ঢাকা, ১৪ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান, কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা ছাত্র রাজনীতির অন্তরালের বিস্মৃত অধ্যায়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে যাদের নাম তাদের অন্যতম একজন হচ্ছেন রাফে সালমান রিফাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এবং শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হলেও তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি আজকের প্রজন্মের জন্য হয়ে উঠেছে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে ছাত্র রাজনীতি, দমন-নিপীড়নের বাস্তবতা, আন্দোলনের কৌশল, ব্যর্থতার ভয়, ট্র্যাজেডি, পারিবারিক প্রতিক্রিয়া এবং একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষার কথা। এটি শুধু একজন ব্যক্তির অভিজ্ঞতা নয়, বরং একটি সময়ের ভেতরের ইতিহাস।
রাফে সালমান রিফাত যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার লাউজানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০১২ সালে ঝিকরগাছা বিএম হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতক এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)-এর ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষকতা করছেন।
বাসস: আপনি বর্তমানে কোন সংগঠনের রাজনীতি করছেন? ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন কি?
রাফে সালমান রিফাত : আমি বর্তমানে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)-এর সঙ্গে যুক্ত। আমি সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছি। এর আগে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ছিলাম।
আমি দীর্ঘ সময় ধরে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত, প্রায় পনেরো বছর। আমি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি। এই পদে থেকেই গত বছরের জুনে ছাত্র রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াই। এর আগে, ২০২৩ সালে আমি শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম।
বাসস: আপনি যখন ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন, তখন তো ক্যাম্পাসে শিবির নিষিদ্ধ ছিল। শিবিরের রাজনীতিতে কীভাবে আসলেন?
রাফে সালমান রিফাত: প্রথমেই আপনার বক্তব্যের সঙ্গে কঠোরভাবে দ্বিমত পোষণ করি। শিবির কখনো ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ছিল না। যদি সত্যিই থাকত, তাহলে এখন কি সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে? কে তুলে নিল? কখন তুলে নিল? আমাকে প্রমাণ দেখান। শিবির নিষিদ্ধ ছিল— এই বয়ানটা আসলে একটি ফ্যাসিবাদী প্রচারণা। ‘পরিবেশ পরিষদ’ নামে পরিচিত একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং তাদের সহযোগী কিছু বামপন্থী ছাত্র সংগঠন।
বাস্তবে শিবির নিষিদ্ধ করার কোনো আইনগত ভিত্তি বা বৈধতাই ছিল না। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু ঐতিহাসিক জুলাইয়ের একেবারে শেষের দিকে অল্প কিছুদিনের জন্য নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে শিবির নিষিদ্ধ করেছিল।
এখন বাস্তব পরিস্থিতির কথা বলি। আমরা দেখেছি, ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে শিবিরের কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম ছিল না। প্রশ্ন করতে পারেন— কেন ছিল না? উত্তর হচ্ছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শুরু থেকেই তারা ছাত্রশিবিরকে টার্গেট করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘটনার সূত্র ধরে সারা দেশে চিরুনি অভিযান চালিয়ে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম দমন করা হয়। পরে ‘জামায়াত-শিবির’ ফ্রেমিং করে এই পুরো গোষ্ঠীকে অমানবিক করে তোলা হয়। আওয়ামী লীগের মিডিয়া স্টাবলিশমেন্ট এবং তাদের কালচারাল ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী একচেটিয়াভাবে এ প্রচারণা চালিয়েছিল।
ফলে শিবিরের পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় নিপীড়ন-নির্যাতনের বৈধ পাসপোর্ট। কাউকে মারতে চাইলে শুধু শিবির ট্যাগ দিলেই যথেষ্ট— এরপর যা খুশি করা যেত, কেউ প্রতিবাদ করত না। প্রথমবর্ষে থাকাকালে আমার চোখের সামনে এক ছাত্রকে শিবির সন্দেহে ১৫-২০ জন ছাত্রলীগ ক্যাডার প্রকাশ্যে দিবালোকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছিল। আশেপাশের সবাই নীরবে তা দেখেছে, কিন্তু কেউ এগিয়ে এসে বাধা দেয়নি বা প্রতিবাদও করেনি।
এ ধরনের তীব্র ডি-হিউম্যানাইজেশনের মুখে প্রধান বিরোধী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলকেও এমন পরিস্থিতি ফেস করতে হয়নি। এমনকি দাঁড়ি রাখা, টাকনুর ওপরে কাপড় পরা, পাঞ্জাবি পরা— এসবকেও শিবির-সন্দেহের চিহ্ন হিসেবে দেখা হত, যা একজন শিক্ষার্থীর জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারত। পুরো বিষয়টি এক ধরনের প্রবল ইসলামোফোবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ছিল। ফলে শিবিরের প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তো দূরের কথা, নিজের পরিচয় প্রকাশ করাও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।
তাছাড়া, শিবির পুরোপুরি কোনো রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন নয়। তাদের মোট কার্যক্রমের খুব সামান্য অংশই রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত।
যা হোক, আমি শিবিরের সঙ্গে যুক্ত হই ক্লাস নাইনে পড়ার সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগেই তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম।
বাসস: কোটা আন্দোলন সম্পর্কে কিছু বলুন। এই আন্দোলনে আপনি কীভাবে যুক্ত হলেন?
