ঢাকা, ১৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : তিন বছর ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে শুক্রবার আলাস্কায় রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলন শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়েও একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের দিকে নজর দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে একটি ‘খুব ভালো’ ফোনালাপের পর বুধবার ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন। ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও জেলেনস্কি অংশ নেন। এই ফোনালাপ এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন রুশ বাহিনী ইউক্রেনের একটি বিশাল ভূখণ্ড দখলে নিয়েছে।
শুক্রবার আলাস্কার অ্যাঙ্করেজ শহরে পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, যদি প্রথম বৈঠক ভালো হয়, তাহলে আমরা দ্রুত দ্বিতীয় বৈঠক করব। আমি চাই এই বৈঠকের পরপরই জেলেনস্কি ও পুতিনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হোক।
এই শীর্ষ বৈঠকটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন। এর আগে জেলেনস্কি ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা আগেই এই রিপাবলিকান নেতাকে যুদ্ধবিরতি চাওয়ার জন্য চাপ দেন। একদিকে রাশিয়ার হামলা তীব্র হচ্ছে, অন্যদিকে জেলেনস্কিকেও আলাস্কার বৈঠকে ডাকা হয়নি। এ কারণে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, ট্রাম্প ও পুতিন হয়ত এমন কোনো চুক্তি করতে পারেন, যা ইউক্রেনের জন্য কঠিন হতে পারে।
ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচনে জেতার পর প্রথম কর্মদিবসেই তিনি যুদ্ধ বন্ধ করবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত শান্তি চুক্তি নিশ্চিত করতে তিনি খুব একটা এগোতে পারেননি।
তিনি ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য রাশিয়ার বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেন। কিন্তু গত সপ্তাহে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ট্রাম্প বুধবার সতর্ক করে বলেন, যদি তিনি মনে করেন পুতিন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন, তাহলে তিনি পরবর্তী বৈঠকটি বাতিল করে দেবেন।
ট্রাম্প বলেন, হয়তো কোনো দ্বিতীয় বৈঠক হবে না। কারণ, আমি যদি মনে করি এটি ঠিক নয় বা আমাদের প্রয়োজনীয় উত্তরগুলো পাইনি, তাহলে আমরা দ্বিতীয় বৈঠক করব না।
মার্কিন ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার’ এর যুদ্ধক্ষেত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে এএফপি জানায়, রুশ বাহিনী ইউক্রেনে গত এক বছরের মধ্যে গত মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি এলাকা দখল করেছে।
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠককে সামনে রেখে জেলেনস্কি বার্লিন সফর করেছেন। সেখানে তিনি ইউরোপীয় নেতা, ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধানদের নিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎসের সঙ্গে এক অনলাইন বৈঠকে যুক্ত হন। এই বৈঠকে তারা ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।
আলোচনার মূল বিষয় ছিল ট্রাম্প যেন যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেন। ট্রাম্প বলেন, রাশিয়া যদি তাদের হামলা বন্ধ না করে, তাহলে তাদের ‘গুরুতর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে।
তবে জেলেনস্কি মস্কোর উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আমার সহকর্মীদের, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং আমাদের ইউরোপীয় বন্ধুদের বলেছি, পুতিন নিশ্চিতভাবেই শান্তি চান না।’
সোমবার ট্রাম্প বলেছেন আলাস্কার বৈঠকে বড় ধরনের কোনো সফলতা না আসলেও তিনি পুতিনের সঙ্গে ‘গঠনমূলক আলোচনার’ আশা করছেন। তিনি বলেন, ‘এটি মূলত পরিস্থিতি বোঝার বৈঠক। শেষ পর্যন্ত কিছু বিনিময় হবে, কিছু ভূমি পরিবর্তন হবে।’
মের্ৎস বলেন, ভূমি বিষয়ক আলোচনায় ইউক্রেন প্রস্তুত আছে। তবে তিনি স্পষ্ট করে দেন, রাশিয়ার দখলকে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
ফোনালাপের পর ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো ‘ইউক্রেনের পক্ষে যৌথ অবস্থান আরও শক্ত করেছে।’
এদিকে ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটে ঘোষণা করেন, ‘ বল এখন পুতিনের কোর্টে।’
এর আগে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই কূটনৈতিক তৎপরতাকে ‘রাজনৈতিক ও বাস্তবে গুরুত্বহীন’ বলে মন্তব্য করে। তারা একে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শান্তি প্রচেষ্টা নস্যাৎ করার চেষ্টা বলেও দাবি করে।
ইউরোপীয় নেতাদের আশাবাদী মন্তব্যের পরও বুধবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া হামলার গতি বাড়িয়ে দেয় এবং দখলকৃত এলাকার পরিধি বাড়ায়। এই সপ্তাহে রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তের ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখলে নিয়েছে।
এএফপির তথ্য বিশ্লেষণ দেখা যায়, ১২ আগস্ট রাশিয়ান সেনারা একদিনে ১১০ বর্গকিলোমিটার (৪২ দশমিক ৫ বর্গমাইল) এলাকা দখল করেছে বা দখলের দাবি করেছে। এটি ২০২৪ সালের মে মাসের পর এক দিনে সবচেয়ে বেশি এলাকা দখলের ঘটনা।
সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে পূর্ব ইউক্রেনের ক্রামাতোরস্ক শহরের সেনারা বলেন, তারা ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক থেকে খুব বেশি আশা রাখছেন না।
আর্তেম (৩০) নামে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর এক সদস্য বলেন, এই যুদ্ধ সম্ভবত ‘দীর্ঘদিন’ ধরে চলবে। পুতিন সেনা জড়ো করছেন, সেনা বাড়ছে, অস্ত্র মজুদ করছেন এবং আমাদের চোখে ধুলো দিচ্ছেন।