আমার শহরে জুলাই অভ্যুত্থান

রাজশাহীতে ৫ আগস্ট পরবর্তী ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতেন শিক্ষার্থীরা

বাসস
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৫৮
ছবি: বাসস

ওমর ফারুক

রাজশাহী, ১৫ আগস্ট ২০২৫ (বাসস): চব্বিশের ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার নজিরবিহীন আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজশাহী মহানগরেও লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে বিজয় উদযাপন করে। অপরদিকে কিছু বিক্ষুদ্ধ জনতা ক্ষোভে মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়সহ নগরের বিভিন্ন থানা, ট্রাফিক অফিস ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। 

অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরাও প্রাণে বাঁচতে আত্মগোপনে চলে যান। মহানগরের রাস্তা-ঘাট হয়ে যায় পুলিশ শূন্য। রাস্তায় ছিল না কোনো শৃঙ্খলা। ২/৩ দিন এভাবেই চলে। এতে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েন পথচারী ও যাত্রীরা।

সে সময় অচল অবস্থা কাটাতে ৮ আগস্ট থেকে রাজশাহী মহানগরের সব রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোড়গুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেন। তাদের এ কাজ ব্যাপক প্রশংসিত হয়। 

বিশেষ করে মহানগরের রেলগেট, রেল স্টেশন মোড়, বর্নালী মোড়, ভদ্রা, সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, গণকপাড়া, মনিচত্বর, আলুপট্টি, সিএন্ডবি মোড়, কোর্ট স্টেশন, লক্ষ্মীপুর মোড়, সিটি বাইপাস মোড়, তালাইমারি ও নওদাপাড়া মোড়সহ আরো কিছু এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা কাগজপত্র বিহীন গাড়ি ও হেলমেট চেকিং করতেন। এ কাজ অত্যন্ত শৃঙ্খলার সঙ্গেই করতেন তারা। 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে তখন রাস্তায় বের হয়ে চালকরা যে যার মতো এলোমেলোভাবে গাড়ি চালাতেন। এজন্য যানজট লেগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন যাত্রী ও পথচারীরা। প্রচণ্ড গরমে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হতো তাদের। জরুরি হলেও কেউ রাস্তা পার হতে পারতেন না। 

এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে নেমে আসার পর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসে। শিক্ষার্থীরা ওই সময় সারি বদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে হাতে লাঠি নিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করতেন। কাউকে উল্টো পথে যেতে দিতেন না। তারা কারো কোনো তদবিরও শুনতেন না। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে গরমে ঘেমেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তায় শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

এ সময় পথচারীরা খুশি হয়ে শিক্ষার্থীদের খাবার ও পানি দিয়ে যেতেন। শিক্ষার্থীরাও সেগুলো খুশি মনে গ্রহণ করতেন। এভাবে পুলিশ মাঠে না ফেরা পর্যন্ত তারা রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ধীরে ধীরে কিছু এলাকায় কার্যক্রম শুরু হয়ে ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় ফিরে আসে। ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় নেমে আসলেও শিক্ষার্থীরা সার্জেন্টদের সঙ্গে মিলে ডিউটি করতেন। পুলিশ পুরোপুরি রাস্তায় ডিউটি শুরু করলে শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যান।

ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা নীলা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আমাদের নগরের রাস্তায় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য রাস্তায় নেমেছিলাম। পুলিশ ভাইয়েরা না ফেরা পর্যন্ত রাস্তায় থেকেছি। 

সুমন নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আমাদের দেশের প্রয়োজনে রাস্তায় নেমেছিলাম, বিজয় এসেছে। প্রয়োজনে আবারও রাস্তায় নামবো। আমরা এ দেশের সন্তান। যখন প্রয়োজন হবে, তখনই আমরা রাজপথে নামবো। 

মারুফ নামের এক পথচারী বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের মতো প্রসংশনীয় একটি কাজ করেছে। এটি আমাদের প্রয়োজনেই করেছে। শিক্ষার্থীদের এ কাজ সবার মধ্যে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

তৎকালিন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার অনির্বাচন চাকমা বলেন, নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীরা ভালো কাজ করেছে। এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমরা শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছে বিএনপি-জামায়াতের 
সংসদ নির্বাচনের একই দিনে পৃথক ব্যালটে গণভোট : ইসির প্রজ্ঞাপন
খালেদা জিয়ার সুস্থতায় দোয়া ও এতিম শিক্ষার্থীদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ 
স্থাপত্য মানুষের জীবন, আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যৎকে গড়ে তোলার সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ : শিক্ষা উপদেষ্টা 
৩০০ আসনে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে ইসির প্রজ্ঞাপন
পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য : পার্বত্য উপদেষ্টা
স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধের অনুমোদন দিল অস্ট্রিয়া পার্লামেন্ট
নির্বাচন উপলক্ষে আনসার-ভিডিপির জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের ব্যাপক রদবদল
গত দেড় বছরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী অনেকে সরকারি চাকরি পেয়েছেন : বাংলাফ্যাক্ট
গভীর নলকূপের গর্ত থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার সাজিদকে হাসপাতালে মৃত ঘোষণা
১০