রাফে সালমান রিফাত: কোটা আন্দোলনের শুরুটা ঠিক কবে হয়েছে, সে বিষয়ে আমার সঠিক তথ্য জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের কাছ থেকে ২০০৩, ২০০৭-০৮ এবং ২০১৩ সালের কোটা আন্দোলনের গল্প শুনেছি। ২০১৩ সালের আন্দোলনের খবর ওই সময়ের পত্র-পত্রিকায় পড়েছি।
তবে আমার মতে, ২০১৮ সালের এপ্রিল ছিল কোটা আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। সেই আন্দোলনে প্রায় পুরোটা সময় সরাসরি মাঠে ছিলাম। এপ্রিলের ৮ ও ৯ তারিখে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ৮ তারিখ রাতভর ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আমাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের ধোঁয়া আর শব্দে পুরো ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করে।
পরে ১১ এপ্রিল সংসদে দাঁড়িয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এর মাধ্যমে ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জন্ম নেয় নতুন ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’, যা পরে নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ’ হয়।
সেসময় আন্দোলনের সামনের সারির মুখ ছিলেন নুরুল হক নুর, রাশেদুল ইসলাম, হাসান আল মামুন ও ফারুক হোসেনের মতো তরুণ ছাত্রনেতারা। আর আড়ালে থেকে নীতিনির্ধারণ, লজিস্টিক সাপোর্ট ও তথ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তৎকালীন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা। তার মধ্যে ছিলেন, শরফুদ্দিন, আলী আহসান জুনায়েদ, শামীম রেজায়ী প্রমুখ। আমি এবং শিবিরের অন্যান্য কর্মীরাও সরাসরি মাঠে অংশ নিয়েছিলাম।
এরপর ২০২৪ সালের জুনে কোটা আন্দোলন পুনরায় জেগে ওঠে এবং সেই আন্দোলন ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অংশগ্রহণে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পতনের আন্দোলনে রূপ নেয় এবং তার পতন ঘটে।
বাসস: এর আগে কি আপনি অন্য কোনো আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন? ২০২৪ সালের আন্দোলনে আপনার ভূমিকা কী ছিল? সমন্বয়কদের মধ্যে আপনার নাম নেই কেন?
