শিরোনাম
ঢাকা, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ (বাসস) : সুপ্রিমকোর্টসহ দেশের সব আদালতে কোনো ধরনের মিছিল-সমাবেশ না করার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশনা দিয়ে লিখিত আদেশ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ চার বিচারপতির স্বাক্ষরের পর এ আদেশ প্রকাশ করা হয়েছে। লিখিত আদেশে বিএনপির সাত আইনজীবীনেতাসহ সব আইনজীবীকে মিছিল-সমাবেশ না করার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় (১৫ বিএলটি হাইকোর্ট বিভাগ ৬৬) কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণসহ দেশের সব আদালতে কোনো ধরনের মিছিল-সমাবেশ না করার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য গত ৩০ আগস্ট আইনজীবীদের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে জাতীয়তবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক এটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীসহ বিএনপির সাত আইনজীবী নেতার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ১৯ অক্টোবর দিন ধার্য করে আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
২০০৫ সালে বিচারপতি আব্দুল মতিন ও বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের মিছিল-সমাবেশ না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই রায় কঠোরভাবে আপিল বিভাগ আইনজীবীদের মেনে চলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ' উল্লেখ করে দেয়া বক্তব্যকে ইস্যু করে আপিল বিভাগের দুই বিচারকের পদত্যাগ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ কর্মসূচি পালন করছিলো বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী সংগঠন।
এসব কর্মসূচি আদালত অবমাননার সামিল উল্লেখ করে বিএনপিপন্থী সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনটি গতকাল দাখিল করা হয়।
আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠা সাত আইনজীবী হলেন-জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক এটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, এডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিমকোর্ট শাখার সভাপতি এডভোকেট আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সহসম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিমকোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে গত ২৭ আগস্ট বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে দেয়া বক্তব্যের কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করে গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা আবেদনটি করেন। এতে বিচারপতিদের নিয়ে ব্যানার, লিফলেটসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মিছিল ও অবস্থানের ছবি যুক্ত করা হয়।
আবেদনের পক্ষের আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি সাংবাদিকদের বলেন, মানুষের শেষ ভরসাস্থল সুপ্রিমকোর্ট। এখানে রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্যে বিচারকদের নিয়ে বক্তব্য কাম্য নয়। সকলেরই উচিত সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা।
একই সঙ্গে হাইকোর্টের (১৫ বিএলটি) স্বতঃপ্রণোদিত রায়ের নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টের ওই রায়ে সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর আগামী ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সুপ্রিমকোর্টের অবকাশ শুরু হচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটিসহ অবকাশ শেষে ৮ অক্টোবর নিয়মিত আদালত বসবেন।
এডভোকেট নাহিদ সুলতানা যূথী সাংবাদিকদের বলেন, বিচারপতি এম এ মতিনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চের দেয়া রায়ের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে বলেছেন আপিল বিভাগ। রায়ের সারাংশ অনুসারে আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ঘেরাও, প্রিকেটিং, সমাবেশ অথবা এমন কোনো কাজ, যা বিচারকাজে বাধা প্রদান করে, তা করতে পারবে না। আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের মিছিল-মিটিং, প্রিকেটিং করতে পারবে না। এ ছাড়া যারা আদালত অবমাননা করবে, তারা বাংলাদেশের কোনো আদালতে আইনজীবী হিসেবে দাঁড়াতে পারবে না বলে ওই রায়ে রয়েছে।
এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত রায়ের নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করতে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় ছিল, সব আদালত প্রাঙ্গণে মাইক ব্যবহার করা যাবে না, মিছিল-মিটিং করা যাবে না। এই আদেশ অমান্য করে কোনো কাজ করলে আদালত অবমাননা হবে। অবমাননার বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের আদালতের কার্যক্রম থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিরত থাকবেন।