মো. সাজ্জাদ হোসেন
ঢাকা, ১৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : চলতি বছরের মধ্যে রাজধানী ঢাকার ২২০ কিলোমিটার খাল খনন সম্পন্ন হবে। এরমধ্যে ১০৮ কিলোমিটার খাল ইতোমধ্যে খনন সম্পন্ন করে পানি প্রবাহ সৃষ্টি করা হয়েছে। অবশিষ্ট ১১২ কিলোমিটার খনন করে এগুলোতেও পানি প্রবাহের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
রাজধানীর খাল খনন, পুনরুদ্ধার, রক্ষণাবেক্ষণ এসব কর্মযজ্ঞ নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সঙ্গে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন উপপ্রধান প্রতিবেদক মো. সাজ্জাদ হোসেন।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘সিএস খতিয়ান অনুযায়ী ঢাকা সিটির খালের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ৩৪০ কিলোমিটার এরমধ্যে ১২০ কিলোমিটার চলে গেছে বিভিন্ন সড়ক ও রাস্তার নিচে। বাকি যেটা আছে, তার অবস্থাও কিন্তু খুব ভালো না, ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় অবস্থা। আমরা দায়িত্ব নেয়ার এই তিন মাসে প্রবহমান করতে পেরেছি ১০৮ কিলোমিটার। তবে এই বছরের মধ্যে আমরা বাকি ১১২ কিলোমিটার খাল বেদখল এবং খননের কাজ সম্পন্ন করতে পারব বলে আশাবাদী।’
খননকৃত ১০৮ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতায়।
বাকিটা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে পড়েছে বলে তিনি জানান।
ঢাকার খালগুলো নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে মোহাম্মদ এজাজ জানান, ‘রাজধানীর খালগুলোকে নিয়ে প্রথমত পরিকল্পনা হচ্ছে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য খালের প্রবাহ বৃদ্ধি করা, যেটা আগে ছিল না। দায়িত্ব নেয়ার পর গত তিন মাসে খালের প্রবাহ বৃদ্ধি করার জন্য আমরা দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে ১০৮ কিলোমিটার খাল খনন করেছি। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল এবারের বর্ষায় রাজধানীর জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা।’
শিগগিরই রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় খাল উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হবে উল্লেখ করে তিনি জানান, ‘রাজধানীর মোহাম্মদপুরে হাইক্কার খাল উদ্ধার করতে গিয়ে খালের জায়গা দখল করে নির্মিত বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন, টিনের চালাসহ অনেক স্থাপনা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শিগগিরই রাজধানীর রূপনগর খাল, প্যারিস খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, কালশী খাল ও ইসিবি চত্তরের পাশের পুরাতন খাল উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হবে। খালের জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করে ঘুমানোর দিন শেষ। যতবড় প্রভাবশালীই হোক আর যত বড় ভবনই নির্মাণ করা হোক। এসব ভবন মাটিতে গুড়িয়ে দিয়ে খাল উদ্ধার করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা হিসেব করে দেখেছি রাজধানীর ১৭টি জায়গায় চরম জলাবদ্ধতা হয়, এখানে দুই দিনব্যাপী পানি জমে থাকে। ঢাকায় যেন এরকম লেবেলের জলাবদ্ধতা না থাকে এই বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে এবার আশা করছি ৭-৮টি জায়গায় পানি থাকবে। বাকি ১০টি জায়গায় খুব একটা পানি থাকবেনা। এজন্য খালের প্রবাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১০৮ কিলোমিটার খাল কেটে ওই খালের পাড়গুলো ঠিক করা হচ্ছে।
দীর্ঘ মেয়াদে আমরা এগুলোতে কিছু আরসিসি স্ট্রাকচার করব।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে দায়িত্ব নিয়েছি-এই সময়ে আমাদের বড় ধরনের স্ট্রাকচার করার মত টাকা এবং সময় হাতে নেই। তবে এগুলো করতে হবে যারা ভবিষ্যতে আসবেন তাদের।
এসব খালগুলোকে টেকসই ও স্থায়ীভাবে যেন উদ্ধার করা হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা চলে যাব, কিন্তু ওই খালগুলো আবারও দখল হতে পারে। এজন্য সীমানা প্রাচীর দিয়ে দেওয়া, খালের পাড়ে হাটার ব্যবস্থা করা এই ধরনের সিভিল স্ট্রাকচার লাগবে। সেই সিভিল স্ট্রাকচার ভবিষ্যতে যারা আসবেন তারা যেন এটা করতে পারেন সে রাস্তাগুলো আমরা দেখিয়ে দেব।’
যেকোনো শুভ কাজ করতে গেলে একাগ্রতা, সততা এবং আন্তরিকতার প্রয়োজন উল্লেখ করে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ‘এই ১০৮ কিলোমিটার খাল খনন করতে আমাদের ৫ কোটি টাকাও খরচ হয়নি। অথচ এই কাজগুলো অন্যরা করলে ১ হাজার কোটি টাকা বাজেট লাগতো। কমপক্ষে পাঁচ-ছয়শ’ কোটি টাকা তো বাজেট হতোই। সেখানে আমরা এটা দেখিয়েছি যে, চাইলে কম টাকায়ও ভালো কাজ করা যায়।’
খালের দুই পড়ে ২১৬ কিলোমিটার ব্যাপী বৃক্ষরোপণের এক মহাযজ্ঞ হাতে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ‘প্রথমে আমরা খালের প্রবাহ নিশ্চিত করছি এরপর এই খাল যাতে ভবিষ্যতে ভরাট না হয়, এখানে যাতে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে না পারে এজন্য খালের পাড়গুলোতে আমরা গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করছি। এটা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। এবার আমরা ৩০টির মত সংগঠনকে দায়িত্ব দিচ্ছি। লোকাল কমিউনিটি, পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন এদেরকে সাথে নিয়ে আমরা এই কাজগুলো করছি। এদের সাথে নিয়ে এই ১০৮ কিলোমিটার করে দুই পাড়ে মিলিয়ে ২১৬ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে আমরা বন বিভাগের সহযোগিতায় গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করছি। সিটি কর্পোরেশন ভলান্টিয়ারদের খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করবে। আগামী পহেলা জুন থেকে এই কর্মযজ্ঞ শুরু হবে।’
এতে করে খালের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, খালের পাড়ে হাঁটার ব্যবস্থা হবে, খাল দখল বন্ধ হবে, খালের পাড়ে গাছ থেকে ফুল আসবে ফল আসবে মানুষ পাখি এরা গাছের ফল কুড়িয়ে খাবে। গাছ ছায়া দেবে। এতে খরচ হবে খুব কম কিন্তু এর প্রভাব হবে অনেক বড়।