রাফে সালমান রিফাত: ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের আগে আমি ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি। তারও আগে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ডাকা আন্দোলনেও আমি অংশ নিই।
২০২৪ সালের আন্দোলনে আমার একটি বড় দায়িত্ব ছিল নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করা। যদিও আমি বাড্ডা ও নতুনবাজার এলাকায় মাঠেও ছাত্র-জনতার সঙ্গে সরাসরি আন্দোলন করেছি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির নেতাদের একটি অংশের সঙ্গে সাদিক কায়েম ও ফরহাদসহ আরো অনেকের সমন্বয়ে কাজ করেছি। নয় দফাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ধারণা তৈরিতেও ভূমিকা রেখেছি। শেষ দিকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে হাসনাত, আসিফ, মাহফুজদের সঙ্গে একাধিকবার সরাসরি আলোচনা করেছি।
এক দফা দাবি ঘোষণার আগেই আমরা খসড়া ঘোষণাপত্র, জাতীয় সরকারের রূপরেখা এবং এক দফার পরবর্তী অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। সেই মিটিংগুলোতে আমার দায়িত্ব ছিল পয়েন্টগুলো নোট করা এবং পরে সেগুলো টাইপ করে সাজানো। এরপর সাদিক কায়েমের মাধ্যমে আসিফ ও নাহিদদের কাছে সেগুলো পাঠানো হতো। তারা নিজেদের মধ্যে চূড়ান্ত আলোচনা করে ঘোষণা দিতেন।
৫ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে প্রফেসর ড. ইউনূসের নাম ঘোষণা করা হয় এবং পরের দিন দুপুর ৩টা পর্যন্ত পার্লামেন্ট বিলুপ্তির জন্য আল্টিমেটাম দিয়ে দু’টি ভিডিও বার্তা প্রচারিত হয়। ঐতিহাসিক সেই ভিডিও বার্তায় ক্যামেরার সামনে ছিলেন নাহিদ, আসিফ ও বাকের। নাহিদ সেখানে বক্তব্য দেন। আর ক্যামেরার পেছনে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার।
যে কারণে সাদিক কায়েম, ফরহাদ, মহিউদ্দিন, আলী আহসান জুনায়েদ, মাহফুজ ও নাসিরদের নাম সমন্বয়কদের তালিকায় নেই, একই কারণে আমার নামও নাই।
বাসস: সরকার পতনের এই আন্দোলনে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী ছিল? শিবির কোন কোন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে?
রাফে সালমান রিফাত : এই আন্দোলনে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। বহুবার মনে হয়েছে— এই বুঝি আন্দোলন থেমে গেল। কিন্তু প্রতিবারই কোনো না কোনো ব্রেকিং ইভেন্ট আন্দোলনকে নতুন করে উদ্দীপনা দিয়েছে।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাওয়ার পর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে নামে। আমি নিজে ১৮ ও ১৯ জুলাই নতুনবাজারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সবজি বিক্রেতা, রিকশাচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনে অংশ নিই।
এরপর কারফিউ ও ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণে আন্দোলনে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিলেও, ডিবি অফিসে নাহিদ ও আসিফদের ‘আন্দোলন প্রত্যাহার’ ভিডিও বার্তাটি প্রত্যাশিত প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয় এবং উল্টো ‘গান পয়েন্ট বিবৃতি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে জনমত তাদের পক্ষে যায়।
ফেসবুক প্রোফাইল লাল হওয়া একটি বড় টার্নিং পয়েন্ট ছিল। 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি আন্দোলনের জোয়ার ফেরায়। এরপর আসে ঐতিহাসিক এক দফা ঘোষণার দিন।
এই আন্দোলনে ছাত্রশিবিরের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল নীতিনির্ধারণ বা পলিসি মেকিংয়ে। সামনের সারির নেতারা গ্রেফতার হওয়ার পরও প্রতিদিনের কর্মসূচি নির্ধারণ, মিডিয়া ব্যবস্থাপনা, পরের সারির নেতৃত্বের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মাঠ পর্যায়ে জনশক্তি সক্রিয় রাখা, জামায়াত ও শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় করা— এসবকিছুতে নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবির।
বিশেষভাবে ঢাবি শিবিরের তৎকালীন সভাপতি সাদিক কায়েম, সেক্রেটারি ফরহাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন এবং সেক্রেটারিয়েটের অন্যান্য সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরও এ সময় পুরোপুরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সঙ্গে সমন্বয় করেছিল। মঞ্জুরুল ভাই, জাহিদ ভাই, নুরুল ইসলাম ভাইদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সমন্বয় রক্ষা করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বর্তমান দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ ভাই।
ফলে বলা যায়, পুরো আন্দোলনের সর্বত্রই ছাত্রশিবির ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল।
বাসস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পরদিনই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শক্তভাবে মাঠে নামে। এই ঘটনার পেছনে আসল রহস্য কী ছিল বলে মনে করেন? এ আন্দোলনে তাদের অবদান কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
রাফে সালমান রিফাত: এর আসল রহস্য কী, তা আমি সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, সেটাই ছিল প্রকৃত অর্থে জেনারেশন জেডের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যা করে দেখিয়েছে, তা সত্যিই অভূতপূর্ব। আমি কখনো কল্পনাও করিনি। তাদের সাহসিকতা এই জাতির ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে স্থান পাবে।
মূলত তাদের অপরিসীম সাহস ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই এই আন্দোলন কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ‘খুনি হাসিনার পতন’-এর একদফা আন্দোলনে রূপ নেয়।
তাদের অবদান মাপার কোনো নির্দিষ্ট মানদণ্ড নেই। তবে এটুকু নির্ভয়ে বলা যায়— এখন থেকে যেকোনো ন্যায্য আন্দোলনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেখানে থেমে যাবে, সেখান থেকেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জেগে উঠবে। এর বাস্তব উদাহরণ আমরা পেয়েছি।
বাসস: আন্দোলন সফল করতে সবচেয়ে কার্যকরী সিদ্ধান্তগুলো কী ছিল বলে আপনি মনে করেন?
