শিরোনাম
ঢাকা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ (বাসস) : বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রয়াত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়শা খানম স্মারকগ্রন্থ ‘মুক্তিপথের অনিঃশেষ অভিযাত্রী’- এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান আজ রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘আয়শা খানম স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদ-নাগরিক কমিটি’-এর উদ্যোগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। আজীবন সংগ্রামী নারী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক আয়শা খানমের সংগ্রাম ও অবদানের আলোচনা ও স্মৃতিচারণের উদ্দেশ্যে এ গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি এবং লেখক, গবেষক ও প্রকাশক মফিদুল হক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আয়শা খানমের পরিবারের সদস্য সৈয়দা মুনিরা আক্তার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বাংলাদেশের গৌরবের দশক ষাটের দশক। এই দশকে মুক্তিযুদ্ধ নির্মাণের বড় অংশীদার ছিলেন আয়শা খানম। তার জীবন প্রবাহিত হয়েছে সমতার ধারা, অগ্রসরতার ধারার মধ্য দিয়ে। বইটির মাধ্যমে আয়শাকে দেখার পাশাপাশি আয়শার সময়ের সমাজের পরিস্থিতিকে পরীবীক্ষণ করা যাবে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আয়শা খানম ছিলেন এক বিদ্রোহী ও সাহসী অগ্নি মশাল। বিশ^সভ্যতাকে অপরিহার্য মানবতার দিকে ধাবিত করতে তিনি এক লড়াকু যোদ্ধা। এদেশের নারী আন্দোলনের নেত্রী হিসেবে তিনি অক্ষয় হয়ে থাকবেন।
মফিদুল হক বলেন, পরিবর্তিত সামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সমাজের পশ্চাৎপদ নারীদের কল্যাণের লক্ষ্যে নারী আন্দোলনকে সংগঠিত করতে, নারীর জাগরণ তৈরির জন্য তার জীবনদর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে এই স্মারকগ্রন্থে।
শাহরিয়ার কবীর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়তে, ধর্মের নামে রাজনীতি এবং সংস্কৃতিতে ধর্মান্ধতার উপস্থিতি প্রতিরোধের আন্দোলনে আয়শা খানমকে সহযোদ্ধা, অভিভাবক হিসেবে আজো দেখতে পাই।
সঞ্জীব দ্রং বলেন, আদিবাসী, পাহাড়ি, হাওড় অঞ্চলের, দলিত সমাজের, চা-শ্রমিকদের মত চিরবঞ্চিত সকল মানুষের জন্য সাম্য, সমতাপূর্ণ সমাজ গড়তে প্রয়াত আয়শা খানমের মত ব্যক্তিত্ব যুগে যুগে আমাদের প্রেরণা যোগাবে ।
সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুর পর নারী আন্দোলনকারী হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আয়শা খানম দক্ষতা ও দুরদর্শিতার সাথে নেতৃত্ব ধরে রেখেছিলেন। আয়শা খানমের কথা বলার সাহস আজও তাই অনুপ্রেরণা যোগায়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আয়শা খানম স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদের সদস্য সচিব সীমা মোসলেম-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী তানিয়া মান্নান। আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার লায়লা আফরোজ। বক্তব্য শেষে সম্পাদনা পরিষদের সদস্যবৃন্দ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।
আয়শা খানমের কন্যা উর্মি খানের হাতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও কার্টুনিষ্ট শিশির ভট্টাচার্যের আঁকা আয়শা খানমের প্রতিকৃতি তুলে দেন সুলতানা কামাল। অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।