বাসস
  ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০

কুল চাষে সফল সাতক্ষীরার তরুণ উদ্যোক্তা ইয়ারব 

কুল চাষ করে সফল তরুণ উদ্যোক্তা সাতক্ষীরার ইয়ারব হোসেন। ছবি: বাসস

\ আসাদুজ্জামান \

সাতক্ষীরা, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : কুল চাষ করে সাতক্ষীরার তুজুলপুরের ইয়ারব হোসেন এখন একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। কুল চাষের পাশাপাশি এ তরুণ উদ্যোক্তা ড্রাগন ও মাছ চাষও শুরু করেছেন। তার দেখাদেখি অনেক বেকার যুবক এখন কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেছেন। অনেকেই আসেন তার কাছে পরামর্শ নিতে।

বল আপেল, থাই আপেল ও টক কুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির কুল চাষ করে সফল হয়েছেন তরুণ এ উদ্যোক্তা।  এ উদ্যোক্তা ২০১২ সালে ৫ বিঘা জমি অন্যের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে সেখানে কুল চাষ শুরু করেন। ওই বছরই তিনি সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৭ লাখ টাকা লাভ করেন। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেখান থেকে তার কুল চাষ বাড়তে বাড়তে এবছর তিনি ৩১ বিঘা জমিতে কুল, ৬ বিঘা জমিতে ড্রাগন ও ৫ বিঘা জমিতে মাছ চাষ করেছেন। তার এ কৃষিকাজে বর্তমানে ৩৫ থেকে ৪০ জন মানুষ কাজ করে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সচ্ছলভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার এমন সাফল্যে বর্তমানে গোটা এলাকায় সাড়া ফেলেছে।

সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের তুজুলপুর গ্রামের মৃত গোলাম মোরশেদ এবং কোরাইশা খাতুন দম্পতির কনিষ্ট পুত্র ইয়ারব হোসেন (৩৬)। ইয়ারবের স্ত্রীর নাম শেফালি খাতুন (২৭)। তাদের আব্দুর রহমান (৭) ও আব্দুর রহিম (৪) নামের দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠা ইয়ারবের ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজের প্রতি বেশি ঝোঁক ছিল। আর এ কারনে তিনি ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া শেষ করে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে শুরু করেন। অক্লান্ত পরিশ্রম আর সাধনার ফলে আজ তিনি একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা।

কৃষিতে সফল এ তরুণ উদ্যোক্তা জানান, ২০১২ সালে আমি আগরদাড়ি ইউনিয়রে ইংড়ি গ্রামে ৫ বিঘা জমি অন্যের কাছ থেকে লিজ নিয়ে সেখানে বল আপেল, থাই আপেল ও টক কুল চাষ শুরু করি। সেখানে আমি মোট ৪ লাখ টাকা পুঁজি খাটাই। আমি ওই বছরই সেখান থেকে প্রায় ১১ লাখ টাকার কুল বিক্রি করি। খরচ বাদে আমার সেখান থেকে লাভ হয় প্রায় ৭ লাখ টাকা। দীর্ঘ ৭ বছর আমি ওই এলাকায় কুল চাষ করি। সেখান থেকে আমি আস্তে আস্তে আমার এ কুল বাগান বাড়াতে থাকি।

তিনি আরো বলেন, আমি আমার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের বিহারীনগরে গত বছর ২৯ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সেখানে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ করি। সেখান থেকে আমার কুল বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ লাখ। গত বছরও সবমিলিয়ে আমার প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। এবছর আমি ৩১ বিঘা জমিতে কুল বাগান, ৬ বিঘা জমিতে ড্রাগন ও ৫ বিঘা জমিতে সাদা মাছের চাষ করেছি। এতে আমার সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

কিন্তু এবছর অতিরিক্তি বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে কুলের খুব একটা ফলন ভালো হয়নি। এবার লাভ নিয়ে অনেকটা সংশয়ে রয়েছি। ইতোমধ্যে কুল বাগান থেকে কুল সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনিসহ তার বাগানের কর্মচারীরা। তার কুল বাগান ঘুরে দেখতে আসছেন অনেক বেকার যুবক। তার দেখাদেখি তার এলাকার বেকার যুবকরা কুল চাষ শুরু করেছেন বলে তিনি জানান।

ইয়ারব হোসেনের মা কোরাইশা খাতুন বলেন, আমার ছোট ছেলে ইয়ারব, ছোট বেলা থেকেই সে তার বাবার  সঙ্গে কৃষি কাজ শুরু করে। ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সে কৃষি কাজে আরো বেশী মনোযোগী হয়। সে নিয়মিত তার কুল বাগান পরিচর্যা করে। এ কারনেই সে আজ কৃষিকাজে সফল হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় চলতি মৌসুমে ৮৪১ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ৫৬৯ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১১২ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় কুলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৮০ মেট্রিক টন।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরার বেলে দোঁআশ মাটি ও নাতি শীতোষ্ণ জলবায়ু কুল চাষের উপযোগী। উচ্চ ফলনশীল এ কুল চাষ করে এ অঞ্চলের কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা ইয়ারব হোসেনকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছি। তিনি খুব অল্প সময়ে কুল চাষে যেভাবে সফলতা পেয়েছেন, সেটা অন্যদের জন্য একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। তার এ সফলতা দেখে অনেক বেকার তরুণরা কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তাই বেকার যুবকরা বসে না থেকে কুল চাষে এগিয়ে আসলে বেকারত্ব দুর হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি আসবে।