রাফে সালমান রিফাত: আমার মতে, আন্দোলনের সফলতায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল নয় দফা দাবী এবং সেটিতে অটল থাকা। সরকার তাদের এজেন্সির মাধ্যমে বিকল্প একটি ‘আট দফা’ দাবী তোলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি।
এরপর বলব, ফেসবুক প্রোফাইল লাল করা, যার থিম ছিল ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’। এটি একটি প্রতীকী কর্মসূচি হলেও দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং জনমনে গভীর প্রভাব ফেলে।
তৃতীয়ত, ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিটি ছিল আরেকটি ব্রেকথ্রু মুহূর্ত। কর্মসূচি বাস্তবায়নে সাদিক কায়েমকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়েছে।
তাদের কৌশল ছিল, একদিন হার্ড কর্মসূচি, পরদিন সফট কর্মসূচি। যেমন, একদিন মাঠের কর্মসূচি, আরেকদিন অনলাইনে সাইকোলজিক্যাল প্রভাব তৈরির মতো কর্মসূচি। এই স্ট্র্যাটেজিও সফল হয়েছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আন্দোলন হয়তো পুরোপুরি মেটিকুলাসলি ডিজাইন করা ছিল না, তবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্তগুলোর কারণে তা ক্রমে একটি সুসংগঠিত ও চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়া গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। সেটিই এ আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
প্রশ্ন: আন্দোলনের 'নয় দফা' দাবির লেখকত্ব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আপনার মতে, নয় দফার রচয়িতা কারা? কীভাবে ও কোথায় এটি তৈরি হয়েছিল?
রাফে সালমান রিফাত: এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। নয় দফার কোন একক লেখক নেই। আমরা যারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নানামূখী সমন্বয়ে ছিলাম, বিভিন্ন জন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভূমিকা রাখার সুযোগ পেয়েছি। একেকজন একেকভাবে মন্তব্য, পরামর্শ দিয়ে ভূমিকা রেখেছে।
আমার স্মরণ অনুযায়ী, দফা নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয় ১৮ জুলাই দুপুরে। সাদিক কায়েম, ফরহাদরা সমন্বয়কদের সাথে সমন্বয় করছিল। সাংবাদিকদের একটি গ্রুপও খসড়া প্রস্তুতিতে যুক্ত ছিল। জুনায়েদ ভাই, গালিব ভাই সহ আমাদের সাবেক ঢাবি শিবির সভাপতিদের ছোট্ট একটা গ্রুপ ছিল। আমরা দুপুরের দিকে অনলাইনে মিটিং-এ বসি দফা প্রস্তুত করতে।
প্রথমে ‘আট দফা’ একটি খসড়া তৈরি হয়। গালিব ভাই শুরুতেই বলেন— এমন সব দাবি রাখতে হবে, যা হাসিনা মানবে না। ফলে প্রথম দাবিটিই রাখা হয়, ‘শেখ হাসিনাকে ছাত্র হত্যার দায় স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে’।
আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল, তার দাম্ভিকতায় সে কখনই এটি মানবে না। বিকেলে আমি এই আট দফা ‘সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ’-এর মেসেঞ্জার গ্রুপে শেয়ার করি। সেখানে আকরাম আর আমি শহীদদের তালিকা ডকুমেন্ট করার প্রস্তাব দেই।
সেদিন সন্ধ্যায় ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট শুরু হলে আমাদের অনলাইন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরের দিন সাদিক ভাই, সিবগা ভাই সহ বেশ কয়েকজন মিলে দফাগুলো আরেকবার পর্যালোচনা করে আরও এক দফা যুক্ত করে ফাইনালি নয় দফা প্রস্তুত করেন। ঐ সময়টাতে নাহিদ, আসিফদেরকে গুম করে রাখা হয়।
সাদিক কায়েম ভাই আমাকে ভিন্ন একটি নম্বর থেকে ফোনে টেক্সট করে সেই দফাগুলো পাঠান। পরে তা আব্দুল কাদেরের সাথে আলোচনা করে তার নাম দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়— শিবিরের পক্ষ থেকে।
পরদিন পত্রিকাগুলোতে নয় দফা প্রকাশিত হয়। কিন্তু খেয়াল করেছি টিভি চ্যানেলগুলোর কোনটিতেই নয় দফার প্রচার দেখানো হয়নি।
বাসস: ‘নয় দফা’ থেকে ‘এক দফা’ কীভাবে এলো? হঠাৎ করে শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করার কারণ কী? এক দফা ঘোষণার পর কী কী চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছিল?
রাফে সালমান রিফাত: নয় দফা থেকে এক দফা পর্যন্ত যেতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লেগেছে। এটি মোটেও হুট করে হয়নি। পুরো আন্দোলনের একটি মোমেন্টাম তৈরির পরই এক দফা ঘোষণা করা হয়।
৩ আগস্ট শহীদ মিনারে আমরা নাহিদ, আসিফদের সঙ্গে ছিলাম। সেদিন সকালেই সাদিক ভাই, জুনায়েদ ভাইসহ অনলাইনে গ্রুপ কলে বসে আমরা এক দফা ঘোষণাপত্র, জাতীয় সরকারের রূপরেখা ও অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করি।
আগের রাত থেকেই প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু সেদিন বিকেলে নাহিদের আসতে দেরি হওয়ায় আমার মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। কারণ তখন জরুরি অবস্থা বা মার্শাল ল’ জারির গুঞ্জন ছিল।
এক পর্যায়ে আমি আসিফকে ডেকে বলি, ‘তুমি ঘোষণা দিয়ে দাও’। কিছুক্ষণ পর নাহিদ আসে এবং ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে এক দফা ঘোষণা দেয়।
এক দফা ঘোষণার পর বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পরের দিনের লড়াই চালিয়ে যাওয়া।
৪ আগস্ট ছিল আওয়ামী লীগের শেষ লড়াই। ওইদিন পুলিশ, র্যাব নয়, বরং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী ক্যাডাররাই মাঠে নামে।
শাহবাগ, ফার্মগেট, কাওরানবাজারজুড়ে দিনভর চলে গুলিবর্ষণ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। কিন্তু জনতার প্রবল প্রতিরোধে
এক পর্যায়ে তারা টিকতে পারেনি। আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ কয়েকটি ভবন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
সেদিন সন্ধ্যার পর পরবর্তী দিনের তথা ৫ আগস্টের কর্মসূচি নির্ধারণ নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। প্রথমে শ্রমিক ও নারী সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু জুনায়েদ ভাই, সাদিক ভাইয়ের তীব্র আপত্তিতে সিদ্ধান্ত পাল্টে পরদিন ৫ আগস্টেই ‘মার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণা করা হয়।
বাসস: যখন প্রতিদিন শত শত মানুষ মারা যাচ্ছিল, তখন আপনার মানসিক অবস্থা কেমন ছিল? আপনি কি চোখের সামনে মৃত্যু দেখেছেন? এসব মৃত্যু আপনার মনে ভয় বা আতঙ্ক তৈরি করেছিল কি?
