বাসস
  ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১৯:৫৯

বৃষ্টির জলে ভাসছে চট্টগ্রাম : অনেক পরিবার পানিবন্দি, পাহাড় ধসের আশঙ্কায় আশ্রয়কেন্দ্রে ২৫০ পরিবার

চট্টগ্রাম, ৬ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস) : ছয় দিন ধরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে চট্টগ্রামে। তবে গত তিন দিনের ভারি বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ এলাকা জলে ভাসছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নগরীর কয়েক হাজার পরিবার। অসংখ্য সড়কে সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। পানিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের অন্তত আড়াইশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের জন্য খোলা হয়েছে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র। এর মধ্যে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় আকবরশাহ এলাকার বিজয়নগর ও ঝিল পাহাড়গুলোতে অভিযান চালিয়ে ২৫০টি পরিবারকে দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
রোববার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে নগরীর বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকা, ফিরিঙ্গিবাজারের একাংশ, কাতালগঞ্জ, শান্তিবাগ আবাসিক এলাকা, কে বি আমান আলী রোড, চান্দগাঁওয়ের শমসের পাড়া, ফরিদার পাড়া, পাঠাইন্যাগোদা, মুন্সীপুকুর পাড়, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, তিন পুলের মাথা, বড়পুল, ছোট পুল, রিয়াজউদ্দিন বাজার, মুরাদপুর, ষোলশহর, কমার্স কলেজ এলাকা এবং হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে ও অলিগলি পানিবন্দি হয়ে পড়ে। গত মঙ্গলবার (১ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির ষষ্ঠ দিনে রবিবার সকাল থেকে নগরীতে জলাবদ্ধতা তীব্রতা ধারণ করে। তবে গত তিন দিনের ভারি বৃষ্টিতে নগরীর অধিকাংশ এলাকার কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। 
এসব এলাকার প্রধান সড়কের কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, আবার কোথাও বুক ছুঁই ছুঁই পানিতে তলিয়ে গেছে। বাসায় পানি ঢুকে যাওয়ায় আসবাবপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নষ্ট হচ্ছে। বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভিজে গেছে বেশ কিছু পণ্য। এছাড়া পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় রিকশায় অথবা পায়ে হেঁটে হাঁটুপানি মাড়িয়ে অনেককে কর্মস্থলে যাত্রা করতে দেখা যায়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে সামনে কোমর সমান পানি জমেছে। দুপুরে নগরীর চকবাজার কাঁচাবাজারে বিক্রেতাদের শাকসবজিসহ বিভিন্ন পণ্য পানিতে ভাসতে দেখা গেছে। পাশের চকভিউ সুপার মার্কেটের নিচতলার দোকানগুলোর ভেতরে নোংরা আবর্জনা পানিতে ভাসছিল। 
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি দাস বলেন, ‘রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নি¤œচাপের কারণে এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি আরও তিনদিন পর্যন্ত অর্থাৎ ৯ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি জানান, বর্ষাকাল এবং মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রামের কোথাও কোথাও বজ্রপাতসহ ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মাঝারী থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে আরও দুয়েকদিন। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত ও নদীবন্দরগুলোর জন্য ১ নম্বর নৌ-সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।


নগরীর বাকলিয়া থানাধীন ডিসি রোডের বাসিন্দা রাকিবুল হাসান বলেন, তিন দিন ধরে এ এলাকার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি। বিশেষ করে কলোনিগুলোর বাসিন্দারা জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে আছেন। পাশাপাশি বেশিরভাগ ভবনের নিচতলায় পানি ঢুকেছে। এখানে আগেও বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হতো। তবে এবার বেশি ডুবেছে। অনেক সড়কের উন্নয়ন কাজ হয়েছে গত কয়েক বছরে। এ কারণে সড়কগুলো উঁচু করা হয়েছে। তবে সেভাবে উঁচু করার সুযোগ হয়নি কলোনি এবং বাসাবাড়িগুলো। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই এখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানিবন্দি অনেক পরিবারে ডুবে গেছে রান্নার চুলাও। এসব পরিবারে রান্না হচ্ছে না তিন দিন ধরে। 
নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সালাহ উদ্দিন জানান, এবারের বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় রিয়াজুদ্দিন বাজারে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে শনিবারের জলাবদ্ধতায় অন্তত আড়াইশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টিতে রিয়াজুদ্দিন বাজারে পানি বেড়েছে। এখানে কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নষ্ট হয়েছে। অনেক পণ্য স্রোতে ভেসে গেছে। এতে বিপুল অর্থের ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘পাহাড়ে যাতে মানুষের আর প্রাণ না দিতে হয় সেজন্য কাজ করছি। মাইকিং থেকে শুরু করে সবাইকে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রতিদিন জেলা প্রশাসনের টিম কাজ করছে। শনিবার রাতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে ২৫০টি পরিবারকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়েছি। তাদের জন্য শুকনো খাবার থেকে শুরু করে প্রতিবেলার খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
অভিযানকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক, স্টাফ অফিসার টু ডিসি প্লাবন কুমার বিশ্বাস ও আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।