলি পরিকল্পনাকে নিন্দা জানিয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ইতোমধ্যে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিতে রয়েছে।
এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে তা আরও খারাপ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া বর্তমান লক্ষণ অনুযায়ী সেখানে একটি মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার ইসরাইলি হামলায় এই ভূখণ্ডে অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৩০ জন বেসামরিক নাগরিক ত্রাণ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এই পরিসংখ্যানকে জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।
এএফপির দেওয়া সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইসরাইলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২১৭ জন নিহত হন, যার ফলে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল।