২ জুলাই : দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা

বাসস
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭:০৮
জুলাই গ্রাফিতি। ছবি : বাসস

ঢাকা, ১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা। 

২০২৪ সালের ২ জুলাই প্রায় এক ঘণ্টা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এর আগে মিছিল করেন তারা। এতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন।

তারা বেলা পৌনে তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রহন্থগারের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাব ও বাটা সিগন্যাল মোড় ঘুরে শাহবাগে গিয়ে জমায়েত হন। সে সময় মিছিলে আন্দোলনকারীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক- মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘ছাত্রসমাজ গড়বে দেশ, মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। 

শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে আন্দোলনকারীরা মূল সড়ক ছেড়ে দেন। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

সেই দিন বিক্ষোভ মিছিলে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এটা শুধু শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের আন্দোলন নয়। এটা একটা রাষ্ট্রের বিষয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এক জিনিস নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো বংশগত পরম্পরার বিষয় নয়, এটা একটা রাষ্ট্রীয় আদর্শ। এই আদর্শকে আমরা তরুণেরা ধারণ করি। সে জন্যই আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছি।’

এই দাবি আদায়ে ৩ জুলাই বেলা আড়াইটায় আন্দোলনকারীরা আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেবেন বলে জানিয়েছিলেন নাহিদ। এই অবস্থান কর্মসূচি দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একই ব্যানারে একই সময়ে পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

ওই সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আব্দুল কাদির বলেছিলেন, ‘৪ দফা দাবিতে আমাদের এই আন্দোলন আগামী ৪ জুলাই হাইকোর্টের শুনানি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ছাত্রসমাজ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টি সবকিছু উপেক্ষা করে নায্য আন্দোলন জারি রাখবে।’

এইদিন সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে এসে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ২৫ মিনিট অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে এইদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাল চত্বর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। যা ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে মিলিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের পক্ষে চার দফা দাবি তুলে ধরেন। 

আন্দোলনকারি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা। ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে)। 

এছাড়া সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছিল। 


এর আগে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। 

এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ সংরক্ষিত ছিল। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করে মন্ত্রিসভা। পরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে সেই বছর ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখে সরকার। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। 

এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। 

২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে ২০২৪ সালের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর থেকে মাঠে নামে চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান বেগম খালেদা জিয়ার
টানা দ্বিতীয় জয়ের লক্ষ্য নিয়ে কাল মিয়ানমারের মুখোমুখি বাংলাদেশ
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নকে সাময়িক বরখাস্ত করলেন আদালত
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা হ্রাসে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে: ডেনিশ এনজিও
প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত হলেই বৈষম্য নিরসন হয় : গণশিক্ষা উপদেষ্টা
ডাক বিভাগের কোষাগার ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল রূপান্তরের উদ্বোধন
প্রহসনের নির্বাচনের দায় স্বীকার করে সাবেক সিইসি নুরুল হুদার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
শেরপুরে উদ্ধারকৃত পাইথন বনে অবমুক্ত 
সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রকাশ করেছে ইসি
এনবিআরের আরো পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
১০