রাফে সালমান রিফাত: সেসময়ের মানসিক অবস্থা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এক ধরনের গভীর ট্রমা কাজ করেছিল অনেকদিন। চোখের সামনে অনেক গুলিবিদ্ধ মানুষ দেখেছি। হাসপাতালের সামনে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। চারপাশের মানুষের চোখে তখন একইসঙ্গে তীব্র সাহস, আগুনের হলকা, আর হৃদয়বিদারক বেদনা উপচে পড়ছিল, যেন সাহস আর শোকের এক অবর্ণনীয় মিশেল।
বাসস: এই আন্দোলনে আপনার কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতা বা ট্র্যাজিক ঘটনা আছে কি, যা আপনাকে সারা জীবন অনুপ্রাণিত করবে?
রাফে সালমান রিফাত: হ্যাঁ, আমার জীবনে সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর একটি ঘটেছিল ২ আগস্ট জুমার নামাজের পর। মসজিদ আল মুস্তাফা থেকে ইউআইইউ-এর শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল নতুনবাজার পর্যন্ত গিয়েছিল। আমি তখন কয়েকজন শিক্ষকসহ মিছিলে অংশ নিই।
মিছিলের শুরুতে আমার স্ত্রী আমাদের ছয় মাস বয়সী ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়ান। অনেকে সেই মুহূর্তের ছবি তুলে ফেলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ছবি ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর টেলিগ্রাম চ্যানেলসহ বিভিন্ন ফেসবুক পেজে ভাইরাল হয়ে যায়।
আন্দোলনের সময় আমি সাধারণত ছবি তোলা থেকে দূরে থেকেছি। আমার নিজের কোনো ছবি পাওয়া না গেলেও আমার ছেলের ছবি জুলাই আন্দোলনের একটি আইকনিক প্রতীক হয়ে থাকবে আমার কাছে। এই ঘটনা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণাগুলোর একটি।
আমার ছেলে মাহসান আল ফাতিহ, মাত্র ছয় মাস বয়সে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে— এটাই আমার জন্য গর্বের।
বাসস: আপনার কি মনে হয়, এই গণঅভ্যুত্থানের পর একটি নতুন রাজনৈতিক পরিসর বা সিস্টেম গড়ে তোলা প্রয়োজন? সেটা কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
রাফে সালমান রিফাত: অবশ্যই প্রয়োজন। এই ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা শুধু জনগণকে দমন করেনি, বরং রাষ্ট্রীয় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, দক্ষতা, ও নৈতিকতা-এসব মূল্যবোধকে হত্যা করা হয়েছে।
আমাদের রাজনৈতিক পরিসর এখন দুর্নীতি, দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতিতে নিমজ্জিত। তাই প্রথমেই প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরেও ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পেশিশক্তি দিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
সবচেয়ে জরুরি হল, রাজনীতি থেকে অপরাধ ও অপরাধীদের বিচ্ছিন্ন করা। কোনো খুনি, ধর্ষক, চোর, দুর্নীতিবাজ বা সন্ত্রাসী যেন রাজনীতিতে প্রবেশ করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
এই লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্যমত্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী চুক্তি হওয়া দরকার। যদি তা না হয়, তাহলে আরো একটি সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন হবে, যা রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে গড়ে উঠবে।
বাসস: যদি এ আন্দোলন সফল না হত, তাহলে কী হত বলে আপনি মনে করেন?
রাফে সালমান রিফাত: এই আন্দোলন সফল না হওয়ার বিকল্প ছিল না, এটাই বাস্তবতা। সফল না হওয়ার মূল্য এতটাই ভয়াবহ হত যে, তা কল্পনাও করতে পারছি না।
কত মানুষের জীবন, কত শহীদের রক্ত, কত পরিবারের কান্না, কত স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে যেত— তা হিসাবের বাইরের ব্যাপার।
এই আন্দোলনে জয়ই ছিল একমাত্র নিয়তি। কারণ, এটি শুধু একটি রাজনৈতিক দাবি নয়, এটি ছিল জনগণের আত্মার লড়াই, ভবিষ্যতের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম।
এখন আমরা প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে নেই বরং এক দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের লড়াইয়ে নেমে পড়েছি। এই অভ্যুত্থান কেবল একটি সরকারের পতন নয়, এটি একটি সভ্যতার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার সূচনাও।
বাসস: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রাফে সালমান রিফাত: বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।