বাসস
  ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ২০:১১

জাহাজ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে অর্থায়নের আহবান শিল্প সচিবের

ঢাকা, ৮ নভেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা বাংলাদেশে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে অর্থায়নের জন্য নরওয়ে ও জাপানসহ অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। 
জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় খাত এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকারী দেশ। দেশে বর্তমানে ১০৮টি জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ ইয়ার্ড রয়েছে, যা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডু উপজেলায় অবস্থিত। উল্লিখিত ইয়ার্ডগুলির মধ্যে কার্যকর রয়েছে ৫০টির মত। যাদের বার্ষিক জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতা ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও অধিক। 
জাকিয়া সুলতানা জানান, বাংলাদেশের বার্ষিক জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৪ শতাংশ। দেশের সামগ্রিক আয়রন চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আসে জাহাজ পুনঃপ্রক্রয়াকরণ শিল্প হতে। এ খাত থেকে আয় হয় প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং সরকারের রাজস্ব আয় হয় প্রায় ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ শিল্পে প্রত্যক্ষভাবে ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ হাজার মানুষ আর পরোক্ষভাবে প্রায় দেড় লাখ মানুষ নির্ভরশীল। এ শিল্পের উপর নির্ভর করে দেশে ৩ শতাধিক রি-রোলিং স্টিল মিল চলে। ফলে দেশের সামগ্রিক টেকসই উন্নয়নে এ শিল্প ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আজ বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও প্যান প্যাসিফিক হোটেলে ‘ইনসেপশন ওয়ার্কশপ অন আইএমও-নরওয়ে সেনশ্রেক প্রজেক্ট ফেজ-৩’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। শিল্প মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থা (আইএমও) যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে। 
বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেন এবং জাপানের রাষ্ট্রদূত ইয়োমা কিমিনরি ও  বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও)  কান্ট্রি ডিরেক্টর তুওমো পওতিয়ানেন উপস্থিত ছিলেন। 
এছাড়া, আইএমও’র অংশীদারিত্ব ও প্রকল্প বিষয়ক ডিরেক্টর জোসে ম্যাথিকেল  অনলাইনে এ অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে শিপ ব্রেকিং তথা জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ১৯৬০’র দশকে। তখন এমভি আলপাইন নামক গ্রীক পতাকাবাহী একটি জাহাজ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপকুলে আছড়ে পড়ে। দীর্ঘদিন জাহাজটি মালিকানা বিহীন অবস্থায় সীতাকুন্ড উপজেলার কুমিরা ফেরিঘাটে পড়ে ছিল। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম স্টীল হাউজ জাহাজটি স্ক্র্যাপ হিসেবে ক্রয় করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্থানী পতাকাবাহী আল আব্বাস নামক একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরবর্তীতে জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থায় ফৌজদারহাট উপকুলে পড়ে থাকে। ১৯৭৪ সালে কর্ণফুলি মেটাল ওয়ার্কস লিঃ উক্ত জাহাজটি স্ক্র্যাপ হিসেবে ক্রয় করে। এভাবেই ১৯৮০’র দশকে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমান সময়ে এ শিল্পটি লাভজনক শিল্প হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীনে এ শিল্পের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।  
বিগত কয়েক বছরের জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে ২০১৪ সালে ২২৭টি, ২০১৫ সালে ২২১টি, ২০১৬ সালে ২৫০টি, ২০১৭ সালে ২০৪টি, ২০১৮ সালে ১৯৮টি, ২০১৯ সালে ২৩৭টি, ২০২০ সালে ১৫০টি, ২০২১ সালে ২৭১টি, ২০২২ সালে ১৪৮টি জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪টি ইয়ার্ড ক্লাসএনকে সার্টিফিকেট অর্জন করেছে এবং ইয়ার্ডগুলির গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তর কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪ সালের মধ্যে কমপক্ষে ১০টি ইয়ার্ড ক্লাসএনকে সার্টিফিকেট অর্জন করতে সক্ষম হবে।