
ঢাকা, ১০ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর দিয়ে সোমবার সকালে টাইফুন ফুং-ওং ফিলিপাইন ত্যাগ করেছে। এর প্রভাবে প্রবল ঝড়ো হাওয়া এবং ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে কমপক্ষে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে ও ১০ লাখের বেশি লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ম্যানিলা দ্বীপপুঞ্জের প্রায় পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ফুং-ওং শক্তি সঞ্চয় করে ‘সুপার টাইফুনে’ পরিণত হয়ে রোববার সন্ধ্যায় দেশটির পূর্ব সমুদ্র উপকূলে আঘাত হানে।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
প্রচণ্ড বাতাস ওই অঞ্চলের বেশকিছু গাছপালা উপড়ে ফেলে এবং আরও দক্ষিণের শহরগুলোকে প্লাবিত হয়।
ম্যানিলাসহ প্রধান লুজন দ্বীপের বিভিন্ন অংশে স্কুল ও সরকারি অফিস সোমবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ভারী বৃষ্টিপাত এখনও কার্যকর হয়নি বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
অরোরা প্রদেশে আগের রাতে ফুং-ওং-এর প্রভাবে ভূমিধসে হয়।
উদ্ধারকর্মী জিওফ্রি পারোচা বলেছেন, কর্মকর্তারা এখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
সোমবার সকালে ডিপাকুলাও শহর থেকে তিনি এএফপিকে বলেন, ‘আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর দেখতে পাচ্ছি এবং ভূমিধসের কারণে আমাদের কিছু প্রধান রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অঞ্চলটিতে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধার করা যায়নি।
পারোচা আরো বলেন, ‘গত রাতে ভারী বৃষ্টিপাত ও পানির পরিমাণ বেশি থাকায়, আমরা সেখানে যেতে পারিনি।’
প্রদেশের ডিঙ্গালান শহরের মেয়র অরোরা তাই ফেসবুক লাইভে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিশাল ঢেউয়ের কবলে উপকূল বরাবর অসংখ্য বাড়িঘর এবং নৌকা ভেঙে পড়েছে।
এদিকে, সোমবার রাজ্য আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে যে টাইফুনটির এখন গতিপথ পরিবর্তন করে তাইওয়ানের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
ঝড়টির আঘাত হানার আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ১৪ লক্ষ লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
গত সপ্তাহে কালমাইগির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত সামার প্রদেশে রোববার ফুং-ওং-এর আঘাতে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে।
ক্যাটবালোগান শহরের উদ্ধারকারী জুনিয়েল তাগারিনো এএফপিকে বলেন, ধ্বংসস্তূপ ও উপড়ে পড়া গাছের নিচ থেকে ৬৪ বছর বয়সী এক মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
তাগারিনো বলেন, ‘বাতাস প্রচন্ড শক্তিশালী ছিল এবং সেই সাথে বৃষ্টিপাতও হচ্ছিল।’
সিভিল ডিফেন্স অফিস পরে ক্যাটানডুয়ানেস দ্বীপে আকস্মিক বন্যায় ডুবে যাওয়া আর একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আরও উত্তরে, কাগায়ান প্রদেশে একটি উদ্বুস্তু কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকেরা এএফপিকে জানিয়েছে, বন্যার আশঙ্কা তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছে।
লরেটা সালকুইনা নামের এক আশ্রিতা বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে প্রায়শই বন্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই যখন আমাদের বন্যার আশঙ্কা বাড়ি ত্যাগ করতে বলা হয়েছিল, তখন আমরা এখানে চলে আসি। কারণ, তা না হলে আমরা পানিবন্দি হয়ে পড়তাম।’
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে মানব-সৃষ্ট দুষণের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড় আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। উষ্ণ সমুদ্র টাইফুনগুলোকে দ্রুত শক্তিশালী হতে দেয় এবং উষ্ণ বায়ুমণ্ডল আরও আর্দ্রতা ধরে রাখে— যার অর্থ ভারী বৃষ্টিপাত।