শিরোনাম
সিলেট, ১১ নভেম্বর ২০২৩ (বাসস) : সিলেটে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বিশ্ব বরেণ্য কূটনীতিক সাবেক রাষ্ট্রদূত, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার, মরহুম আলহাজ্ব হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ৯৫তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
আজ শনিবার স্পিকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর ৯৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে 'স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ’ দুপুরে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহঃ) মাজার সংলগ্ন গোরস্থানে মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করে। এসময় মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনার পাশাপাশি দেশের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- ‘স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ’ সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন ও যুগ্ম-আহ্বায়ক ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, সদস্য সচিব মাহবুবুল হাফিজ চৌধুরী মুশফিক, মাসনুন নোমান রশীদ চৌধুরী, কাজী মোস্তাফিজুর রহমান,খলিলুর রহমান প্রমূখ।
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯২৮ সালের ১১ নভেম্বর সিলেট শহরের দরগা গেইটস্থ রশিদ মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুর রশিদ চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত ভারতের কেন্দ্রীয় বিধান সভার সদস্য এবং মাতা সিরাজুন নেছা চৌধুরী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য । মরহুম স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ছিলেন একাধারে কুটনীতিক, আমলা ও রাজনীতিক। তিনি ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন। কূটনীতিক হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১-৭২ সালে দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি অসীম সাহসিকতা দেখিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠন এবং স্বীকৃতি আদায়ে ৪০টির বেশি দেশের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে অন্তত ৩৪টি দেশের স্বীকৃতি আদায়ে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে কূটনৈতিক অঙ্গনে অসামান্য অবদান রাখেন সিলেটের বনেদি পরিবারের সন্তান হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। ওই সময় তিনি নয়াদিল্লিস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হিসেবে ভারতের সংসদ অধিবেশনে ভাষণ দেন।
বাংলাদেশি হিসেবে একমাত্র তিনিই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার গৌরব অর্জন করেছিলেন।
তিনি ১৯৭২ সালে জার্মানীতে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এছাড়া সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং ভ্যাটিকানেও একই পদে অধিষ্টিত ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তিসংস্থা এবং জাতিসংঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থার প্রথম স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের সময় সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া আশ্রয়হীন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জার্মানিতে নিজ বাসায় আশ্রয় দিয়ে তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহন করেন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। এ কারণে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ওপর ক্ষিপ্ত হয় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। তাঁকে ওএসডি করে দেশে নিয়ে আসা হয়।
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ‘কলেজ অব উইলিয়াম এন্ড মেরি’ থেকে ১৯৮৪ সালে ‘মাহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরস্কার’ লাভ করেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করে। স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি একাধারে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং সবশেষে মহান জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন।
জাতীয় উন্নয়নের পাশাপাশি সিলেটের উন্নয়নে তিনি ছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ ব্যাক্তি। জীবদ্দশায় তিনি সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং দৃষ্টিনন্দন সিলেট রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণসহ সিলেটে অসংখ্য রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তার অবদানের কথা সিলেটবাসী এখনও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। আধুনিক সিলেট বিনির্মানের একজন রূপকার হিসেবে তাকে সিলেটের মানুষ আখ্যায়িত করে থাকেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করলে জাতীয় সংসদের স্পিকার মনোনীত হন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এবং ২০০১ সালের ১০ জুলাই স্পিকার থাকাকালীন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সিলেটে ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে জাতির এই বিশিষ্ট সন্তানকে সমাহিত করা হয়।