
ঢাকা, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ ৩০-এ দ্রুত অগ্রগতি চাইছে আয়োজক দেশ ব্রাজিল। জীবাশ্ম জ্বালানি, অর্থায়ন ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা নিয়ে মতপার্থক্য দূর করতে মঙ্গলবার থেকেই আলোচনায় চাপ বাড়ছে।
ব্রাজিলের বেলেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ব্রাজিল চাইছে এই সপ্তাহের মধ্যেই চুক্তি হোক। এজন্য প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বুধবার হঠাৎ সম্মেলনস্থল বেলেম শহরে ফিরছেন। উচ্চপর্যায়ের উপস্থিতি দিয়ে তিনি চুক্তি নিশ্চিত করতে চান।
দ্রুত সময়সীমা ঘোষণার পর আলোচকরা রাতভর কাজ করে খসড়া প্রস্তুত করেছেন। এতে রয়েছে বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রস্তাব, দরিদ্র দেশগুলোর জন্য বাড়তি অর্থায়নের দাবি এবং বর্তমান জাতীয় কার্বন নিয়ন্ত্রণ প্রতিশ্রুতির সীমাবদ্ধতা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু প্রধান ভপকে হোকস্ত্রা বলেন, ‘আলোচনায় এ পর্যায় সবসময়ই মিশ্র অবস্থা থাকে।’
বৃটিশ দূত র্যাচেল কাইট বলেন, খসড়া ‘কিছুটা ভারসাম্যহীন’ মনে হলেও ব্রাজিলের সঙ্গে আলোচনায় শক্তিশালী কিছু বেরিয়ে আসতে পারে।
সাংবাদিকদের কাইট বলেন, ‘ব্রাজিল খুব দ্রুত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। এতে প্রতিনিধিদের ওপর বেশ চাপ পড়ছে। তবে কপ সম্মেলনে এমন রসায়ন থাকেই।’
বুধবারও বিশ্রাম নেই বেলেমে। কূটনীতিকদের আবারও রাত জেগে আলোচনায় বসতে বলা হয়েছে।
অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষকরা এএফপিকে জানান, জলবায়ু আলোচনার শুরুতেই স্পষ্ট একটি খসড়া তৈরি করা ব্রাজিলের আত্মবিশ্বাসের ইঙ্গিত দেয়। তারা শিগগিরই একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চায়।
মঙ্গলবার শেষ সংবাদ সম্মেলনে কপ-৩০ এর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে কোরিয়া দো লাগোকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ব্রাজিল পরের দিনই কঠিন বিষয়গুলোর সমাধান চায় কি না। তিনি নিশ্চিত করেন, পরিকল্পনা সেটাই। তবে দিন শেষে অনেক দেরিও হতে পারে।
তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে, লুলা কিছু মধ্যস্থতাকারী দলের সঙ্গে দেখা করতে ফিরছেন। তিনি বেলেমে অন্যান্য কার্যক্রমেও অংশ নেবেন।
ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের ডেভিড ওয়াসকো এএফপিকে বলেন, ‘এটি প্রতিনিধিদের ওপর দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল।’
কঠিন সমঝোতা
খসড়াটিতে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার পক্ষে থাকা জোট এবং তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর বিরোধিতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মঙ্গলবার এক ডজনেরও বেশি জলবায়ু মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূত এক মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন। তারা কয়লা, তেল ও গ্যাস থেকে সরে আসার বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তিতে আরও কঠোর ভাষা ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
খসড়ায় ২০৩০ বা ২০৩৫ সালের মধ্যে ধনী দেশগুলো থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ু অভিযোজনের জন্য আর্থিক সহায়তা তিনগুণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটি দরিদ্র দেশগুলোর অন্যতম প্রধান দাবি।
ভানুয়াতুর জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী রালফ রেগেনভানু সম্মেলনে বলেন, ‘জলবায়ু অর্থায়ন কোনো দান নয়। এটি একটি আইনি এবং নৈতিক বাধ্যবাধকতা।’
যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনে না থাকলেও ব্রাজিল দেখাতে চাইছে, বিশ্ব এখনও জলবায়ু লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ।
কিরিবাতির প্রতিনিধি জোসেফিন মুটে বলেন, ‘আমাদের দেখাতে হবে বহুপাক্ষিকতা এখনও জীবিত রয়েছে।’
তবে কেনিয়ার জলবায়ু সচিব ডেবোরা ম্লোঙ্গো বারাসা বলেন, ধনী দেশগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থ সহায়তা প্রদানই বিশ্ব সংহতির আসল পরীক্ষা।
হোয়েকস্ট্রা বলেন, জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে নতুন করে বিতর্কের ‘কোনো সুযোগ নেই’। গত বছর আজারবাইজানে কপ-২৯ সম্মেলনে এই কঠিন বিষয়টি তিক্ততার সৃষ্টি করেছিল।
প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী চলা এই ম্যারাথন জলবায়ু আলোচনা শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে আগের সম্মেলনের মতো এবারও সময় বাড়তে পারে।